কি জানতে চাস?
মনে কর তুমি মদিনার কাছে গেলে। তোমার হাতে হাতঘড়ি সেখানে বাজে বঁটা, পকেটে আছে পকেট ঘড়ি। তার টাইম সেট করা হয়েছে আটটায়। তোমার সঙ্গের মোবাইল টেলিফোনের ঘড়িতে নয়টা। এখন মদিনা কোন সময়টা বলবে?
এই পরীক্ষা তো করি নি। ইন্টারেস্টিং পরীক্ষা।
বাবা! তুমি ইন্টারেস্টিং ঘড়ি পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে থাক। এখানে কি হচ্ছে তা নিয়ে মাথা ঘামিও না। আমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে।
মেয়েদের বুদ্ধি কাজে লাগে না।
বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারলেই কাজে লাগে। বেশির ভাগ মানুষ কাজে লাগাতে পারে না। বাবা টেলিফোন রাখি ঐ লোকের ঘুম মনে হয় ভেঙেছে।
রাশেদ গেস্টরুম থেকে বসার ঘরে এসেছে। রূপাকে দেখে বলল, আপনি বললে হয়ত বিশ্বাস করবেন না, আমার জীবনটা ভুলে ভর্তি। ছোটখাটো ভুল না। বড় বড় ভুল। আপনি যখন বললেন, আপনার নাম রূপা তখনই আমার বুঝা উচিত ছিল, যে ঠিকানায় আমার যাবার কথা সে বাড়ির মেয়েটির নাম রুনা। রুনার সঙ্গেও আমার কথা হয়েছিল। একবার না অনেক বার। যাই হোক, আমি তিন মিনিটের মধ্যে বিদায় হচ্ছি।
রূপা বলল, এখন রাত দশটা চল্লিশ। বাইরে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থায় বের হবেন এবং ভুল করে আবারও অন্য একটা বাড়িতে উঠবেন। সেই বাড়ির মেয়ের নাম হয়ত রুমা। তাকে ব্রাজিলের চকলেট দেবেন, ভয়েস রেকর্ডার দেবেন। এটা ঠিক হবে?
আমি হোটেলে উঠব। দিনে ঠিকানা খুঁজে বের করব।
যাদের কাছে যাচ্ছেন তাদের টেলিফোন নাম্বার নিশ্চয়ই আছে। তাদের টেলিফোন করে দিন তারা এসে আপনাকে নিয়ে যাক।
টেলিফোন বুক আনতে ভুলে গেছি।
ভাল করেছেন। আসুন খেতে বসি। খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে যাবেন।
থ্যাংক য়্যু। তুমি খুবই ভাল মেয়ে।
আমাকে তুমি তুমি করে বলবেন না। তুমি বলার মত ঘনিষ্ঠতা আপনার সঙ্গে আমার হয় নি।
সরি।
যান হাত মুখ ধুয়ে আসুন। আমরা ডিনার করি। ক্ষিধে লেগেছে না?
হুঁ।
রূপা খাবার টেবিলের দিকে রওনা হল। তার মোবাইল ফোন বাজতে শুরু করেছে। হারুন টেলিফোন করেছেন। রূপা ধরল না। খাওয়া-দাওয়া শেষ হোক তারপর বাবাকে সব জানানো যাবে।
মলিনা শুকনা মুখে খাবার ঘরে ঢুকে বলল, আফা উনি তো চলে গেছেন। জিনিসপত্র সব ফালায় ধুইয়া বৃষ্টির মধ্যে রওনা।
সে কি!
আমি বললাম, বৃষ্টির মধ্যে যান কই? উনি বললেন, হোটেলে। তারপর ইংরেজিতে কি যেন বললেন। মনে হয় ভাবছেন আমি ইংরেজি জানি। আমিও ভাব ধরলাম ইংরেজি জানি। আমি বললাম, ইয়েস। ইয়েস।
রূপা বলল, কথা বন্ধ করে খাবার দাও। আগে মোমবাতি জ্বালাও। যে রকম ঝড়-তুফান হচ্ছে এক্ষুণি কারেন্ট চলে যাবে।
কারেন্ট গেল মোমবাতি জ্বালানোর পর। রূপা টেলিফোন করল তার বাবাকে।
বাবা, ঢাকায় ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে–তোমার দিকের খবর বি কি হচ্ছে।
না। ঐ লোক কি গেছে?
