মলিনা বলল, কাশ থাকলে না কাশবো। ভাইজানের নাম রাশেদ।
যে জিনিসপত্র ফেলে চলে গিয়েছিল?
জ্বে।
আবার উদয় হয়েছে কেন?
আফা গিয়া নিয়া আসছেন। ভাইজান ছিলেন হাসপাতালে। খুবই খারাপ অবস্থায় ছিলেন। অবস্থা এমন যে ভাইজান বিছানায় শোয়া, আজরাইল খাটের নিচে ঘাপটি মাইরা বসা।
আর কথা বলবে না। রূপা কোথায়?
আফা বাজার সদাই করতে গেছে। ভাইজান গরুর মাংস দিয়া পরোটা খাইতে চাইছে। ঘরে মাংস নাই।
অচেনা এক লোক ঘরে ঢুকেই গরুর মাংস পরোটা খেতে চাইল আর তোমার আপা মাংস কেনার জন্যে ছুটল কসাইয়ের দোকানে?
মলিনা বলল, কসাইয়ের দোকানে যাবেন কেন? আগুরায় গেছে। সহজ কথা বললে বুঝেন না। আপনে এমন মসিবতের মানুষ।
ডেকে তোল তোমার ভাইজানকে।
একটা রোগী মানুষ। ঘুমাইছে। আমি তারে ডাইকা তুলব, এমুন পাষাণী আমি না। প্রয়োজনে বাসার কাম ছাইড়া গারমেন্টে চাকরি নিব। গারমেন্টে ছুটি আছে, ওভাবটাইম আছে, মেডিকেল আছে। বাসাবাড়ির কামে বকা ছাড়া কিছুই নাই।
হারুন গেস্টরুমে ঢুকলেন। সব রহস্যের এখনই মীমাংসা হওয়া দরকার।
রাশেদ মনে হয় জেগেই ছিল হারুনকে ঢুকতে দেখে সে বিছানা থেকে নামলো। হাসিমুখে বলল, আপনি নিশ্চয়ই রূপার বাবা।
হারুন বললেন, হ্যাঁ। আপনার পরিচয় প্রথম শুনি। আপনি কে? আপনার ব্যাপারটা কি?
রাশেদ বলল, আপনি কি আমার উপর কোনো কারণে রেগে আছেন? আমার সঙ্গে রাগ করার মতো বড় কোনো অপরাধ আমি করিনি। আপনি কি জানতে চান বলুন। আমি বলছি। আমার নাম নিয়েই এর মধ্যে জেনেছেন। আবারও বলি–আমার নাম রাশেদ রহমান।
থাকেন কোথায়?
আমেরিকায়। মোরহেড স্টেটে।
করেন কি?
মোরহেড স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গত বছর অঙ্কের লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছি।
হারুন চেষ্টা করছেন রাগটা ধরে রাখতে পারছেন না। রাগ দ্রুত কমা শুরু হয়েছে। তাঁর সামনে দাঁড়ানো রাজপুত্রের মতো ছেলের উচিত সিনেমায় নায়কের রোল করা। সে শেখাচ্ছে অঙ্ক। পুরনো দিনের এক নায়কের সঙ্গে। ছেলেটার চেহারার মিল আছে। সে কে? উত্তম কুমার না তো? না উত্তম কুমার না। উত্তম কুমার এত সুন্দর না।
ম্যাথমেটিক্সের কোন ব্রাঞ্চে আপনার পড়াশোনা?
টপলজি।
Ph.D ডিগ্রী নিশ্চয়ই আছে?
জী আছে।
মলিনাকে কফির কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লেন। কফি কি এখন খাবেন? খাব।
আপনি অঙ্কের লোক ইতিহাসের বিষয়ে আপনার আগ্রহ থাকার কথা না। আগ্রহ কি আছে?
আমার সব বিষয়েই প্রবল আগ্রহ।
হারুন ইতস্তত করে বললেন, আমি ইতিহাসের মানুষ। একটা এক্সপেরিমেন্টাল ইতিহাসের বই লিখছি।
এক্সপেরিমেন্টাল মানে কি?
