হ্যাঁ, এখন করছি। তুমিও করছ বাবা। কাজেই সমান সমান।
হ্যাঁ, সমান সমান।
বাবা, তুমি কি লক্ষ্য করছ, আমি লজিকে তামাকে হারিয়ে দিচ্ছি।
হ্যাঁ, লখ্য করছি।
তুমি কি রেগে যাচ্ছ?
না, রেগে যাচ্ছি না।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করতে করতে বললেন, টি ব্রেক নিলে কেমন হয় শুভ্ৰ।
শুভ্র বলল, ভালই হয়।
আমার চায়ের তৃষ্ণ হচ্ছে। তোর মাকে চা দিতে বলি।
বল এবং মাকে এখানে আসতে বল বাবা। মা কেন আলোচনার বাইরে থাকবে?
তার বাইরে থাকাই ভাল। আমি এখন কিছু কিছু কঠিন কঠিণ কথা বলব। তোকে কঠিণ কথা বললে তোর মা সহ্য করতে পারে না। সে হৈ চৈ করতে থাকবে। আমি হৈচৈ সহ্য করতে পারি না।
তোমার কঠিণ কথাগুলি বল বাবা, শুনি।
কঠিন কথা হল, আমি আজ থেকে অবসর নিয়েছি। সমস্ত কর্মকান্ড থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। আমার যা আছে সব কিছু দেখার এবং সব কিছু চালিয়ে নেবার দায়িত্ব এখন তোমার। তবে ভয় পাবার কিছু নেই। একদল দক্ষ সেনাপতি তৈরী করা আছে। তারা তোমাকে চালিয়ে নিয়ে যাবে। তুমি ভুল করবে। ভুল করতে করতে শিখবে।
তুমি কি করবে?
আপতত চিকিৎসার জন্যে বাইরে যাব। তোমার মাকে নিয়ে যাব। কিছুদিন ঘুরব বাইরে বাইরে। কতদিন তা জানিনা।
রেহানা চা নিয়ে ঢুকলেন। ভীত গলায় বললেন, রিয়াকে টেলিফোন পাওয়া যায় নি। ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, ওকে লাগবে না। রেহানা আজ যে একটা বিশেষ দিন তা-কি তুমি জান? রেহানা চুপ করে রইলেন। ইয়াজউদ্দিন সাহেব ক্লান্ত গলায় বললেন, তুমি জান না। আমিও তাই ভেবেছিলাম। আজ আমার জন্মদিন।
শুভ্র বলল, শুভ জন্মদিন বাবা।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, থ্যাংক ইউ শুভ্ৰ। থ্যাংক ইউ।
তিনি রেহানার দিকে তাকিয়ে বললেন, একজন ডাক্তারকে খবর দাও। আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে। শুভ্ৰ!
জ্বি।
বাতি নিভিয়ে চলে যাও। ভাল কথা, তোমার বন্ধু এবং বন্ধুপত্নীকে তুমিন তোমার জয়দেবপুরের বাড়িতে কিছু দিন রাখতে চেয়েছিল–ওদের নিয়ে যাও। এ ব্যাপারে। আমি আগে যা বলেছিলাম–তা ঠিক বলিনি। আমি ভুল করেছি।
থ্যাংক ইউ বাবা–তুমি এদের এখন সাহায্যও করতে পার–তোমার একটি টেলিফোনে তোমার বন্ধুর খুব ভাল চাকরি হবার কথা। দু একটা জায়গায় টেলিফোন করে দেখতে পার।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব চোখ বন্ধ করলেন। তাঁর খুব খারাপ লাগছে।
নীতুদের বাসার সামনে শুভ্র
নীতুদের বাসার সামনে শুভ্র অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। কলিংবেলে হাত দেবার সাহস পাচ্ছে না। কলিংবেলটাও ভাল না। হাত দিলেই শ ক লাগে।
শুভ্ৰ বেলে হাত রাখল। আশ্চর্য আজ শক করল না। দরজা খুলে দিল নীতু। সহজ গলায় বলল, এসো শুভ্ৰ। তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছি। অফিসেও যাই নি। বেছে বেছে তোমার জন্যে এই লাল শাড়িটা পড়লাম। যদিও লাল রঙ আমার পছন্দ নয়। দেখতে ভাল লাগছে কি না।
নীতু অদ্ভূত ভঙ্গিতে হাসল।
শুভ্ৰ বলল, চাচা কোথায়?
