মা! এরা ইউনিভার্সেল ডোনার। তোমার রক্তের প্রয়োজন হলে তার কাছ থেকে নিতে পারবে।
রূপা আমার সঙ্গে সিরিয়াসলি কথা বল। ঠাট্টা তামাশা কিছুক্ষণ বাদ রাখ। প্লিজ। লোকটা কে, কি ব্যাপার, ঘটনা কি আমাকে বল।
মা! রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি–যদি জানতেম কি ঘটনা, তোমায় জানাতাম।
ইউ স্টুপিড গার্ল।
শায়লা টেলিফোন রেখে দিলেন। রূপা ঘরে ঢুকল না। নাটক শেষ হোক তারপর ঘরে ঢুকবে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে তার খারাপ লাগছে না। পৃথিবীর সবচে বড় বড় নাটকগুলি হাসপাতালের বারান্দায় ঘটে। রূপার বা দিকে বারান্দায় হেলান দিয়ে এক মধ্য বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে। তার হাতে অনেকগুলি কলা। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা কলা হাতে নিচ্ছে এবং অতি দ্রুত খাচ্ছে। মাথা বাইরের দিকে তাকিয়ে কলার খোসা নিচে ফেলে দ্রুত মাথা টেনে নিচ্ছে। আবার আরেকটা কলা খাচ্ছে। লোকটা সবদিকে তাকাচ্ছে শুধু রূপার দিকে তাকাচ্ছে না।
রাশেদ ভেতর থেকে ডাকল, নাটক শেষ। আসুন।
রূপা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, শেষটা কি? আমি যা বলেছিলাম তাই?
না। মেয়েটা অন্ধ না। অন্ধের অভিনয় করছিল। নায়ক যখন জানবে মেয়েটা অন্ধ তখন কি করবে তাই জানতে চেয়েছিল।
জেনেছে?
হুঁ। নায়ক অন্ধ শুনে বলেছে, তুমি অন্ধ তাতে কিছু যায় আসে না। আজ থেকে আমার চোখই তোমার চোখ। এখন থেকে তুমি দেখবে আমার চোখে। তখন নায়িকা হাসতে হাসতে বলল, আমি অন্ধ না। ঠাট্টা করছিলাম।
নাটক দেখে আনন্দ পেয়েছেন?
আমি সবকিছুতেই আনন্দ পাই। আমার ধারণা আমার জন্মই হয়েছে আনন্দ পাবার জন্যে। সকালে শেভ করে আনন্দ পেয়েছি, গোসল করে আনন্দ পেয়েছি, ব্রেকফাস্ট করে আনন্দ পেয়েছি, আপনাকে দেখে আনন্দ পেয়েছি, নাটক দেখে আনন্দ পেয়েছি, এখন কথা বলে আনন্দ পাচ্ছি।
আপনাকে কি আজ ছেড়ে দেবে?
জানি না, তবে ছেড়ে দেয়া উচিত। আমি পুরোপুরি সুস্থ।
ছেড়ে দিলে কোথায় উঠবেন? হোটেলে?
হোটেলে আমার সেকেন্ড অপশন। ফাস্ট অপশন আপনাদের বাড়ি। যে কয়দিন থাকব পেইং গেস্ট হিসেবে থাকব।
পার ডে, কত করে দেবেন?
আপনি ঠিক করে দিন। পনেরো বিশ দিনের বেশি থাকব না।
ঐ বাড়িটা খুঁজে বের করবেন না?
কোন বাড়িটা?
যে বাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন, ভুলে আমাদের বাড়িতে চলে এলেন। যে বাড়ির মেয়ের নাম রুনা। ভাল কথা রুনা কে?
আরেক দিন বলি?
কোনো অসুবিধা নেই, আরেকদিন বলবেন, আর বলতেই যে হবে তাও। শুধু একটা জিনিস এই মুহূর্তে জানতে চাচ্ছি। ঐ রাতে আপনার জন্যে খাবার সাজানো হচ্ছিল, আপনি কাউকে কিছু না বলে চলে গেলেন কেন?
রাগ করে চলে গেছি।
কার উপর রাগ? আমার উপর?
