হুঁ।
আমি বুঝতে পেরে মনে মনে হাসছিলাম। বানিয়েই যখন বলছি দুরুমের ফ্ল্যাট বললে কেন? বললে না কেন চার রুমের দখিণ দুয়ারী ফ্ল্যাট। একটা সার্ভেন্টস রুম।
চল, ফিরে যাই কেয়া।
না, এখন ফিরব না। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুরব। তোমার মামার অবস্থা কি?
অবস্থা ভাল না।
ভাল না হলে বলার দরকার নেই। খারাপ তো কিছু শুনতে ইচ্ছা করছে না। তুমি কি রাতে খেয়েছ?
না।
তাহলে চলতো–কোন একটা ভাল রেস্টুরেন্টে চল। তুমি খাবে আমি দেখব। আমার সঙ্গে টাকা আছে।
তুমি সুস্থ হয়ে নাও তারপর একসঙ্গে দুজন খাবো।
না, আজই তুমি খাবে। আমি দেখব। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন তুমি আরাম করে কিছু খাও না। তোমার স্বাস্থ্য যে কি খারাপ হয়েছে তা তুমি জান? আচ্ছা এক কাজ কর, হুড তুলে দাও। আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে। জ্বর–বেড়েছে বোধহয়। দেখ তো। আচ্ছা এত সংকোচ করে গায়ে হাত দিচ্ছ কেন? আমি তোমার স্ত্রী।
ইয়াজউদ্দিন সাহেবের শরীর খারাপ
ইয়াজউদ্দিন সাহেবের শরীর খারাপ লাগছে। সন্ধ্যাবেলা ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। বলেছেন প্রেসার হাই। সিডেটিভ খেতে দিয়েছেন। ঘর অন্ধকার করে শুয়ে থাকতে বলেছেন। তিনি ঘর অন্ধকার করেই শুয়ে আছেন। রেহানা তেতুলের সরবত নিয়ে এসেছেন। তিনি বাধ্য শিশুর মত সরবত খেলেন। গ্লাস নামিয়ে রেখে বললেন, শুভ্ৰ কি ঘরে আছে?
হ্যাঁ আছে।
কি করছে?
জানি না-তো। দেখে আসব?
দেখে আসতে হবে না। তুমি রিয়াকে টেলিফোনে আসতে বল। বলবে খুব জরুরী।
কি হয়েছে?
কিছু হয়নি। ভাল কথা, শুভ্ৰ কি আজ দিনে কোথাও বের হয়েছিল?
না।
তুমি শুভ্ৰকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। আর শোন, আমি যতক্ষণ কথা বলব তুমি ঘরে ঢুকবে না।
কি ব্যাপার?
কোন ব্যাপার না।
ডাক্তার তোমাকে চুপচাপ শুয়ে থাকতে বলেছে।
আমি চুপচাপ শুয়েই আছি।
রেহানা চিন্তিত মুখে ঘর থেকে বের হলেন। শুভ্র তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে ঢুকাল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, আমার পায়ের কাছের চেয়ারটায় বাস শুভ্ৰ, আমি তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলব। পায়ের কাছে বসলে আমি তোমার মুখ দেখতে পারব।
শুভ্ৰ বলল, অন্ধকারে মুখ দেখবে কি করে?
টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলিয়ে দাও।
শুভ্ৰ বাতি জ্বালাল। ইয়াজউদ্দিন খাটে আধশোয়া হয়ে বসে আছেন। তার খালি গা। তাঁর সারা গায়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম। খাটের মাথায় রাখা তায়ালে দিয়ে তিনি শরীরের ঘাম মুছলেন।
শুভ্র!
জ্বি বাবা। আমি তামাকে কি পরিমান ভালবাসি তাকি তুমি জান?
জানি।
না, তুমি জান না।
শুভ্ৰ হেসে ফেলল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব কঠিণ গলায় বললেন, হাসলে কেন?
