রাশেদ সাহেবটা কে?
আছেন একজন। গুরুত্বপূর্ণ কেউ না। মা তোমার কথা কি শেষ হয়েছে? আরো কিছু বলবে?
ফ্রান্সে যে স্কলারশিপ পেয়েছিস সেটা কি রকম স্কলারশিপ?
আলতু ফালতু টাইপ। পেটে ভাতে স্কলারশিপ বলতে পার। যা পাব তা দিয়ে কোনমতে দিন গুজরান হবে। ছুটির দিনে কফি শপে কফি খাওয়ার পয়সা জুটবে না।
চল কোনো একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি। দুজন মিলে কফি খাই। তোর মুখে কফির কথা শুনে কফি খেতে ইচ্ছা করছে।
অন্য আরেক দিন। আজ না কেন?
আমি একটা ছবি আঁকতে শুরু করেছি। আমার মন পড়ে আছে ছবিতে। সেকেন্ড ওয়াশ দেব।
তোর বাবা নিজের বিয়ে নিয়ে লাফালাফি করছে, তোর বিয়ে নিয়ে ভাবছে না।
আমার বিয়ে নিয়ে আমি ভাবব। বাবা কেন ভাববে?
শায়লা বললেন, কি রকম ছেলে তোর পছন্দ?
যার ইনার কালার হবে ডার্ক বু! ঝগড়ায় তাকে পারদর্শী হতে হবে। তর্কে আমাকে হারানোর ক্ষমতা থাকতে হবে। তার প্রচুর টাকা না থাকলেও চলবে। তবে সে বাবার মতো কৃপণ হতে পারবে না।
এটা ভাল বলেছিস। কৃপণ পুরুষ আমারও অসহ্য। থ্যাংক গড়, টগরের বাবা কৃপণ না। ঐ দিন কি হয়েছে শোন। এক বিয়ে বাড়িতে যাব। টগরের বাবার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর মেয়ের বিয়ে। সোনার কিছু দিতে হবে। হঠাৎ কানের একজোড়া টপ দেখে আমার নিজের জন্যে পছন্দ হয়ে গেল। ডায়মন্ডের টপ। দাম এক লাখ পনেরো। টগরের বাবা বলল, এত যখন পছন্দ কিনে ফেল। দামের দিকে তাকানোর দরকার নেই।
রূপা বলল, এই টপজোড়াই কি পরে আহু মা?
হুঁ। সুন্দর না?
অদ্ভুত সুন্দর, তবে তোমার উচিত এই টপ না পরা। এক্ষুণি খুলে ফেল।
কেন?
তোমার কান দেখতে খুব খারাপ। ইঁদুরের কানের মতো কান। ডায়মন্ডের টপ পরার কারণে সবার চোখ যাবে কানের দিকে। তোমার বিশ্রী কান দেখবে। তোমার উচিত চুল দিয়ে বিশ্রী কান দুটা ঢেকে রাখা।
শায়লা আহত চোখে তাকিয়ে রইলেন।
রূপা বলল, মা তুমি কিছু মনে করো না। টপের ডায়মন্ড দুটা নকল। আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি। এই ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। নিজের মেয়ের সঙ্গে ভান করার কিছু আছে? মা! অনেকক্ষণ বকবক করেছি এখন আমি যাব। ছবি আঁকব।
দুটা মিনিট বস। দুই মিনিটে তোর ছবি পালিয়ে যাবে না। বসলাম দুমিনিট। বল কি বলবে।
শায়লা আবার ইনহেলার নিলেন। রূপা হাসল। শায়লা বললেন, হাসছিস কেন?
রূপা বলল, ইনহেলার নিয়ে যে ঢঙটা তুমি কর তা দেখে হাসি। তুমি অসুস্থ। তোমার হাঁপানি এটা দেখানোর জন্যেই তোমার হাতে ঐ বস্তু থাকে।
আমাকে তুই এতটা ছোট ভাবতে পারলি?
তুমি তো ছোটই মা। ছোট কেন ভাবব না।
আমি ছোট?