বাবা নেই। নেই বলায় মনে করে না। তিনি মাৱা গেছেন। তিনি ভালই আছেন। তাকে আজ ভোরে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছি। ডাক্তাররা এখন তাকে নল দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। দাঁড়িয়ে আছ কেন শুভ্র বস।
শুভ্ৰ বসল। নীতু বলল, চা খাবে চা দেব? সেজে গুজে আছি। এই অবস্থায় রান্নাঘরে যেতে ইচ্ছা করে না। তবু তুমি চাইলে যেতে হবে। বলতো যায় না। যদি সত্যি সত্যি তুমি আমাকে বিয়ে কর তাহলে তোমার কথাতো শুনতেই হবে। বয়সে ছোট হলেও তুমি তখন হবে আমার স্বামী। তাই না?
নীতু খিলখিল করে হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে তার চোখে পানি এসে গেল। সে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছল।
শুভ্র বলল, আপনি আমার সঙ্গে এ ভাবে কথা বলছেন কেন? আমি আমার মনের ইচ্ছার কথাটা আপনাকে বলেছি। আপনাকে অপমান করবার জন্যে বলি নি। আপা আপনি বসুন। আপনি ছটফট করছেন।
নীতু বসল। শুভ্রের সামনেই বসল। নীতু আজ সত্যি সত্যি সেজেছে। তার গায়ে লাল সিল্কের শাড়ি–ঠোঁটে কড়া করে লাল লিপষ্টিক দেয়া। শুভ্র কখনা নীতুর ঠোঁটে লিপষ্টিক দেখেনি।
শুভ্র।
জ্বি।
তোমার প্রস্তাব শোনার পর আমার কি অবস্থা হল তোমাকে আগে বলি। প্রথম খুব হাসলাম। শব্দ করে হাসলাম। আমার পাশে যে টাইপিষ্ট বসে–আরতী ধর। সে বলল, দিদি এত হাসছেন কেন? আমি তাকে বললাম, দারুণ একটা কাণ্ড হয়েছে। আমি একটা বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। শুভ্ৰ তুমি কি মন দিয়ে আমার কথা শুনছ?
শুনছি।
আরতি বলল, বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন তাহলেতো ভাল কথা। এতে হাসির কি হল–ছেলে কেমন। কি করে? আমি বললাম, ছেলে রাজপুত্রের মতো। এবং এই ছেলে জীবনে কোন পরীক্ষায় কখনো সেকেণ্ড হয়নি। তার টাকা পয়সা যে কত আছে তা সে নিজেও জানে না।
শুভ্ৰ আমার কথা শুনছ?
শুনছি।
আমাকে বিয়ের ইচ্ছা এখনো তোমার মনে আছেতো না-কি মত বদলেছ?
মত বদলাই নি।
গুড। এখন বল কেন বিয়ে করতে চাও? আমার রূপের জন্যে? আমি কি খুব রূপবতী?
আপনি রূপবতী। তবে রূপ তেমন বড় কিছু নয়।
ঠিক বলেছে। রূপ বড় কিছু নয়। অতি বিত্তবানদের কাছে রূপ বড় কিছু না কারণ রূপ তারা চারদিকে দেখছে। রূপ তাদের কাছে সহজ লভ্য। রূপ নিম্নবিত্তদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক বলছি না?
হ্যাঁ ঠিক বলছেন।
তাহলে বল কেন আমাকে তোমার এত পছন্দ হল? তোমার মুখ থেকে শুনি।
আপা আমি জানি না। বিশ্বাস করুন জানি না।
আমার মনে হয় আমি জানি। আমার শরীরটাই তোমাকে মুগ্ধ করেছে। লজ্জা পেও না শূভ্র তাকাও আমার দিকে। ভেরী গুড! এইত তাকাচ্ছ। ভীতু টাইপের স্বামী আমার পছন্দ না।