আমাদের সমাজে কিছু মানুষ বাস করেন, যাদের নজর নাকি খারাপ। তারা কোনো কিছুকে ভালো বললে সেই ভালোর দফারফা। নজরলাগা এই ব্যক্তিরা তাদের ক্ষমতা নিয়ে বিব্রত থাকেন না, বরং অহঙ্কারের মতো ভাব তাদের মধ্যে থাকে।
মানুষের নজরের পরে আসে জ্বিন-পরীর নজর। মানুষের নজর কাটান দেওয়া যায়। জ্বিন-পরীরটা যায় না। তখন তাবিজ কবচ দোয়ার আশ্রয় নিতে হয়। সেই মন্ত্রতন্ত্রের কাছে ফিরে যাওয়া।
মুসলমানরা চিঠির শুরুতে ৭৮৬ লিখেন। এর অর্থ বিসমিল্লাহের রহমানের রাহিম। এটা কি এক ধরনের গুপ্ত ম্যাজিক না? ৭৮৬ কেন বিসমিল্লাহের রহমানের রাহিম এর প্রতীক হলো তা জানার চেষ্টা করেছি। যা জেনেছি তা হলো আরবিতে প্রতিটি অক্ষরের সংখ্যামান আছে। বিসমিল্লাহের রহমানের রাহিম উনিশটি অক্ষর আছে। উনিশটি অক্ষরের যোগফল হয় ৭৮৬।
আরবি হরফের সংখ্যামান নিচে দেওয়া হলো–
আরবি হরফের সংখ্যামান
৬৬৬ আরেকটি ম্যাজিক নাম্বার। বাইবেলে (Revelation, ১৩:১৮) এই সংখ্যাকে বলা হয়েছে পশুদের সংখ্যা। বাইবেলের এই পশু উভলিঙ্গ। পশুটি এমন যে তাকে দেখলে মনে হয় সে সর্বক্ষণ নিজে নিজেই যৌনকর্ম করে যাচ্ছে (পশুটির নিতম্ব দুদিকে)। চার্চ পুরোহিতরা এই সংখ্যাটির সঙ্গে যৌনতা সম্পর্কিত বলে নীতিবর্জিত ঘোষণা করেছেন।
৬৬৬ সংখ্যাটিকে ব্যাপক পরিচিতি যিনি দেন তার নাম Aleister Crowly. তিনি নিজেকে একজন মহান পশু (The great beast) পরিচয় দিতেন। তাঁর সীলমোহরে ৬৬৬ সংখ্যাটি ছিল। তিনি গুপ্ত ম্যাজিকের একটি দল গঠন করেন। তাঁর সংগঠনের নাম ছিল Order of the Golden dawn. তার সময়ের (১৮৬৫-১৯৩৯) অনেক বিখ্যাত মানুষ এই গুপ্ত ম্যাজিক দলের সদস্য ছিলেন। একজনের নাম শুনলে পাঠক চমকাবেন। তিনি কবি W. B. Yeats.
পৃথিবীর সেরা গণিতবিদদের একজন ছিলেন পিথাগোরাস। তিনি জাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড় বিশ্বাস ছিল সংখ্যার জাদুতে। তার একদল অনুসারী ছিল। তারা সবাই গোপনে সংখ্যার জাদুর চর্চা করতেন। তারা তাদের জ্ঞান প্রকাশ করতেন না। পিথাগোরাস মনে করতেন মহাবিশ্বের সবকিছুর মূলে আছে সংখ্যা। তাঁর মতে সংখ্যারও নারী-পুরুষ আছে। জোড় সংখ্যা পুরুষ। বিজোড় সংখ্যা হলো নারী। তিনি মনে করতেন গ্রহরা যখন সূর্যের চারদিকে ঘুরে তখন মহান সঙ্গীত তৈরি হয়। এই সঙ্গীত সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব।
সংখ্যার শুভ-অশুভ নিয়েও পিথাগোরাস এবং তার দলের চিন্তাভাবনা ছিল। তাঁদের মতে, সাত একটি শুভ সংখ্যা।
ধর্মীয়ভাবে সাত সংখ্যাটিকে শুভ ভাবা হয়। কারণ রঙ হলো সাতটি। মানুষের মাথার ছিদ্র সাতটি (দুই কান, দুই নাক, দুই চোখ এবং মুখ)। সুর সাতটি।
মধ্যযুগে সংখ্যার ম্যাজিকের চর্চা আরও প্রবলভাবে হতে লাগল। তখন আবিষ্কার হলো Cabala of the nine chambers. নয়টি কক্ষের প্রতিটিতে থাকত রহস্যময় সংখ্যা। যেমন—
