আজ সকালে টগরের বাবা বলল, শায়লা ঐ দিনের ডিনার নষ্ট হয়েছেচল সেটা কমপেনসেটের ব্যবস্থা করি। কাঠমাণ্ডু থেকে ঘুরে আসি। কাঠমাণ্ডুতে একরাত থাকব, সেখান থেকে চলে যাব পোখরায়। কাঠমাণ্ডু থেকে পোখরায় প্লেনে করে যাব। পোখরায় যে হোটেলে থাকব সেটা সেভেন স্টার। ওদের নিজস্ব হেলিকপ্টার সার্ভিস আছে। টগরের বাবার ইচ্ছা হেলিকপ্টার রাইড নেয়া। আমি বলে দিয়েছি অসম্ভব। আমার হাইট ফোবিয়া আছে। হেলিকপ্টার রাইড তুমি নাও। আমি হোটেলে বসে থাকব।
রূপা বলল, বাবাকে ছেড়ে উনাকে বিয়ে করে তুমি খুব ভাল করেছ মা। বাবা সঙ্গে থাকলে তার ভাঙা মাইক্রোবাসে করে, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ এইসব জায়গায় পীর ফকিরের সন্ধানে যেতে হত। তোমার সঙ্গী হতেন সুলতান চাচা। তিনি প্রতিটি কথা দুবার তিনবার করে বলে তোমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিতেন। তোমার জন্যে শুভেচ্ছা। সেভেন স্টার হোটেলে সুন্দরভাবে তোমার ম্যারেজ ডে পালিত হোক। মা এখন কি টেলিফোন রাখতে পারি। নাকি আরো কিছু বলবে? টগরের বাবা সম্পর্কে আরো ভাল কিছু কথা।
তুই আমাকে টিজ করে কথা বলছিস কেন?
রূপা শান্ত গলায় বলল, কেন টিজ করছি জানতে চাও? জানলে কিন্তু ধাক্কামত খাবে। আর রাতে ঘুমাতে পারবে না। সারারাত জেগে কাটাবে। প্রেসারের অষুধ খাবে। প্রেসার কমবে না।
বল কি বলবি। দেখি আমার প্রেসার কতটা বাড়ে।
রূপা বলল, তোমার প্রাণপ্রিয় স্বামী–একটি তরুণী মেয়ের নামে ফ্ল্যাট কিনেছেন। সেই ফ্ল্যাটে তিনি প্রায়ই সময় কাটান। মনে হয় তাকে বিয়ে করেছেন। মেয়েটার নাম আমি বলতে পারব না। তবে মেয়েটা এভারেজ বাঙালি মেয়ের চেয়ে লম্বা। গায়ের রঙ কালো। শব্দ করে হাসে।
অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে শায়লা বললেন, মেয়েটার নাম কি বেণু?
আগেই তো বলেছি নাম বলতে পারব না।
তোকে কে বলেছে?
আমাকে কেউ বলেনি মা। কেউ কিছু বলেনি।
তাহলে জানলি কি করে?
রূপা বলল, ঐ প্রসঙ্গ থাক। সরিষা বাটা দিয়ে মুরগি রাধার রেসিপিটা দাও। শুধু সরিষা বাটা দিলেই হবে? তেল দিতে হবে না? আমার তো ধারণা তেল না দিলেও চলবে। সরিষা বাটা থেকেই তেল উঠবে।
শায়লা জবাব না দিয়ে টেলিফোন রেখে দিলেন।
হারুন সুলতানকে নিয়ে খেতে বসেছে। রূপা খাচ্ছে না। তার না-কি শরীর খারাপ লাগছে। সে আগ্রহ নিয়ে সুলতানের খাওয়া দেখছে। সুলতান বললেন, মা তোমার সরিষা বাটা মুরগি অসাধারণ হয়েছে। তোমাকে আমি শ্রেষ্ঠ বঙ্গ রাধুনী স্বর্ণপদক দিলাম। পদকটা আমিই দেব। আধাভরি সোনার মেডেল। তোমার আগামী জন্মদিনে পদক গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। ইনশাল্লাহ।
রূপা বলল, আমি মুগ্ধ, আমি আনন্দিত। পদক দিচ্ছেন সেই কারণে না চাচা। আপনি দীর্ঘ বাক্য বলেছেন এবং রিপিট করেন নি এই কারণে। আপনারা আঠারোবাড়ি যাচ্ছেন কবে?