হ্যাঁ বাবা, চলে গেছে। তুমি শোকরানা নামাজ পড়তে পার।
ভেরি গুড। আমি তো টেনশানে পড়ে গিয়েছিলাম
ভদ্রলোক তিনটা স্যুটকেস ফেলে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় নেমেছে। রাস্তাঘাট কিছুই চিনে না, কোথায় যাবে কে জানে। হয়ত মলম পার্টির হাতে পড়বে মলম পার্টি চোখে মলম ডলে মানিব্যাগ নিয়ে চলে যাবে। কিংবা ক্ষুর পার্টির হাতে পড়বে। তারা পেটে ক্ষুর বসাবে। রাস্তায় মরে পড়ে থাকবে।
এত রাতে ছাড়লি কেন?
বাবা! তোমার কি এখন মায়া লাগছে।
হারুন চুপ করে রইলেন। রূপা বলল, তোমার মায়া লাগছে তার কারণ কি জান বাবা? তার কারণ লোকটা তার সবকিছু ফেলে গেছে। জিনিসপত্র সব নিয়ে গেলে মায়া লাগত না। এই লোক কিন্তু তার জিনিসপত্র নিতে ফিরে আসবে না।
কীভাবে জানিস ফিরে আসবে না।
তুমি তো প্যারানরমাল ক্ষমতাধর মানুষের খোঁজে সারা দেশ ঘুরে বেড়াও, তোমার নিজের মেয়েরই যে এই ক্ষমতা আছে তা জান না। বাবা রাখি? প্রচণ্ড ক্ষিধে লেগেছে।
কি রান্না করেছে?
জানি না কি রান্না করেছে। তোমার সঙ্গে কথা বলতে আর ভাল লাগছে
রূপা লাইন কেটে দিল। হারুন লাইন কাটার পরেও হ্যালো হ্যালো করতে লাগলেন।
রাস্তার মোড় পর্যন্ত যেতেই
রাস্তার মোড় পর্যন্ত যেতেই রাশেদ পুরোপুরি ভিজে গেল। বৃষ্টির পানি বরফের মতো ঠাণ্ডা। দমকা বাতাস। বাতাস পেছন দিক থেকে আসছে। তাকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। রাশেদের একবার মনে হল সে ফিরে যায়। হট সাওয়ার নিয়ে খেয়েদেয়ে কম্বল গায়ে শুয়ে থাকে। রূপাদের বাড়ি খুঁজে বের করা সমস্যা না। গাছপালায় ভর্তি বাড়ি। বাড়ির নাম রূপা। ফিরে গেলেই হয়, রূপা যদি জিজ্ঞেস করে, চলে গিয়েছিলেন কেন? তখন সত্যের মতো করে কিছু মিথ্যা বলতে হবে। যেমন হঠাৎ সিগারেট খাবার ইচ্ছা করল। ডিনারের শেষে সিগারেট খাব। এই জন্যেই সিগারেটের সন্ধানে গিয়েছিলাম। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পড়ব ভাবিনি।
রাশেদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। মাথার ভেতরের লজিক অংশ বলছে ফিরে যাও। আবেগ অংশ বলছে না।
রূপার ওপর হঠাৎ রাগ উঠে যাওয়াতেই সমস্যা হয়েছে। এমন মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে, কি কোমল গলার স্বর, সে কি করে বলে, আমাকে তুমি তুমি করে বলবেন না। তুমি বলার মতো ঘনিষ্ঠতা আপনার সঙ্গে আমার হয়নি। সে কি ভেবেছে ঘনিষ্ঠতা করার জন্যে তুমি বলা? মেয়েটিকে অনেকগুলি কারণে তুমি সে বলতে পারে। কারণগুলো ভাবতে ভাবতে হাঁটা যাক। কোনকিছু নিয়ে ব্রেইনকে ব্যস্ত রাখলে সে ঝড়-বৃষ্টি তুচ্ছ করবে। ক্ষিধের কষ্টও কমিয়ে দেবে। আচ্ছা এখন তুমি সমস্যা–