এই নয় কক্ষের মধ্যমণি পাঁচ। উপরে, নিচে, কোনাকুনিভাবে সংখ্যাগুলির যোগফল সবসময় হবে ১৫।* (* সূত্র : মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা। গণিত সংখ্যা।)
এই স্কয়ারের আরেকটি নাম হলো ম্যাজিক স্কয়ার। কৃষ্ণশক্তির আরাধনায় এই ধরনের স্কয়ার ব্যবহার করা হতো।
বাংলাদেশের মুসলমানদের বহুলপঠিত গ্রন্থের একটির নাম নেয়ামুল কোরআন। সেখানে অনেক তাবিজ দেওয়া আছে। একটি তাবিজ উদ্ধৃত করছি।
জ্বিন ভূত তাড়াবার তাবিজ
বদনজর, জ্বিন-ভূতের আছর এবং জাদুর আছর দূর করতে হলে এই তাবিজটি লিখে গলায় ঝুলিয়ে দিতে হবে।
পাঠক লক্ষ্য করে দেখুন, এটিও একটি স্কয়ার। (ম্যাজিক স্কয়ার কি?) এই তাবিজে নয়টি কলাম এবং নয়টি সমান্তরাল লাইন আছে। বর্গের সর্বমোট সংখ্যা ৮১, এর যোগফল আবার ৯ (৮+১=৯)।
বিজ্ঞানের কঠিন ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে ব্লাক ম্যাজিক এবং কালো বিপরীত শক্তির উপর মানুষের বিশ্বাস কিন্তু এখনো টিকে আছ। সারা পৃথিবীতে মুক্তবুদ্ধির মানুষ হিসেবে পরিচিত জ্ঞানীরাও এই অন্ধবিশ্বাসের বাইরে যেতে পারেন নি। আধুনিক কোয়ান্টামবিদ্যার জনক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নেইলস বোরের বাড়ির দরজায় আটকানো থাকত একটি ঘোড়ার খুর চুম্বক (Horse shoe magnet)। বিশ্বাস করা হয় এই চুম্বক সৌভাগ্য নিয়ে আসে। নেইলস ববারের এক সহকর্মী জিজ্ঞেস করলেন, আপনার মতো বিজ্ঞানী এইসব বিশ্বাস করেন?
নেইলস বোর বললেন, বিশ্বাস করি না, তবে সৌভাগ্য তো বিশ্বাস না করলেও আসতে পারে।
আরব ঐতিহাসিক আবু সাকের-এর লেখা ইতিহাস থেকে জানতে পারি, অ্যারিস্টটল মহাবীর আলেকজান্ডারকে কালো রঙের বাক্সে কয়েকটি মোমের তৈরি পুতুল উপহার দিয়েছিলেন। আলেকজান্ডারকে তিনি বললেন, এই পুতুলগুলি মন্ত্রপূত। তুমি কখনো পুতুলগুলি হাতছাড়া করবে না। হাতছাড়া করলেই মহা বিপদ।
অর্ধেক পৃথিবী জয়ের পর আলেকজান্ডার পুতুলের বাক্স হারিয়ে ফেললেন। তখন তার বয়স মাত্র ৩৩, সেই বয়সেই তার মৃত্যু হলো।
কালো ম্যাজিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সুগন্ধি। সুগন্ধি মানুষের মন পরিষ্কার করে। মন্দিরে ধূপ পোড়ানো হয়, আমরা আগরবাতি জ্বালাই।
ব্ল্যাক ম্যাজিকে নানান ধরনের সুগন্ধি গায়ে মেখে নিতে হয়। ইজিপ্টের গুপ্ত মাজিকে মৃতদের উদ্দেশে যা পাঠ করা হয় তার ইংরেজি অনুবাদ
The perfume of Arabia hath been brought to thee, To make perfect thy srnell through the scent of the God. Here are brought to thee, liquids which have come from Arabia to make perfect thy smell in the Halt.