তিনি ক্লান্ত গলায় বললেন, না আমি আর ছবি করব না। ভাল লাগছে না। যে কথাটা তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম সেই কথাটা শোন— তোমাকে আমি খুব ভাল করে লক্ষ্য করেছি। তুমি যেমন আমাকে লক্ষ্য করেছ আমিও করেছি। তুমি বড় হয়ে ছবির লাইনে পড়াশোনা করো। কোন ফিল্ম ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ো। ছবির ব্যাপারে তোমার আগ্রহ আছে। জগৎটকে তুমি ভালবাস। অভিনয় আছে তোমার রক্তের ভেতরে। তুমি পারবে।
থ্যাংক য়্যু।
শোন রুমালী একটা উপদেশ নেই–চেখ সব সময় খোলা রাখবে। অতি তুচ্ছ দৃশ্য ও যেন চোখ এড়িয়ে না যায়! চণ্ডিগড় গ্রামে জাহেল নামের একটা। মেয়ে আছে। মেয়েটা ভবিষ্যৎ বলে— তার বাড়িতে একদিন গিয়ে দেখি— একটা পোষা বক। নাম ধলামিয়া। বুড়ো মানুষদের মত টুক টুক করে হাঁটে। মজার ব্যাপার কী জান? বকটা অন্ধ।
আপনাকে কে বলেছে? জাহেদা।
তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বিষণ্ণ গলায় বললেন, না কেউ বলে নি। কিছুক্ষণ বকটার দিকে তাকিয়েই বুঝলাম সে অন্ধ। তোমাকে এটা বললাম কেন জান–যাতে তুমি তোমার দেখার চোখ তীক্ষ্ম করতে পার। এইটা বলার জন্যে তোমাকে ডেকেছিলাম— এখন তুমি যেতে পার।
একটু বসি?
আচ্ছা বোস। বৃষ্টি বেশ ভালই নেমেছে তাই না?
জ্বি।
তিনি উঠে জানালার পাশে গেলেন। জানালার পর্দা সরালেন। বৃষ্টির ছাট তার গায়ে লাগল। তিনি চট করে সরে গেলেন। যেন বৃষ্টিতে তাঁর কাপড় না ভেজে। অথচ আমি নিশ্চিত জানি–ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই তিনি নদী দেখতে যাবেন। তার মাথার উপর ছাতা থাকবে না।
রুমালী! মোমবাতির আলেটা কেন জানি চোখে লাগছে। কিছুক্ষণের জন্যে বাতিটা নিভিয়ে দি?
দিন।
তিনি বেশ কয়েকবার ফু দিলেন। বাতি নিভল না। তিনি ক্লান্ত এবং হতাশ চোখে মোমবাতির শিখার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার চোখের তারায় মোমবাতির শিখার ছায়া।
নীরা বলছিল তুমি খুব সুন্দর গান কর শোনাও একটা গান। আচ্ছা তুমি কি ঐ গানটা জান? Where have all the flowers gorle?
জি না।
তিনি নিজের মনে গুন গুন করলেন–Where have all the flowers gone? Young girls pick the evely one …. তারপর চুপ করে গেলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বিব্রত গলায় বললেন আমার পছন্দের গান। কথাগুলি সুন্দর। গানটা শেষ হয় প্রশ্ন দিয়ে। When will they ever learn? তারা কবে শিখবে?
আমি আপনাকে অন্য একটা গান শুনাই?
না— কেন জানি এই গানটা ছাড়া অন্য কোন গান এখন শুনতে ইচ্ছে করছে না। আমার একটা সমস্যা আছে, যখন যে গানটা শুনতে ইচ্ছে করে তখন সেই গানের বদলে অন্য গান অসহ্য লাগে।
আমি এই গানটা শিখে রাখব যদি পরে কখনো আপনার সঙ্গে দেখা হয় আপনাকে শুনাব।
থ্যাংক য়্যু ইয়াং লেডি। মনে হচ্ছে আর দেখা হবে না। চল ওঠা যাক। আমি এখন নদী দেখতে যাব।
আমি কি আসব আপনার সঙ্গে?
না। আমি একা যেতে চাই।
তিনি বৃষ্টির মধ্যেই উঠোনে নামলেন সোহরাব চাচা ছাতা নিয়ে ছুটে গেলেন। তিনি ইশারায় বললেন না। তারপর শান্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
বৃষ্টি পড়ছে। ঝড় শুরু হয়েছে।
সোমেশ্বরী নদী গর্জাচ্ছে। নদী তার অলৌকিক গলায় ডাকছে— এসো। এসো। সেই আহ্বান সবাই শুনতে পায় না। কেউ কেউ পায়।