তোমার ছেলেমানুষীতে হাসছি বাবা। ছেলেকে ভালবাসায় তুমি আলাদা কিছু না। অন্য সব বাবাদের মতই। পৃথিবীর সব বাবাই তাঁদের ছেলেমেয়েদের প্রচন্ড ভালবাসেন। তুমি এমন কোন বাবার কথা বলতে পারবে যে তাঁর ছেলেকে ভালবাসে না
শুভ্ৰ তুমি কি আমার সঙ্গে তর্ক করতে চাচ্ছ?
তৰ্ক করতে চাচ্ছি না। তোমার লজিকের ভুল ধরিয়ে দিচ্ছি।।
ভুল ধরিয়ে দিচ্ছ?
হ্যাঁ ভুল ধরিয়ে দিচ্ছি। তুমি সারাজীবন মনে করে এসেছী। তোমার লজিক অভ্রান্ত। তুমি যা ভাবছ তাই সত্যি।
এ রকম মনে করার যথেষ্ট কারণ কি নেই?
কারণ আছে। তোমার মত ভাল লজিক দিতে আমি এ পর্যন্ত শুধু একজনকেই দেখেছি।
কে? তোমার নীতু আপা?
হ্যাঁ।
তুমি কি তাকে বলেছ যে তাকে তুমি বিয়ে করতে চাও?
বলেছি।
সে কি বলেছে?
আগামী কাল আমাকে দেখা করতে বলেছেন।
তুমি তাহলে আগামী কাল তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছ?
হ্যা, যাচ্ছি।
আমি যদি বলি যেও না। তারপরেও যাবে?
হ্যাঁ, যাব। তুমি কি আমাকে যেতে নিষেধ করছ?
না নিষেধ করছি না। তুমি অবশ্যই যাবে।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব দম নেবার জন্যে থামলেন। তোয়ালে দিয়ে আবার গায়ের ঘাম মুছলেন। তাঁর পানির পিপাসা হচ্ছে। হাতের কাছে রাখা পানির গ্লাসটা শূন্য। শুভ্র বলল, পানি এনে দেব বাবা?
দাও।
শুভ্ৰ পানি এনে দিল। তিনি এক নিঃশ্বাসে সবটুক পানি খেলেন। শুভ্রর দিকে তাকিয়ে হাসলেন। শুভ্ৰও হাসল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন, আমরা এমন ভাবে কথা বলছি যেন দুজন দুজনের প্রতিপক্ষ। তা কিন্তু না শুভ্ৰ। আমরা আলোচনা করতে বসেছি। গল্প করতে করতে হাসি মুখে আলোচনা করা যায়।
আমি তোমাকে কখনোই প্রতিপক্ষ ভাবি না বাবা। কখনোই না।
না ভাবাই ভাল। আমি খুব শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তুমি যুদ্ধে আমার সঙ্গে পারবে না। হেরে যাবে।
না বাবা, তা হবে না। আমি হারব না। তুমিও আমাকে হারাতে পারবে না। তুমি ভুলে যাচ্ছ। আমি তোমারই ছেলে। তোমার যেমন হেরে অভ্যাস নেই–আমারো নেই।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব বালিশের নীচ থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলেন। সিগারেট তীর জন্যে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু এখন তিনি সিগারেটের জন্যে প্রবল তৃষ্ণা বোধ করছেন।
শুভ্ৰ আমি যে অসুস্থ তাকি তুমি জান?
জানি বাবা।
পুরোপুরি বোধহয় জান না। আমি গুরুতর অসুস্থ। কাউকে তা বুঝতে দেই না। নিজের সমস্যা আমি নিজের মধ্যে রাখতে ভালবাসি।
আমিও তাই করি। আমিও নিজের কষ্ট নিজের ভেতর রাখার চেষ্টা করি। মা যখন আমাকে জাহেদের বিয়েতে যেতে দিল না–আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। আমি তো মাকে কিছুই বলিনি। আমি আমার এই দরিদ্র বন্ধুকে সামান্য একটা উপহার দিতে চেয়েছিলাম। তুমি তা দিতে দাও নি। আমিতো কোন অভিযোগ করি নি।
এখন করছ?