হ্যাঁ। আমাকে তুমি বলতে নিষেধ করেছিলাম এই জন্যে রাগ?
হ্যাঁ।
অন্যায় রাগ করেছিলেন।
হ্যাঁ, অন্যায় রাগ করেছিলাম, তার জন্যে শাস্তিও পেয়েছি।
কি শাস্তি পেয়েছিলেন?
বৃষ্টিতে ভিজে অসুখ বাধিয়েছি।
ডাক্তার রুবিনার কাছে শুনলাম আপনি মরতে বসেছিলেন।
হ্যাঁ। মানুষের হার্টে সমস্যা থাকে, আমার লাংসে সমস্যা।
ডাক্তার রুবিনাকে স্পেশাল থ্যাংকস দিতে ভুলবেন না। উনি আপনার জন্যে অনেক করেছেন।
সবার আগে আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি ঘরে ঢুকেছেন হঠাৎ মনে হল ঘাতঘাত ঘরে এক খ রোদ ঢুকেছে। আপনাকে খুশি করার জন্যে বলছি না। সত্যি বলছি।
রাশেদকে বিকেলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দিল। রাশেদ আনন্দিত গলায় রূপাকে বলল, কি মনে হচ্ছে জানেন? মনে হচ্ছে প্রকৃতি আপনাকে পাঠিয়েছে আমাকে নিয়ে যাবার জন্যে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছি।
রূপা একবার ভাবল বলে, আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু আমাদের বাড়িতে না। আমাদের বাড়ি ভুল বাড়ি। আপনি ভুল করে এসেছিলেন বলেই ভুল বাড়ি। আমি আপনাকে শুদ্ধ বাড়িতে নিয়ে যাব।
রাশেদ বলল, আচ্ছা আপনি কি গান জানেন?
রূপা বলল, না।
রাশেদ বলল, আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। কিছু কিছু মানুষকে দেখে আমার মনে হয় এই মানুষটা গান জানে। তাদের সবাইকেই আমি জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি গান জানেন? সবাই বলেছে, না। শুধু একজনকে দেখে আমার মনে হয়েছে সে আর যাই জানুক গীন জানে না। অথচ সে এত সুন্দর গান করে।
রূপা ব্যানার্জির কথা বলছেন?
রাশেদ জবাব দিল না। কিছুক্ষণের জন্যে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। রূপা তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এল। রূপা জানে কাজটা ভুল হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভুল কাজ করতে ইচ্ছা করে।
বাড়িতে ঢুকেই রাশেদ বলল, যে কথাটা আপনাকে বলতে গিয়ে ভুলে গেছি সেটা মনে পড়েছে। বলব?
বলুন।
আবার ভুলে গেছি।
রূপা বলল, এবার আপনি ভুলেন নি, আপনার মনে আছে। কিন্তু আপনি বলতে চাচ্ছেন না।
রাশেদ বলল, আপনার এত বুদ্ধি কেন? আমি একটা ব্যাপারে খুব অবাক হচ্ছি। আমি দেখেছি রূপা নামের মেয়েদের খুব বুদ্ধি হয়।
সন্ধ্যাবেলা হারুন বাসায় ফিরে দেখেন
সন্ধ্যাবেলা হারুন বাসায় ফিরে দেখেন গেস্টরুমের দরজা খোলা। সেখানে কে যেন শুয়ে আছে। বাইরে থেকে জুতা দেখা যাচ্ছে। জুতা পায়ে বিছানায় শোয়া। আশ্চর্য তো।
হারুন বললেন, গেস্টরুমে কে ঘুমাচ্ছে?
মলিনা বলল, ভাইজান ঘুমাইতাছে। আমারে বলল, মলি কফি খাব। ভাইজান আমারে পুরা নামে ডাকে না, মলি ডাকে। ঘরে ছিল না কফি। দারোয়ান দোকানে পাঠায়া কফি আনাইলাম। মগভর্তি কফি নিয়া গেলাম, ও আল্লা ভাইজান ঘুমে।
হারুন বললেন, ভ্যারভ্যার করবে না। ভাইজানটা কে? ঝেড়ে কাশ।