কান্দাই পুলিশ সুপার আসন ত্যাগ করে উঠে দাঁড়ালেন এবং জুন সমুদ্রকে লক্ষ্য করে বললেন-জানি আপনারা উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছেন যার জন্য সে এখনও এসে পৌঁছায় নাই, তাই আমি এই মুহূর্তে তার সম্বন্ধে কিছু কথা বলতে চাই!
সকলে একাগ্রচিত্তে তাকালেন কান্দাই পুলিশ সুপার মিঃ রুশদীর মুখের দিকে।
তিনি বলতে শুরু করলেন-হাঁ, এ কথা ঠিক, সত্য আর ন্যায়ের প্রতীক দস্যু বনহুর! আর্তমানবতার প্রতীক সে। এই পৃথিবীর সর্বস্থানে তার আগমন ছিলো বা আছে। যেখানেই সে দেখেছে অন্যায় অনাচার সেখানেই সে সচ্ছন্দে প্রবেশ করেছে, অন্যায় অনাচারকে সে সমূলে ধ্বংস করেছে এক কথায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলো তার সংগ্রাম! হাঁ সে জয়ী হয়েছে…..
থামলেন মিঃ রুশদী তাকে অত্যন্ত দীপ্ত প্রফুল্ল মনে হচ্ছিলো পুনরায় বলতে শুরু করলেন-বনহুর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকের শত্রু হতে হয়েছে এ কথা সত্য! এক শ্রেণীর মানুষ তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে, আর এক শ্রেণীর মানুষের সে অভিশাপ। আমরা পুলিশ মহল তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য সদা সর্বদা অত্যন্ত ব্যস্ত সমস্ত ছিলাম। এমন কি লক্ষ লক্ষ টাকা তার বিনিময়ে ঘোষণা দিয়েছিলাম। হাঁ তাকে গ্রেপ্তার করাও হয়েছিলো কিন্তু বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কারাগার হাঙ্গেরীও তাকে আটকে রাখতে পারেনি। বনহুরকে নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পুলিশ মহলে এবং গোয়েন্দা বিভাগে নানা ভাবে তদন্ত চালানো হয়। সুদীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নানা ভাবে বনহুর কে নিয়ে গবেষণা চলে! নানা ভাবে তদন্ত এবং গবেষণা মাধ্যমে যা ডায়রীতে লিপিবদ্ধ হয় তাতে সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়। যা সে করেছে বা করছে তা মানুষের মঙ্গলের জন্য করেছে! দস্যুতা তার জীবনে এনে দিয়েছে সফলতা! অসৎ উপায়ে যারা অর্থ উপার্জন করে ধনকুবেরু হয়েছে, যারা অসহায় মানুষের রক্ত শোষণ করে নিজেদের ঐশ্বর্যের ইমার গড়ে তুলেছে তাদেরকে সায়েস্তা করতে গিয়ে বনহুরকে হতে হয়েছে নির্মম, হত্যা করতে হয়েছে অসংখ্য মানুষ নামি জানোয়ারগুলোকে! এই জানোয়ার সম মানুষগুলো তাদের কৃত কর্মের জন্য আইনের কাছে তারা অপরাধী এবং বিচারে তাদের মৃত্যুদন্ড হতো, হয় ফাঁসী নয় ফায়ারিং। বনহুর এদের হত্যা না করলে দেশের সত্যিকারের মানুষগুলো তিলতিল করে নিঃশেষ হয়ে যেতো! এক ধরনের মানুষ অর্থের লোভে দেশের যুব সমাজের মেরুদন্ড ভেঙে দিচ্ছে অর্থের মোহে! বনহুর কিছুদিন পূর্বে হিরোইন প্রস্তুত কারকদের সমূলে ধ্বংস করেছে, ধ্বংস করেছে তাদের হিরোইন প্রস্তুতকারী চোরা ঘাঁটিগুলো। বহু অন্যায় কে সে প্রতিহত করেছে……বনহুর সম্বন্ধে গোয়েন্দা পুলিশ বিভাগ এসব তদন্তের মাধ্যমে আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে! হাঁ আপনারা দস্যু বনহুর সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানেন। আমি কান্দাই আসার পর বনহুরকে দেখার যথেষ্ট ইচ্ছা পোষণ করেছি এবং এ কারণেই আজকের এই সমাবেশ। অনেক সুন্দরী তরুণীই তাকে ভালবাসে কিন্তু বনহুর অভূতপূর্ব চরিত্রবান, সে কোন নারী বা তরুণীকে গ্রহণ করেনি! নারীকে সে অনেক বেশি সম্মান দিয়ে থাকে……বহু উদাহরণ আছে বনহুরকে নিয়ে।