হারুন বললেন, আগামীকালই যাবার কথা ছিল। কেনতু ছেলেটির একটা ব্যবস্থা না করে যেতে পারছি না। চ্যানেল আই-এর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা কেনতুর গান শুনতে রাজি হয়েছে। সেখানেও সমস্যা।
রূপা বলল, সমস্যা কি?
হারুন বললেন, ঐ ছেলে তো কারো সামনে গান গায় না। আমি প্রায় পায়ে ধরতে বাকি রেখেছি। বদ ছেলের মুখ বন্ধ। রাশেদ চিঠিতে লিখেছে ছেলে অসাধারণ গান গায়। রাশেদের কথা অবশ্যই সত্য। কিন্তু গানটা শুনাতে তো হবে।
রূপী বলল, আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
তুই কীভাবে ব্যবস্থা করবি?
রূপা বলল, আমার কাছে একটা ভয়েস রেকর্ডার আছে। দেখতে কলমের মত। সেখানে দশ মিনিট ডিজিটালি ভয়েস রেকর্ড হয়। ভয়েস রেকর্ডারটা তুমি কেনতুর বাবাকে দেবে। কীভাবে চালাতে হয় শিখিয়ে দেবে। কেনতুর বাবা গোপনে ছেলের গান রেকর্ড করবেন। তোমরা রেকর্ড করা গান চ্যানেল আই-এর লোকদের শুনাবে।
ভয়েস রেকর্ডার কোথায় পেলি?
রূপা বলল, রাশেদ সাহেব আমাকে দিয়েছিলেন। প্রকৃতির একটা খেলা কি বাবা তুমি লক্ষ্য করেছ? কেনতু নামের ছেলেটির গান রেকর্ড করার জন্যে প্রকৃতি ব্যবস্থা করে রেখেছে। একটা ভয়েস রেকর্ডার আমার কাছে আছে। রাশেদ সাহেবের সঙ্গে কেনতুর পরিচয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা সবাই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে পড়েছি। Nature is playing a garme, we all are players.
হারুন বললেন, চুপ কর। জ্ঞান ঝরে ঝরে পড়ছে! গাধা টাইপ কথাবার্তা।
সুলতান বললেন, ওর ভয়েস রেকর্ডারের আইডিয়া আমার পছন্দ হয়েছে। আমার পছন্দ হয়েছে। পছন্দ হয়েছে।
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে রূপী। ঘন গাছপালার কারণে বৃষ্টির ফোঁটা দেখা যাচ্ছে না। গাছের পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। আচ্ছা এমন যদি হত ছবির সঙ্গে শব্দ যোগ করার ব্যবস্থা থাকত তাহলে কেমন অদ্ভুত ব্যাপারই না হত। ধরা যাক সে একটা ছবি এঁকেছে–ঢাকা শহরে বৃষ্টি। সেখান থেকে এক রকম শব্দ আসছে আবার বনের বৃষ্টির ছবি থেকে আরেক রকম শব্দ।
মদিনা বলল, আফা ঘুমাইতে যাবেন না?
যাব। কিছুক্ষণ বৃষ্টি দেখে তারপর ঘুমাতে যাব। আমার মার কাছে চিঠিটা কি লিখেছেন?
হুঁ।
চিঠি পাঠাইবেন না?
না। তুমি যখন যাবে হাতে হাতে নিয়ে যাবে।
আমি কবে যাব?
বাবার সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব। খুব তাড়াতাড়ি পাঠাব। তুমি শুয়ে পড়।
মদিনা ঘুমুতে গেল না। রূপার পাশে দাঁড়িয়ে রইল। রূপা বলল, কিছু বলবে মদিনা।