এ সংবাদ তুমি কোথায় পেলে রহমান?
আমাদের অনুচর মাহাংশুর কাছে জানতে পারলাম।
মাহাংগু কি হিন্দ্রল রাজ্যে ছিলো?
হাঁ সর্দার, আপনি তো তাকে হিল রেখে এসেছিলেন এবং বলেছিলেন সে যেন রাজপরিবারের উপর ভাল ভাবে লক্ষ রাখে।
মাহাংগু কি হিন্দ্রল থেকে এখানে এসেছে?
না সর্দার, সে সংবাদটা পাঠিয়েছে। অনেক সন্ধান করেও রাণী হেমাঙ্গিনীর কোন খোঁজ পাননি রাজা মঙ্গল সিংহ।
রহমান, তা হলে এর পিছনে কোন ষড়যন্ত্র আছে।
আমারও তাই মনে হয়।
বনহুর আর রহমান বেরিয়ে এলো দরবার কক্ষের বাইরে। বনহুর বললো–রহমান, তুমি তো জানো একদল নর পশু ফুল্লরাকে ঝর্ণার পানিতে গোসলের সময় তুলে নিয়ে গিয়েছিলো।
হা সর্দার, তাকে আপনি সেই নর পশুদের কবল থেকে উদ্ধার করে এনেছিলেন।
শুধু ফুল্লরাই নয় আরও কয়েকজন তরুণীকে তারা সেখানে আবদ্ধ করে রেখেছিলো। তাদের উপর চালাচ্ছিলো অমানুষিক অত্যাচার।
আপনি তাদেরকেও উদ্ধার করেছিলেন……এবং সেই নরপশুদের হত্যাও করেছিলেন।
হাঁ, আমি তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছি রহমান। দেশ ছেয়ে গেছে অন্যায় অত্যাচারীদের নির্মম অত্যাচারে। রহমান হেমাঙ্গিনী কি আত্নগোপন করেছে না কেউ তাকে সরিয়ে ফেলেছে।
সেটাই বোঝা যাচ্ছে না সর্দার।
সেদিন বেশি কথা-বার্তা হলোনা। হেমাঙ্গিনীর নিরুদ্দেশ ব্যাপারটা বনহুরকে বেশ ভাবিয়ে তুললো। নিজ বিশ্রাম কক্ষে প্রবেশ করে পায়চারী করতে লাগলো সে।
*
হরনাথ, তোমার এতো বড় সাহস, তুমি আমাকে ছলনা করে কিংকরীর দ্বারা ষড়যন্ত্র করে, আমার স্বামী সন্তানের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছো। হেমাঙ্গিনী দাঁতে দাঁত পিষে কথাগুলো বললো।
হেমাঙ্গিনীর কথায় হরনাথ হাসলো, সে এক বীভৎস হাসি।
হঠাৎ হেমাঙ্গিনীর দক্ষিণ হাতখানা চেপে ধরে বলে উঠলো হরনাথ, তুমি ছলনাময়ী নারী, স্বামীর সঙ্গে চতুরী করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলে…
হেমাঙ্গিনী বলে উঠলো–সবের পিছনে ছিলো তোমার কুচক্র। তুমিই আমাকে অসৎ পথে টেনে নিয়ে গিয়েছিলে শয়তান…..
