আছে, আছে–যাবে কোথায়? ঘরেই আছে। জ্বর হয়েছে শুনেছি। আমি ঠাট্টা করে বলেছি–বিরহ জ্বর। হা হা হা।
কোয়াকে একটু খবর দেবেন?
আরো কি মুশকিল! আমি খবর দেব কেন? আপনি হলেন এ বাড়ির জামাই। আপনি সুরসুর করে ভেতরে ঢুকে যান। আমি কে? আমি হলাম আউটসাইডার।
জাহেদকে ভেতরে ঢুকতে হল না। কেয়া বের হয়ে এল। তার গায়ে জ্বর। একশ দুইয়ের কাছাকাছি। অসহ্য মাথার যন্ত্রণা। মনে হচ্ছে মাথা ছিঁড়ে পড়ে যাবে। কিন্তু সে বেশ স্বাভাবিক। জাহেদের দিকে তাকিয়ে হাসল। নরম গলায় বলল, চল ছাদে যাই।
জলিল সাহেব চেচিয়ে বললেন, আরো না, ছাদে যাবে কেন? জ্বর নিয়ে ছাদে যাবার কোন দরকার নেই। গল্প-গুজব যা করার এখানে বসেই কর। স্বামী-স্ত্রীর গল্প বলার তো কিছু নাই। হা হা হা।
কেয়া কিছুই বলল না। দরজা খুলে রওনা হল। তার গায়ে পাতলা একটা চাদর। চাদরে বোধহয় শীত মানছে না। সে অল্প অল্প কাঁপছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতে ধরল। জাহেদ তাকে ধরে ফেলল। জাহেদ বলল, শরীর এত খারাপ করেছে কি ভাবে? কেয়া বলল, বুঝতে পারছি না। কাল রাতে অনেকক্ষণ ধরে গোসল করেছি। মনে হয়। ঠাণ্ড লেগেছে।
কাশি আছে?
আছে। শুনতে চাও?
কেয়া হাসছে। জাহেদ বলল, ছাদের হাওয়ায় বসা বোধহয় ঠিক হবে না।
ঠিকই হবে। চুপ করে বস। তোমার মামা কেমন আছেন?
বুঝতে পারছি না। খুব ভাল মনে হচ্ছে না। মাথা বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে কিংবা হতে যাচ্ছে–
ডাক্তার দেখিয়েছ?
হুঁ।
ডাক্তার কি বললেন?
অষুধপত্র দিয়েছেন। গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলছেন। পরিবেশ বদলাতে বললেন।
নিয়ে যাচ্ছ গ্রামের বাড়িতে?
হুঁ।
কবে?
আজ রাতের ট্রেনেই যেতে চাচ্ছেন। এখনো বুঝতে পারছি না।
নিয়ে যাও।
নিয়ে যেতে বলছ!
হুঁ বলছি। তোমার নিজের উপর দিয়েও মনে হয় ঝড় যাচ্ছে। তোমারও চেঞ্জ দরকার। নয়ত পরে দেখা যাবে মামা যে পথে যাচ্ছে–ভাগ্নেও সেই পথে যাচ্ছে। দুজনই আইল্যান্ডে নেংটা হয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক কনট্রোল করছে।
কেয়া হাসছে। কি সুন্দর লাগছে কেয়াকে! জাহেদ মনে মনে বলল, আমার সৌভাগ্যের শেষ নেই। কি চমৎকার একটি তরুণীকে আমি পাশে পেয়েছি।
কেয়া বলল, গম্ভীর হয়ে আছ কেন? আমার কথায় রাগ করেছ?
না, রাগ করব কেন?
আজ শোভ করনি কেন?
তাড়াহুড়ায় সময় পাইনি।
কেয়া নিচু গলায় বলল–বাসর রাতে তোমাকে বলার জন্যে সুন্দর একটা গল্প রেডি করে রেখেছিলাম। মনে হচ্ছে বাসর হতে অনেক দেরি। গল্পটা এখন বলব?
না, থাক। এখন শুনব না।
তোমাকে যে নীল একটা হাফশার্ট আর ধবধবে শাদা প্যান্ট কিনতে বলেছিলাম, কিনেছ?