হ্যাঁ, তুমি ছোটবেলায় আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছ যে বাবা তোমাকে শারীরিক নির্যাতন করত বলেই তুমি তাকে ছেড়ে চলে গেছ। একটা ভয়ংকর মিথ্যা তুমি তোমার মেয়ের মাথায় ঢুকানোর চেষ্টা করেছ। এটা অন্যায়। তুমি বলতে পারতে তোর বাবা ভয়ংকর বোকী। এই জন্যে তাকে ছেড়ে গেছ। আমি একসেপ্ট করতাম। মা এখন কি আমি যেতে পারি?
শায়লী কিছু বললেন না।
রূপা বলল, টগর কেমন আছে মা?
শায়লা বলল, টগরের প্রসঙ্গ থাক। ওকে নিয়ে বাইরের কারো সঙ্গে আমি কথা বলতে পছন্দ করি না। তুই গাড়ি থেকে নেমে যা ছবি শেষ কর।
রূপা মুগ্ধ হয়ে তার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথম ওয়াশের ফলাফল আশাতীত ভাল হয়েছে। ঘূর্ণনটা শেষপর্যন্ত আসে নি, তার বদলে ঢেউ খেলানো একটা ব্যাপার এসেছে। দ্বিতীয় ওয়াশের ফলাফল কি হবে কে জানে। রূপা গাঢ় হলুদ রঙের সঙ্গে বালি মিশাল। দ্বিতীয় ওয়াশে বালি মেশানো থাকবে। ওয়াশের পর কাগজ খাড়া করে রাখবে তখন গ্রেভিটেশনের কারণে বালির কণাগুলি নিচে নামতে থাকবে। এতে সুন্দর কোনো টেক্সচার তৈরি হতে পারে। এটা রূপার নিজের আবিষ্কার না। ভেনিজুয়েলার ওয়াটার কালারের গ্রান্ডমাস্টার হানমুনের আবিষ্কার। তিনি তার বেশির ভাগ ওয়াটার কালারে বালির দানা ব্যবহার করে টেক্সচার তৈরি করেন।
আফা। অফা গো।
রূপ চোখ না তুলেই বলল, বল কি ব্যাপার। হড়বড় করে এক গাদা কথা বলবে না।
একটা মেয়ে আফনেরে বুলায়, তার নাম রুবিনা।
চায় কি?
জানি না।
বসতে বল। আমি জরুরি কাজ করছি কাজ শেষ হলেই যাব। চা বানিয়ে দাও। বসে বসে চা খাক। খবরের কাগজ পড়ুক।
বলছিলাম আফা! উনার নাকি বারোটা থাইকা ডিউটি। ডাক্তার মাইয়া। সময় মতো না গেলে রোগী মইরা ভূত হয়া যাবে। দোষ পড়বে উনার। দোষ ধরতে তো মানুষের সময় লাগে না।
রূপা উঠে দাড়াল। তার স্র সামান্য কুচকে আছে। এমন কি হতে পারে। তার বাবার বিজ্ঞাপনের কারণে ক্যান্ডিডেটরা সরাসরি ইন্টার দিতে চলে আসছে? ঘটনা এ রকম হলে ভাল ঝামেলা হবে। পাত্রীদের ইন্টারভ্য তাকেই নিতে হবে। অত্যন্ত অস্বস্তিকর অবস্থা। রূপা দোতলা থেকে নামল।
বসার ঘরে অল্পবয়েসী মেয়ে বসে আছে। ডাক্তার বলে মনে হচ্ছে না। কলেজে পড়ে পর্যন্ত ঠিক আছে।
রূপা বলল, আপনি আমার কাছে এসেছেন।
আপনার নাম কি সিলভার?
আমার নাম রূপা। তবে রূপা এবং সিলভার অবশ্যি একই। কেন বলুন তো?
আমি এ্যাপলো হসপিটালে কাজ করি। আমাদের একজন পেশেন্টের অত্যন্ত খারাপ অবস্থা। তিনি তাঁর কোনো আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ দিতে পারছিলেন না, যার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। এই বাড়ির ঠিকানাও কিন্তু তিনি দিতে পারেন নি। কিছুক্ষণের জন্যে তাঁর ঘোর কেটেছিল। তখন তিনি কলাবাগানের গাছপালায় ঢাকা দোতলা বাড়ির কথা বলেছেন। বলেছেন বাড়ির নাম সিলভার।