বইটা লিখছি কবিতায়।
রাশেদ আগ্রহের সঙ্গে বলল, প্রফেসর গ্যামো একটা অঙ্কের বই কবিতায় লিখেছিলেন। বইটার নাম Math in Rhymes.
বলেন কি?
অসম্ভব সুন্দর বই। আপনি পড়তে চাইলে আমি ব্যবস্থা করব।
অবশ্যই পড়তে চাই।
ইন্টারনেটে বইটা আছে। আমি ডাউন লোডের ব্যবস্থা করছি। আমাকে দয়া করে আধঘণ্টা সময় দিন।
হারুন বললেন, আগে কফি খাও। তারপর ডাউন লোড, আপ লোড যা করার করবে। তুমি বয়সে ছোট এই জন্য তুমি করে বলেছি।
রাশেদ বলল, আপনি আমাকে অবশ্যই তুমি করে বলবেন। আমি, বয়সে ছোট বলে আপনার মেয়ে রূপাকে তুমি বলেছিলাম। সে রাগ করেছিল।
হারুন দুঃখিত গলায় বললেন, আমার এই মেয়ে নিজেকে মনে করে মহাজ্ঞানী। মায়ের স্বভাব পেয়েছে। তার মা নিজেকে মহাজ্ঞানী ভাবে। রূপার মায়ের সঙ্গে যে আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে এটা কি রূপা তোমাকে বলেছে?
জী না।
ওইসব কথা বলতে সে লজ্জা পায়। তার সম্মানের হানি হয়। তোমার কাছে বলতে কি সমস্যা কিছুই বুঝলাম না। সে তো আর ঢাক পিটিয়ে বলছে না, নিজের লোকের কাছে বলছে। মান সম্মান নিয়ে বসে থাকার কোনো অর্থ আছে, তুমি বল।
রাশেদ বলল, কোনো অর্থ নেই।
আমি যে ছাদে মাছ চাষ করি, রূপা তোমাকে বলেছে?
বলে নি। কি মাছ চাষ করেন?
দেশি মাছ, কৈ, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া। কৈ মাছগুলি কেন জানি মরে যায়। সাত দিনের মাথায় মরে ভেসে ওঠে।
রাশেদ বলল, মৎস্য বিশেষজ্ঞ কারোর সঙ্গে আলাপ করা দরকার।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ পাব কোথায়?
মৎস্য বিশেষজ্ঞ তো আপনার ঘরেই আছে।
কে? তুমি না-কি?
ইন্টারনেট। গুগল সার্চ দিলেই বের হয়ে পড়বে। আমি বের করে দেব। তার আগে চলুন আপনার মাছের খামার দেখে আসি।
হারুন আনন্দের সঙ্গে বললেন, চল যাই। কফি ছাদে বসে খাওয়া যাবে। ছাদে বাগান করেছি। বাগান তোমার পছন্দ হবে। রূপার অবশ্য পছন্দ না। তার ধারণা ছাদে আমি জঙ্গল বানিয়েছি। যে কোনো সময় জঙ্গলে বাঘ দেখা যাবে। সস্তা মেয়েলি রসিকতা। বাগান সম্পর্কে তোমার যদি কোনো সাজেশান থাকে দিতে পার।
দুজন ছাদে উঠে গেল।
রূপা বাজার নিয়ে ফিরেছে। গেস্টরুমে কেউ নেই। বসার ঘরেও কেউ নেই। রূপা বলল, মলিনা! উনি কি চলে গেছেন?
মলিনা হাসিমুখে বলল, ভাইজান ছাদে। বিরাট গফ চলতাছে। খালুজান এমন গফ দিতাছে, আমি অবাক মানছি। যান দেইখা আসেন। দেখলে মজা পাইবেন।
মদিনা কোথায়?
দরজা বন কইরা বসা। খালুজান কফি চাইছে, আমি মদিনারে বললাম, যা কফি দিয়া আয়। সে বলল, যামু না। আমি বললাম, যাবি না কেন? তুই ভূতের সাথে পীরিত করতে পারবি আর মেহমানের সামনে যাইতে পারবি না।
রূপা নিজের ঘরে ঢুকল। ঘরের কোনায় মদিনা চুপচাপ বসে আছে। তার মাথা নীচু। রূপা বলল, কোনো সমস্যা মদিনা?