থ্যাংক ইউ, চাচা।
তুমি সব সময় আনন্দের ভেতর থাকতে চেষ্টা করবে। মনে আনন্দ থাকলে শরীর ভাল থাকে। শরীরের প্রাণবিন্দু হল মন। আমরা ডাক্তাররা বলি মস্তিষ্ক। কিন্তু আমরা নিশ্চিত না।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব ছেলেকে নিয়ে ফিরছেন। দুজনে বসেছেন পেছনের সীটে। ইয়াজউদ্দিন সাহেব এক হাতে শুভ্রের হাত ধরে আছেন। সাধারণত তিনি এমন করেন না। কিছু দূরত্ব ছেলের সঙ্গে তাঁর থাকে। আজ কোন দূরত্ব অনুভব করছেন না।
শুভ্র!
জ্বি।
ঐ দিন বিয়ার পার্টি তোমার কেমন লাগল?
ভাল লেগেছে।
পার্টি তো তোমার সচরাচর ভাল লাগে না। ঐ পার্টি ভাল লাগল কেন?
মূল হৈচৈ-এর সঙ্গে ছিলাম না। আলাদা ছিলাম।
নীতুর সঙ্গে কথা হয়েছে।
হ্যাঁ, হয়েছে।
মেয়েটিকে কি তোমার পছন্দ হয়েছে?
হ্যাঁ, হয়েছে।
ঐ মেয়েটির কোন দিক তোমার সবচে ভাল লেগেছে?
বুদ্ধি। দারুণ বুদ্ধি।
আমার নিজেরো মেয়েটিকে দারুণ পছন্দ। তবে বুদ্ধির জন্যে নয়। আমার কাছে নীতুর বুদ্ধি এমন কিছু বেশি মনে হয় নি। আমার যা ভাল লেগেছে তা হল–মেয়েটি আশেপাশের মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করে। বেশির ভাগ মানুষই যা করে না। অথচ আশেপাশের মানুষকে বোঝার চেষ্টা খুব জরুরি।
সবার জন্যেই কি জরুরি?
সবার জন্যে জরুরি নয়। অবশ্য। কারো কারো জন্যে জরুরি। তোমার জন্যে খুব জরুরি। যে তোমার স্ত্রী হবে তার জন্যে আরো জরুরি। কারণ বিশাল কর্মকাণ্ড তোমাকে এবং তোমার স্ত্রীকে পরিচালনা করতে হবে। আমার অবসর নেবার সময় হয়ে এসেছে। আমার শরীর ভাল না। আমি বিশ্রাম নেব। তবে বিশ্রাম নেবার আগে দেখে যেতে চাই–সব গুছিয়ে ফেলেছি।
শুভ্র বলল, বাবা, তুমি কি চাও যে আমি নীতু মেয়েটিকে বিয়ে করি?
হ্যাঁ, আমি চাই। তোমার পছন্দের কেউ যদি থাকতো আমি বলতাম না। তোমার পছন্দের কেউ নেই। তোমাকে এ ব্যাপারে অনেক বার জিজ্ঞেস করা হয়েছে। তুমি প্রতিবারই না বলেছ।
শুভ্র বলল, আমি ভুল বলেছি, বাবা। আমার পছন্দের একজন আছে।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব হতভম্ভ হয়ে বললেন, তার নাম জানতে পারি?
হ্যাঁ পার। নীতু আপা। সাবেরের বোন।
শুভ্ৰ, তুমি আমার সঙ্গে কোন হেঁয়ালি করছ না তো।
না, হেঁয়ালী করছি না।
মেয়েটিকে তুমি আপা ডাক?
জ্বি।
আমি যতদূর জানি মেয়েটির আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। সে বিয়ে টিকে নি।
তুমিই ঠিকই জান, বাবা। তোমার ইনফরমেশন কখনা ভুল হয় না।
মেয়েটির আরেকটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে আছে–এও বোধহয় সত্য।
হ্যাঁ।
তুমি কি তোমার আবেগের কথা মেয়েটিকে বলেছ?