না।
নেক্সট টাইম যখন আসবে শাদা প্যান্ট এবং নীল শাট যেন গায়ে থাকে।
আচ্ছা থাকবে।
জাহেদ বলল, আমি বরং আজ যাই। মামাকে যদি দেশে নিয়ে যেতে হয় তাহলে গোছগাছ করতে হবে।
আচ্ছা যাও।
তুমিও নিচে চল। জ্বর নিয়ে ছাদে বসে থাকবে না।
কেয়া বলল, আমি আরো কিছুক্ষণ থাকব। তুমি যাও।
ঠাণ্ডা লাগবে তো!
লাগুক। কালও অনেক রাত পর্যন্ত ছাদে ছিলাম।
কেন?
কেয়া ক্লান্ত গলায় বলল, কি করব বল। কিছু ভাল লাগছে না। কাল ছাদে বসে কি ভাবছিলাম জান? ভাবছিলাম যদি আমাদের কখনো একসঙ্গে থাকার সুযোগ হয় তাহলে পুরো এক রাত এবং একদিন তোমাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকব। একটা সেকেন্ডের জন্যেও তোমাকে কোথাও যেতে দেব না।
জাহেদ বলল, কয়েকটা দিনের ব্যাপার। আমি একটা ফ্ল্যাটের জন্যে সবাইকে বলেছি। দুরুমের ফ্ল্যাট।
ফ্ল্যাটের ভাড়া কিভাবে দেবো?
একটা ব্যবস্থা হবেই। যাই কেয়া।
আচ্ছা।
আচ্ছা বলেও জাহেদ গেল না। দাঁড়িয়ে রইল। কেয়া বলল, কিছু বলবে?
বাসায় তোমার আপাকে কি বলেছ?
বলেছি। একটা কিছু তোমার শোনার দরকার নেই।
কি যে বিপদে পড়েছি কেয়া।
কোন বিপদ না। তুমি চলে যাও।
জাহেদ চলে গেল। কেয়া বসে আছে চুপচাপ। বাতাসে তার মাথার চুল উড়ছে।
শুভ্ৰ সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমালো
শুভ্ৰ সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমালো। রেহানা কয়েকবার খোঁজ নিয়ে গেলেন। এতক্ষণ তো শুভ্ৰ ঘুমায় না। জ্বর-টর হয়নি তো? তিনি একবার কপালে হাত দিলেন। গা গরম লাগছে। সারাদিন রোদে রোদে ঘুরলে জ্বর তো আসবেই। সন্ধ্যায় রেহানা শুভ্রকে ডেকে তুললেন। সন্ধ্যাবেলা ঘুমুতে নেই। সন্ধ্যায় ঘুমুলে আয়ু কমে যায়।
শুভ্ৰ, তোর কি শরীর খারাপ লাগছে, বাবা?
না।
গা গরম।
আমার গা ঠিকই আছে মা, তোমার হাত ঠাণ্ডা।
মুখ ধুয়ে আয়। চা দিয়েছি।
আমি আরো খানিকক্ষণ ঘুমুৰ, মা।
কি পাগলের মত কথা বলছিস? তোর রিয়া খালার বাড়ি যাবি না?
আমার যেতে ইচ্ছা করছে না, মা।
কথা বাড়াবি না। উঠে আয়। রিয়া গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। উঠা তো বাবা। এই নে তোর চশমা।
শুভ্ৰ উঠে বসল। হাত বাড়িয়ে চশমা নিল। রেহানা বললেন, তোর সব কাপড় ইস্ত্রি করে রাখা আছে। পায়জামা পাঞ্জাবী। রিয়া বলেছে তোকে যেন পায়জামা পাঞ্জাবী পরানো হয়।
মা, আজ না গিয়ে অন্য একদিন যাব।
খানিকক্ষণ থেকে চলে আসবি। রিয়ার না-কি তোর সঙ্গে কি কথা আছে।
পার্টি-ফার্টি না তো মা?
উঁহু, পার্টি না। পার্টি হলে রিয়া বলতো। হাত ধর শুভ্ৰ। আমার হাত ধরে বিছানা থেকে নাম।
শুভ্ৰ মার হাত ধরে বিছানা থেকে নামল।
রিয়াদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে ঢুকে শুভ্রের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। এত আলো চারদিকে ঝলমল করছে। শুধু যে আলো তাই না, খুব হৈচৈও হচ্ছে। ড্রয়িং রুমটা অনেক বড়, তারপরেও মনে হচ্ছে লোকজন গিজ গিজ করছে। উঁচু ভলুমে সিডি বাজছে। যতক্ষণ জেগে থাকে ততক্ষণই সিডি প্লেয়ার বাজতে থাকে।