হ্যাঁ।
নিঃশ্বাসের কষ্ট নাই?
না।
ক্ষুধা লেগেছে, কিছু খাবেন?
হ্যাঁ! ঝাল মাংস দিয়ে পরোটা খেতে ইচ্ছা করছে।
ডাক্তার বললেন, ভেরি সারপ্রাইজিং।
রাশেদ বলল, তিনটি পূর্ণ সংখ্যা যোগ করলে যা হবে গুণ করলেও তাই হবে। বলতে পারবেন?
না।
১, ২ এবং ৩, এক যোেগ দুই যোগ তিন সমান ৬, আবার ১ গুণন ২ গুণন ৩ সমান ৬।
প্রফেসর চলে এসেছেন। তিনি দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা করলেন। আবারও পালস দেখা হল, আবারও প্রেসার মাপা হল। প্রফেসর বিড়বিড় করে বললেন, মিরাকুলাস রিকভারি।
রাশেদ বলল, ডাক্তার সাহেব! মিরাকল প্রায়ই আমাদের জীবনে ঘটে। আমরা বুঝতে পারি না। আমাকে কি কেবিনে পাঠানো যাবে?
প্রফেসর বললেন, যাবে। অবশ্যই যাবে।
এমন একটা কেবিন দিন যেখানে বড় জানালা আছে। তাকালেই আকাশ দেখা যায়।
আমাদের সব কেবিন থেকেই আকাশ দেখা যায়।
রাশেদ বলল, আমার আর হাসপাতালে থাকতে ভাল লাগছে না। যদি মনে করেন আমি মোটামুটির চেয়ে ভাল তাহলে আমাকে ছেড়ে দেবেন। প্লীজ।
রিপোর্টগুলি আগে আসুক।
সব রিপোর্ট ভাল পাবেন।
রাশেদকে কেবিনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নার্স এসে একগাদা রক্ত নিয়ে গেছে, ইউরিন নিয়ে গেছে। আপাতত রুগীকে ভাল মনে হচ্ছে। তবে শরীরের ভেতরের অবস্থাটা জানতে হবে। ইলেকট্রলাইট ব্যালেন্সের অবস্থা, রক্তে সুগারের অবস্থা কিডনি ফাংশান সব পরীক্ষা হবে।
রাশেদ শেভ করে শাওয়ার নিয়েছে। হট শাওয়ারের পর পরই তার মনে হল শরীরটা যতটা ভাল ছিল তারচেয়ে অনেকটা ভাল হয়েছে।
গোশত পরোটার ব্রেকফাস্ট হল না। তাকে হাসপাতালের ব্রেকফাস্ট করতে হল। দুধ, পাউরুটি, হাফবয়েলড ডিম, কলা।
হাসপাতালের বিছানার সামনে রঙিন টিভি। সেখানে নাটক হচ্ছে। রাশেদ আগ্রহ নিয়ে নাটক দেখছে। অন্ধ নায়িকা এবং নায়ক পার্কে বসে আছে। নায়ক জানে না যে মেয়েটি অন্ধ। নায়ক বলল, এশা! দেখেছ কি সুন্দর ডালিয়া ফুটেছে।
এশা বলল, হুঁ। আমাকে একটা ডালিয়া এনে দাও।
নায়ক বলল, কোন রঙ আনব? লাল না হলুদ?
এশা বলল, আমার কাছে লাল এবং হলুদের কোনো আলাদা Identity নেই। আমার কাছে লালও যা, হলুদও তা।
নায়ক টকটকে লাল রঙের ডালিয়া এনে দিল। নায়িকা সেই ফুল নাকের কাছে ধরে বলল, আহা কি গন্ধ! নায়কও সেই ফুলের গন্ধ শুকে মোহিত হয়ে বলল, ঠিক বলেছ, ভারি মিষ্টি গন্ধ।
রাশেদ খানিকটা ভড়কে গেছে। ডালিয়া ফুলের গন্ধ নেই। এরা গন্ধ পাচ্ছে কেন? না-কি এই ডালিয়া বিশেষ কোনো শংকর জাতের। হতেও পারে। ফুল নিয়ে নানান কর্মকাণ্ড হচ্ছে। জাপানি এক কোম্পানি নীল গোলাপ বের করেছে। এই কোম্পানির কিছু নীল গোলাপ পাওয়া গেলে সে রূপাকে দিত। রূপা গোলাপ দেখে চমকে উঠে বলত, নীল রঙের গোলাপ কোথায় পেলেন? সে বলতো…
আসব?
