শুভ্রকে ঢুকতে দেখে রিয়া ছুটে এল। রিয়ার হাতে কাঁচের মাছ আকৃতির প্লেট। প্লেটভর্তি টুথাপিকের মাথায় বসানা বিচিত্র কোন খাবার। পার্টি হলেই রিয়া কোন একটি বিচিত্র খাবার নিজে তৈরি করে। আজকের এই খাবারটি তার তৈরি। অতিথিরা কেউ এই খাবারে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। অতিরিক্ত লবণের জন্যে মুখে দেয়া যাচ্ছে না।
রিয়া বলল, আয় শুভ্র।
শুভ্ৰ আতংকিত গলায় বলল, পার্টি না কি?
আরে না। পার্টি কোথায় দেখলি। কয়েকজনকে শুধু খেতে বলেছি। হা কর দেখি, মুখে একটা খাবার দিয়ে দি। সল্টেড ড্রাই বীফ। মেক্সিকান খাবার। হান্টার বীফকে লবণে জেরে বানাতে হয়।
ছোট খালা, তুমি আমার কাছে দাও। নিজে খাচ্ছি, খাইয়ে দিতে হবে না।
মুখে তুলে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। দেখি হা করি। আর শোন, সবার সামনে আমাকে খালা ডাকবি না। আমি অনেক দূরের খালা–লতায়-পাতায় খালা। তোর চে মাত্র দুবছরের বড়।
কি ডাকব?
নাম ধরে ডাকবি। মিষ্টি করে বলবি–রিয়া। কই হা কর।
শুভ্ৰ হা করল। সবাই তাকাচ্ছে তার দিকে। খুব অস্বস্তি লাগছে। কে যেন একটা কি রসিকতা করল। সবাই হা হা করে হেসে উঠল। রিয়া বলল, আমাকে কেমন লাগছে?
ভাল।
ঠিকমত তাকিয়ে তারপর বল–ভাল। চশমার ভেতর দিয়ে ভাল করে দেখা।
খালা, আমি এই ঘরে বেশিক্ষণ বসতে পারব না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
এ ঘরে তোকে বেশিক্ষণ বসতে হবে না। তোকে অন্যঘরে নিয়ে যাচ্ছি–একটি মেয়ের সঙ্গে তোকে পরিচয় করিয়ে দেব। ওর সঙ্গে কথা-টথা বলে দেখ মনে ধরে কি-না। এক বছরের জন্যে তোকে না-কি বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটাকে যদি মনে ধরে ওকে নিয়ে যা। তার আগে আয় তোকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দি।
রিয়া শুভ্রের হাত ধরে ঘরের মাঝখানে নিয়ে এল। রিয়া উঁচু গলায় বলল, এটেনশন প্লীজ। আমি এই পৃথিবীর সবচে রূপবান ছেলেটির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এই ছেলে আমাকে খালা ডাকে–যদিও আমি তার খালা নই। এই ছেলে তার জীবনে কোন পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। কোন পরীক্ষায় সেকেন্ড হলে কেমন লাগে। সে অভিজ্ঞতা এই ছেলের নেই। এর নাম শুভ্র…
রিয়ার কথা শেষ হবার আগেই মোটামত এক ভদ্রলোক বললেন, শুভ্ৰ ভাই, এদিকে আসুন, আপনার পায়ের ধূলা দিয়ে যান। আমরা কপালে মাখি।
সবাই আবারো হা হা করে হেসে উঠল। রিয়া বলল, ফরিদ সাহেব, শুভ্রকে নিয়ে হাসি-তামাশা করবেন না। ও খুবই সেনসিটিভ। ছোটবেলায় কেউ ওকে কিছু বললে দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কাঁদত। এখনা হয়ত এরকম করে। শুভ্ৰ, তুই কি এখনো কাঁদিস?
