জহির মীনার স্বামীর নাম মনে করার চেষ্টা করছে। নামটা মনে পড়ছে না। দন্ত স দিয়ে নাম। সালাম না তো? সামছু কি? সাবের? স্বাধীন? সেলিম?
ছোট বোনের স্বামীর নাম ভুলে যাওয়া অপরাধের মধ্যে পড়ে। ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ধারাও হয়তো আছে।
দন্ডবিধি এত : অপরাধ ছোট বোনের স্বামীর নাম বিস্মরণ।
শাস্তি : ৫০০ টাকা জরিমানা এবং দুই দিনের কারাবাস।
জহির আশায় আশায় আছে কোনো এক ফাঁকে নামটা মনে আসবে তখন সেই নামে ডাকা যাবে। নাম মনে আসছে না। মীনা তাকে ডাকে টিয়া। এই টিয়া কী করছ? বাবুকে ধর। এই টিয়া জানালার পর্দা টেনে দাও।
জহির বলেছিল, টিয়া টিয়া করছিস কেন? ওর নাম কি টিয়া?
মীনা উত্তরে বলল (অভিমানি গলা) ভাইয়া এটা আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। ও আমাকে ময়নাপাখি ডাকে। আমি উত্তরে টিয়াপাখি ডাকি।
জহির বলল, ও তোকে ময়না ডাকতে পারে তোর গায়ের রঙ কালো। তুই ওকে টিয়া ডাকবি কে? ওর গায়ের রঙ তো সবুজ না। তুই মর্ডান মেয়েদের। মতো স্বামীর নাম ধরে ডাকবি। দেখি আমার সামনে স্বামীকে একবার নাম ধরে ডাক।
মীনা রাগী গলায় বলল, ওকে সারাজীবন আমি টিয়া ছাড়া কিছু ডাকব না। আরেকটা কথা ভাইয়া তুমি চট করে বলে ফেললে আমার গায়ের রঙ কালো। আমি যদি কালো হই তাহলে ফর্সা কে? তুমিও তো একদিন বিয়ে করবে। দেখব তোমার বউয়ের গায়ের রঙ কি হয়।
জহির বলল, তুই কি কেঁদে ফেলবি না-কি?
তুমি উল্টা-পাল্টা কথা বলবে আমি কাঁদব না।
আপনি জহির।
জহির থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়াল। তাকে মনে মনে বলতেই হলো, কী। আশ্চর্য এই মেয়ে কে? যে পুরুষ প্রথম দর্শনেই এই মেয়ের প্রেমে পড়বে না, সে পুরুষই না।
ফরিদ সাহেব আমাকে আপনার সমস্যার কথা বলেছেন। এখানে ত্রিশ হাজার টাকা আছে।
জহির পকেট হাতড়ে চেকটা বের করে এগিয়ে দিল।
মৃন্ময়ী বলল, কি?
ত্রিশ হাজার টাকার চেকটা।
আমাকে চেক দিচ্ছেন কেন? আমি কি ব্যাংক?
ম্যাডাম সরি।
চেক ভাঙ্গিয়ে টাকা ফেরত দিলেই হবে।
কতটুকু উপকার যে আপনি আমার করেছেন সেটা আপনি বুঝতেও পারবেন। থ্যাংক য়্যু।
মৃনারী তাকিয়ে আছে। তার ঠোঁটে চাপা হাসি।
জহির বলল, ম্যাডাম আমি কাল সকালেই আপনার হাতে টাকাটা দিয়ে যাব।
মৃন্ময়ী বলল, আমার হাতেই দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ম্যানেজারকে দিলেই চলবে।
জহির বলল, আমি যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তার কাছেই দিতে চাই। আপনাকে আরেকবার থ্যাংক য়্যু।
ফরিদ জহিরকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এল। গেটের কাছে এসে বলল, আপনাকে বলেছিলাম না? বিশ্বসুন্দরী। ভুল বলেছি?
জহির বলল, ভুল বলেন নাই।
ফরিদ বলল, অতিরিক্ত সুন্দরী হওয়া ঠিক না।
জহির বলল, ঠিক না কেন?