রাশেদ চমকে তাকালো। রূপা দাঁড়িয়ে আছে। বেশ সুন্দর লাগছে রূপাকে। রাশেদ আনন্দিত গলায় বলল, রূপা কেমন আছেন?
রূপা বলল, আমি ভাল আছি। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনিও ভাল আছেন। আমাকে বলা হয়েছিল আপনি মৃত্যুপথযাত্রী।
রাশেদ বলল, আমরা সবাই মৃত্যুপথযাত্রী। আপনি আসবেন আমি কল্পনাও করি নি। আপনাকে ডালিয়া ফুলের মতো লাগছে। হলুদ ডালিয়া। তবে এই ডালিয়ায় গন্ধ আছে। আপনি হলুদ শাড়ি পরেছেন এবং আপনার গায়ে হলুদ রোদ পড়েছে। মনে হয় এই কারণে ডালিয়া। আর একটা কথা, আপনি হয়ত রাগ করবেন। তাতে কিছু যায় আসে না। আমার মাথায় যে কথাটা এসেছে সেটা বলে ফেলব। কারণটা আগে স্পষ্ট করি, মরতে বসেছিলাম, সেখান থেকে ফিরেছি। পরের বার হয়ত ফিরতে পারব না। যে কথা বলতে চেয়েছি সেটা বলা হবে না।
রূপা বলল, হড়বড় করে এত কথা বলার কোনো প্রয়োজন নাই। যা বলতে চাচ্ছেন বলে ফেলুন।
ভুলে গেছি।
এত আগ্রহ করে একটা কথা বলতে চাচ্ছিলেন সেটা ভুলে গেছেন?
রাশেদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কথাটা স্বপ্নের মতো মাথায় এসেছে। স্বপ্ন শর্টটাইম মেমোরি বলেই ভুলে গেছি। মানুষ জেগে থেকেও স্বপ্ন দেখে। খুব কম দেখে কিন্তু দেখে। আপনি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবেন, না ভেতরে আসবেন?
রূপা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, টেলিভিশন বন্ধ করুন।
রাশেদ বলল, অল্প কিছু সময় আপনি এই চেয়ারে বসে থাকুন। আমি নাটকটা দেখে শেষ করি। ঐ যে মেয়েটা দেখছেন সে অন্ধ। নায়ক এখনো বুঝতে পারছে না। যখন বুঝবে তখন টিভি বন্ধ করব।
রূপা বলল, আপনাকে পুরো নাটকটা দেখতে হবে। আমার ধারণা শেষ দৃশ্যে বুঝতে পারবে, তার আগে না। তখন নয়িক তার একটা চোখ দান করবে। দুই কানী সুখের সংসার করবে।–
কানি বলবে কানা
কানা বলবে কানি
এই বলে দুইজনে
করবে কানাকানি॥
রাশেদ বলল, প্লিজ কথা বলবেন না।
রূপার মোবাইল ফোন বাজছে। সে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। শায়লা টেলিফোন করেছেন।
তুই কোথায়?
মা আমি হাসপাতালে। বলেছিলাম না এক মৃত্যুপথযাত্রীকে দেখতে এসেছি।
তার অবস্থা কি?
সে এখন জীবন পথযাত্রী। মহা উৎসাহে কানাকানির নাটক দেখছে।
তুই কি স্পষ্ট করে আমার কথার জবাব দিবি? লোকটা কে?
একবার তোমাকে বলেছি, আবারও বলছি। লোকটা কে আমি জানি না। তবে এখন জানব। নাড়ি নক্ষত্র বের করে ফেলব। তার সম্পর্কে একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ তথ্য অবশ্য জানি। বলব?
বল।
তার ব্লাড গ্রুপ ০ পজেটিভ। বেডের সঙ্গে লাগানো মেডিকেল রিপোর্টে লেখা।
ব্লাড গ্রুপ ও পজেটিভ এটা গুরুত্বপূর্ণ হবে কেন?