শুভ্র বলল, এখন কাঁদি না–এখন হাসি।
শুভ্ৰ, তাহলে হাসতে হাসতে পাশের ঘরে চলে যা। ঐ ঘরে তার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে। ডিনার রাত দশটার আগে দেয়া হবে না। ঘরে কোন রান্না হয়নি–খাবার বাইরে থেকে আসবে।
ফরিদ আনন্দের নিঃশ্বাস ফেলে বলল, বাঁচলাম। আমরা হান্টার বীফ খেয়ে আতংকের মধ্যে ছিলাম।
সবাই আবারো হাসল। রিয়ার মুখ হাসি-হাসি। পার্টি জমে গেছে। এক একবার এমন হয়–পার্টি জমতে চায় না। হৈচৈ হয়, খাওয়া-দাওয়া সবই হয়, তারপরেও পার্টিতে প্ৰাণ প্রতিষ্ঠা হয় না। পার্টি শেষ হলে খুব ক্লান্ত লাগে। আবার কোন কোন দিন হুট করে পার্টি জমে যায়। কেউ পটি ছেড়ে উঠতে চায় না। সামান্যতেই সবাই হেসে গড়াগড়ি করে। রিয়া আজ মনে-প্ৰাণে চাচ্ছে পার্টি জমে উঠুক। খুব ভাল করে জমুক। রাত একটা বেজে যাবে। কেউ বুঝতেও পারবে না। এত রাত হয়েছে —। কেউ আগে আগে চলে যেতে চাইবে না। কেউ বলবে না–সরি, বেশিক্ষণ থাকতে পারব না, আমার জরুরি কাজ আছে। আমাকে বিদায় দিতে হবে। খুব এনজয় করেছি। রিয়াকেই বলতে হবে–এটেনশন প্লীজ, দয়া করে আপনারা গাত্ৰোখান করুন। রাত একটা বেজে গেছে। তবে যাবার আগে একটি গুড নিউজ শুনে যান। গুড নিউজটি শুভ্র সম্পর্কে…
হ্যাঁ, রিয়া বিদেশী গল্প-উপন্যাসের মত ব্যাপারটা করতে চায়। পার্টিতে এনগেজমেন্ট ডিক্লারেশন করার মত ঘটনা ঘটাতে চায়। ইয়াজউদ্দিন সাহেব রিয়াকে অনুমতি দিয়েছেন। মেয়েটি সম্পর্কে আসল জায়গা থেকে গ্ৰীন সিগন্যাল পাওয়া গেছে। শুভ্র কি করবে না করবে তা নির্ভর করছে। ইয়াজউদ্দিন সাহেবের উপর। শুভ্রের উপর না। তবে ইয়াজউদ্দিন অত্যন্ত বুদ্ধিমান। শুভ্রকে তিনি ব্যাপারটা বুঝতে দেবেন না। শুভ্ৰ জানে না যে তার বাবা মেয়েটির সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছেন। মেয়েটির পরিবার সম্পকে খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। ইয়াজউদ্দিন সাহেবের কথামতই আজকে এই পাটির আয়োজন করা হয়েছে। বাইরে থেকে যে খাবার আসার কথা তার ব্যবস্থাও ইয়াজউদ্দিন সাহেবের করা।
রিয়া শুভ্রকে ড্রয়িং বুমের লাগোয়া একটা ঘরে নিয়ে গেল। ছেলেমানুষি খুশি-খুশি গলায় বলল, শুভ্ৰ, সোফায় যে তরুণীটি বসে আছে তুই তার সঙ্গে কথা-টথা বল। তাকে আনা হয়েছে তোকে কোম্পানী দেয়ার জন্যে। পার্টি তুই সহ্য করতে পারিসনা, আমি জানি–তোর জন্যে এক্সকুসিভ ব্যবস্থা। আমার মেলা কাজ, আমি যাচ্ছি—। এক ফাঁকে এসে তোদের কফি দিয়ে যাব।
রিয়া ঝড়ের মত বের হয়ে গেল। মেয়েটি সহজ গলায় বলল, বসুন। দাঁড়িয়ে আছেন কেন। আমার নাম আনুশকা। ডাক নাম নীতু।
শুভ্ৰ অবাক হয়ে বলল, আশ্চর্য! আপনার নাম নীতু!
নীতু বিস্মিত হয়ে বলল, এত অবাক হচ্ছেন কেন? নীতু নামটা কি আপনার কাছে খুব অপরিচিত লাগছে?