শয়তান নামেই যখন আমাকে আখ্যায়িত করেছে হেমাঙ্গিনী তবে শয়তানের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে না।
ছেড়ে দাও আমাকে……ছেড়ে দাও হরনাথ…
না, ছাড়বোনা। আমার কবল থেকে তুমি রক্ষা পাবে না হেমাঙ্গিনী। কথাটা বলে। হরনাথ টেনে নিয়ে ঝাপটে ধরলো হেমাঙ্গিনীকে।
শুরু হলো ধস্তাধস্তি, হেমাঙ্গিনীর শরীরেও কম শক্তি ছিলোনা, সে একজন শক্তিশালী মহিলা। এক সময় সে অনেকগুলি পুরুষের নেতৃত্ব দিয়েছে। আজ সে মাতা, স্ত্রী, কোমল হৃদয় নারী তবুও তার দৈহিক শক্তি কমে যায়নি।
হরনাথ পশুর মত হামলা করলো হেমাঙ্গিনীর উপর।
হেমাঙ্গিনী মরিয়া হয়ে লড়ছে। নিকটে কোন অস্ত্র পেলে বসিয়ে দিত হরনাথের বুকে, কিন্তু সে এ মুহূর্তে অসহায়। তার কোন উপায় ছিলো না, সে নিজের দাঁত, নখ, ব্যবহার করলো, কামড়ে দিলো হরনাথের হাতের বাজুতে।
হেমাঙ্গিনীর দাঁত বসে গেলো হরনাথের বাজুতে।
ক্ষণিকের জন্য সে হেমাঙ্গিনীকে ছেড়ে দিলো আর সেই মুহূর্তে হেমাঙ্গিনী মুক্ত হয়ে ছুটে বেরিয়ে এলো বাইরে। বাইরে কয়েকটি অশ্ব বাধা ছিলো, এগুলো হরনাথ নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করে।
হেমাঙ্গিনী একটি অশ্ব দ্রুত হস্তে খুলে নিলো এবং তার পিঠে চেপে বসলো। অশ্বচালনায় হেমাঙ্গিনী দক্ষ ছিলো। কাজেই অশ্ব পৃষ্ঠে চেপে সে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করলো।
উল্কা বেগে অশ্ব ছুটে চললো হেমাঙ্গিনীকে নিয়ে।
অশ্বটা যেন অনুধাবন করেছে মহিলাটি বিপদগ্রস্ত। তাই সে প্রাণ পণে ছুটছে।
হরনাথ অত্যন্ত সুচতুর সে অপর একটি অশ্ব নিয়ে হেমাঙ্গিনীর পিছু ধাওয়া করলো।
হাওয়ার বেগে ছুটলো হরনাথ।
কিছুক্ষণ ধরে বন বাদার উঁচুনীচু পথ চলার পর হেমাঙ্গিনী আর এগুতে পারছে না, কারণ এ সব পথ তার সম্পূর্ণ অচেনা। এ জায়গাটার নামও সে জানে না। কোন দিন হেমাঙ্গিনী এ পথে আসেনি। সূর্যের তীব্র খর রৌদ্রে ঘেমে উঠে তার শরীর। হেমাঙ্গিনী ভাবতেও পারেনি হরনাথ তার সর্বনাশ করতে চাইবে। যে হরনাথকে সে একদিন সমীহ করতো, বিশ্বাস করতো সেই হরনাথ আজ তার কাছে হিংস্র ব্যাঘ্রের চেয়েও ভয়ংকর।
হরনাথের অশ্ব হেমাঙ্গিনীর অশ্বের পথ রোধ করে ফেললো এবং হেমাঙ্গিনীর অশ্বকে ধরে ফেললো হরনাথ। তারপর জোরপূর্বক তাকে নামিয়ে নিজ অশ্বপৃষ্ঠে তুলে নিলো। হরনাথ হেমাঙ্গিনীকে নিয়ে ছুটলো নিজ আস্তানার দিকে।
দ্রুত অশ্ব চালনায় দক্ষ হরনাথ, কিছু সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেলো তার গন্তব্যস্থানে। হেমাঙ্গিনীকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে নিলো, তারপর সে তাকে নিয়ে গেলো গোপন আস্তানার চোরা কুঠরিতে।
ধস্তা ধস্তি শুরু উভয়ের মধ্যে।
মাটিতে শুইয়ে ফেললো হরনাথ হেমাঙ্গিনীকে।
ঠিক সেই মুহূর্তে গুহার দরজায় এসে দাঁড়ালো জমকালো পোশাক পরিহিত একজন। দক্ষিণ হস্তে তার রিভলভার।
হরনাথ চমকে উঠলো।
হেমাঙ্গিনী আর্তকণ্ঠে বলে উঠলো–বনহুর তুমি! বাঁচাও বনহুর, আমাকে এই নর পশুর কবল থেকে বাঁচাও……
হরনাথ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ভালভাবে তাকালো বনহুরের দিকে। তার দৃষ্টি বনহুরের হাতের রিভলভারে স্থির হলো। বললো হরনাথ-তুমিই বনহুর। হেমাঙ্গিনী প্রিয়জন তুমি……
গম্ভীর কণ্ঠে বললো বনহুর হরনাথ তুমি হেমাঙ্গিনীর প্রিয় পাত্র সেজে তার সর্বনাশ করেছিলে। এবার আবার তার সব লুটে নিতে যাচ্ছিলে। পশুর চেয়ে অধম, শয়তান এবার মৃত্যু জন্য প্রস্তুত হও।