সারাক্ষণ মানুষে চোখে লাগায় নানান অসুখ-বিসুখ হয়।
উনার কি প্রায়ই অসুখ-বিসুখ হয়?
তা অবশ্য না।
জহির বলল, ভাই আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। আপনি আমার বিরাট উপকার করেছেন। যদি কোনোদিন আমি আপনার কোনো উপকার করতে পারি আমাকে বলবেন। আর আপনার দাওয়াত। একদিন আমার বাড়িতে আসবেন। ডাল-ভাত খাবেন। আপনি কি এই বাড়িতেই থাকেন না আলাদা থাকেন?
এই বাড়িতেই থাকি। স্যারের সঙ্গে থাকি। স্যার যে ঘরে ঘুমান আমি তাঁর পাশের ঘরে ঘুমাই। উনার কখন কি প্রয়োজন হয়। উনার বোবায়-ধরা রোগ আছে। বোবায় ধরলে আমাকে দৌড়ে যেতে হয়। ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙাতে হয়।
উনার স্ত্রী উনার সঙ্গে ঘুমান না?
জি না। উনার স্ত্রীর নানান অসুখ-বিসুখ আছে। উনি আলাদা ঘুমান।
জহির বলল, আপনার কি সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আছে?
ফরিদ বলল, অভ্যাস নাই। তবে দিন একটা খাই।
জহির তাকিয়ে আছে, ফরিদ চিন্তিত মুখে সিগারেট টানছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়।
জহির বলল, কিছু বলবেন?
ফরিদ থতমত খেয়ে বলল, জি না! জি না! কিছু বলব না।
জহির ঘরে ফিরল বিকাল চারটায়। বেল দিতেই মীনা দরজা খুলল। গম্ভীর গলায় বলল, ভাইয়া ব্যাপারটা কী বল তো? তোমার কাছে বেড়াতে এসে আমরা কি কোনো পাপ করেছি?
পাপ করবি কেন?
কোনো খাবারের ব্যবস্থা নাই, কিছু না।
দুপুরে খাস নি।
কী খাব বল? টিয়া আবার ক্ষিধা সহ্য করতে পারে না। সে দুটা বার্গার কিনে এনেছে। দুজনে দুটা বার্গার খেলাম। টিয়া দুপুরে ভাত ছাড়া কিছু খায় না। ভাতের সঙ্গে তিন চারপদ তরকারি লাগে।
সরি! বিরাট একটা ঝামেলায় আটকা পড়েছিলাম। এক কাজ করি তেহারি নিয়ে আসি। তেহারি খাবি?
কিছু একটা আন। আমার মেয়ের জিনিস আনা হয়েছে?
শুধু দুধ এনেছি আর কালোজাম এনেছি।
বাকিগুলো আন নাই কেন?
নিয়ে আসব। নো প্রবলেম। এক গাদা রঙ কিনেছি। রাতে তোর মেয়ের ছবি এঁকে দিব।
মীনা বলল, শুধু ছবি দিয়ে পার পাবার চেষ্টা করবে না ভাইয়া। সোনার কিছু দিতে হবে। না হলে শ্বশুর বাড়িতে আমার মুখ থাকবে না। সবাই জিজ্ঞেস করবে মেয়ের একটা মাত্র মামা, সেই মামা কী দিলো?
জহির বলল, ঠিক আছে। ঠিক আছে।
মীনা বলল, তুমি টিয়ার হাতে কিছু টাকা দিয়ে রেখো। তোমার বাসায় বেড়াতে এসে সে নিজের টাকা খরচ করবে কেন? তুমি সম্বন্ধি না?
ও নিজের টাকা কখন খরচ করল?
বার্গার কিনে আনল না। টুনটুনিকে রোজ দুটা করে ডিমের কুসুম খাওয়াই। তাকে দিয়ে ডিম কিনালাম। তোমার ঘরে তো ডিমও নেই।
ঠিক আছে কিছু টাকা ধরিয়ে দেব।
তোমার দেখি মুখ শুকিয়ে গেল। তুমি এত কৃপণ হয়ে গেলে কীভাবে? শুধু তেহারী আনবে না ভাইয়া। তেহারীর সঙ্গে আলাদা মাংস আনবে।