এমন সময় আকাশি রং এর একখানা গাড়ি এসে থামলো পুলিশ অফিসের জনসমুদ্রের পাশে।
সকলের দৃষ্টি পড়লো গাড়ি খানার দিকে। ড্রাইভ আসন থেকে ড্রাইভার নেমে গাড়ির পিছন দরজা খুলে ধরলো।
সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে গাড়ি খানার দিকে এই গাড়ি খানাই কি দস্যু বনহুরের। সকলের মনে একই প্রশ্ন। দূর দূরান্ত থেকে তাদের আকাংক্ষিত দস্যু বনহুরকে একবার স্বচক্ষে দেখার জন্য চাতকীর মত তাকিয়ে ছিলো তারা।
মিঃ রুশদী এবং পুলিশ সুপার মিঃ আহমেদ মঞ্চ থেকে নেমে এলেন গাড়ির পাশে, বনহুর মিঃ রুশদী ও মিঃ আহম্মদের সঙ্গে করমর্দন করলো। পুলিশ সুপারদ্বয় দস্যু বনহুরকে নিয়ে এলেন মঞ্চে।
বনহুরের দেহে আজ জম কালো ড্রেস নাই। আজ তার দেহে শোভা বর্ধন করছে সাদা ধপধপে পা-জামা, পাঞ্জাবী। এই পোশাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে। পৌরুষদীপ্ত সুন্দর বলিষ্ঠ চেহারা মুখমন্ডল অদ্ভূতপূর্ব সুন্দর মুখে মিষ্টি হাসির আভাস।
বনহুর মঞ্চে এসে দাঁড়াতেই পুলিশ সুপার মিঃ রুশদী হাস্যোজ্বল মুখে বললেন–এই সেই আপনাদের আকাঙ্খিত দস্যু বনহুর।
উপস্থিত সকলেই বাকরুদ্ধ ভাবে তাকিয়ে আছে বনহুরের দিকে চোখে মুখে তাদের বিস্ময়। মিঃ রুশদী বললেন, জানি আজ আপনারা আপনাদের আকখিত দস্যু বনহুরকে দেখে তৃপ্ত।
দর্শকদের মধ্য হতে একজন বললেন-শুধু তৃপ্তই নয়, আজ আমরা ধন্য। সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক দস্যু বনহুর, আত্ম-মানবতার প্রতীক, আমরা সকলেই তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
মিঃ রুশদী পুলিশ প্রধান মিঃ খানের হাতে মালাটা তুলে দিয়ে বললেন-মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী বনহুরকে মাল্য ভূষিত করছেন আমাদের পুলিশ প্রধান মিঃ খান!
মিঃ খান হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললেন–বনহুর তোমাকে দেবার মত কিছুই নেই। লক্ষ লক্ষ টাকার হীরক মালা পরিয়ে দিলেও জানি তুমি খুশি হবে না, তাই আল্লাহর মহা মূল্যবান এই ফুলের মালা খানা আমাদের ভালবাসার সম্পদ স্বরূপ তোমার গলায় পরিয়ে দিলাম।
গোলাপের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে।
বনহুর সবাইকে লক্ষ্য করে বললো–আমি আপনাদিগকে অভিবাদন জানাচ্ছি। আপনাদের ভালবাসা আর আল্লাহর রহমত আমাকে জয়যুক্ত করেছে। আজ আমি ধন্য। একটু থেমে বললো বনহুর– আজ আমাকে আপনারা যে সম্বোধন জানালেন তার জন্য আমি আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। বনহুরের পৌরুষ দীপ্ত সুন্দর মুখখানা অপূর্ব লাগছিলো। সবাই তৃপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে বনহুরের দিকে। সবার কাছে দস্যু বনহুর ছিলো আতঙ্ক, সেই দস্যু বনহুর এতো সুন্দর।