না, এখনো বলিনি। তবে বলব।
মেয়েটি বয়সে তোমার চেয়ে বড়?
জ্বি বাবা, বড়। বছর চারেকের বড়। সেটা কি কোন বড় সমস্যা? চল্লিশ বছরের পুরুষ তো কুড়ি বছরের মেয়ে বিয়ে করছে।
শুভ্ৰ, আমি তোমার সঙ্গে কোন তর্কে যেতে চাচ্ছি না। তর্ক করার এটা কোন উপযুক্ত সময় নয়। তা ছাড়া তুমি এখন যে ভঙ্গিতে আমার সঙ্গে কথা বলছি তাতে মনে হচ্ছে তুমি তর্ক শুনতে প্রস্তুত নও। একটা সময় আসে যখন সব যুক্তি অর্থহীন মনে হয়।
আমি তোমার যুক্তি খুব মন দিয়ে শুনি বাবা। এখনো শুনব।
এখন আমার নিজের মনও বিক্ষিপ্ত। অফিসে যাব। মনিরুল ইসলাম নামের আমার একজন কর্মচারীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। মনিরুল ইসলামকে নাকি কদিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। যাই হাক, আমি অফিসে নেমে যাব। তুমি গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যাও। বাই দ্যা ওয়ে, তোমার মার সঙ্গে এ ব্যাপারে কোন কথা বোধহয় এই মুহুর্তে না বলাই ভাল। তার শরীর ভাল না। সামান্য উত্তেজনা সহ্য করার ক্ষমতাও তার নেই।
আমি কি নীতু আপার সঙ্গে কথা বলতে পারি? দেখা করতে পারি তাঁর সঙ্গে?
এখন নয়।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব অফিসে নেমে গেলেন। ঠিক বারোটায় মনিরুল ইসলামের স্ত্রীকে ডেকে পাঠালেন। সহজ গলায় বললেন, আপনার সমস্যা বলুন। কেঁদে কেঁদে বললে আমি কিছুই বুঝব না। শান্ত হান। শান্ত হয়ে বলুন।
সঙ্গে শুনলেন। তারপর বললেন, আপনার জন্যে আমার খুবই খারাপ লাগছে। আপনি অস্থির হয়ে পড়েছেন দেখতে পাচ্ছি। অস্থির হওয়াটাই স্বাভাবিক। যে কেউ অস্থির হবে। বড় বড় কারখানায় অনেক ধরনের রাজনীতি চলে। ইউনিয়ন ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে জটিলতা থাকে। সেটা ধ্বংসাত্বক পর্যায়ে চলে যায়। আমি পুলিশকে বলে দিচ্ছি যেন তারা একটা খোঁজ বের করার চেষ্টা করে। আপনি এখানকার ইউনিয়ন কর্মকর্তা যারা আছে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। এরা অনেক কিছু জানে। জেনেও চুপ করে থাকে। মনে হচ্ছে আপনার কিছু আর্থিক সহায়তাও দরকার। আমি ক্যাশিয়ারকে বলে দিচ্ছি। সে আপনাকে কিছু টাকা দেবে। মনিরুল ইসলামের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কারখানার সমস্যা সামলানো হয়েছে। খুব চমৎকারভাবেই সামলানো হয়েছে। আগামী দুবছর আর কোন সমস্যা হবে না।
শুভ্ৰ শুয়েছিল
শুভ্ৰ শুয়েছিল। মাঝে মাঝে কিছুই ভাল লাগে না। শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। আজ মনে হয় সে রকম একটা দিন। আকাশে মেঘলা। বিছানা থেকে আকাশের মেঘ দেখা যায়। এই মেঘ সে আর কতদিন দেখতে পারবো? শুভ্ৰ ছাট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল। রেহানা ঘরে ঢুকে বললেন, একটা মেয়ে তোকে টেলিফোন করেছে। বলেছে। নীতু আপা। টেলিফোন ধরবি?
হ্যাঁ। শুয়ে আছিস যখন শুয়ে থাক। আমি পরে টেলিফোন করতে বলি। না, আমি যাচ্ছি।
মেয়েটা কে?