পারব।
তা হলে বল। ত্রিশ সেকেন্ড সময়।
মনে করতে সময় লাগবে না?
মৃন্ময়ীর ঘরের দরজায় টোকা পড়ল। শাহেদুর রহমান সাহেবের অ্যাসিসটেন্ট ফরিদ হোসেন চাপা গলায় বলল, আপা আমি ফরিদ।
মৃন্ময়ী বলল, ফরিদ আপনি কী চান?
বড় সাহেব আমাকে পাঠিয়েছেন।
সেটা তো বুঝতেই পারছি। কীজন্যে পাঠিয়েছেন?
আপনার বান্ধবী ছন্দাকে তিনি দেখা করতে বলেছেন। তাকে কী-একটা ছবি দেখাবেন।
মৃন্ময়ী বলল, একটু দেরি হবে, আমরা গল্প করছি।
ছন্দা বলল, দেরি হবে না। আমি এখুনি যাচ্ছি। তুই এর মধ্যে ঘর গুছিয়ে নে। নোংরা ঘরে বসতে পারব না।
মৃন্ময়ী বিছানায় শুয়ে পড়ল। ছন্দা সহজে ছাড়া পাবে না। শুয়ে শুয়ে থার্মোড়িনামিক্সের চ্যাপ্টারটার উপর চোখ বুলানো যায়। এনট্রপির সঙ্গে কাওমের বিষয়টা মাথায় নিয়ে নেয়া। ইচ্ছা করছে না। তারচে বরং জর্জিয়ান চেন্ট কিছুক্ষণ শুনা যায়। শিয়ালের হুক্কা হুয়া।
ছন্দা শাহেদুর রহমানের সামনে বেতের চেয়ারে বসে আছে। সে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে! শাহেদুর রহমানের হাতে দেড় ফুট বাই দেড় ফুট একটা ওয়াটার কালার। ছবিতে দেখা যাচ্ছে পুকুরঘাটে পানিতে পা ড়ুবিয়ে একটি কিশোরী মেয়ে বসে আছে।
শাহেদুর রহমান বললেন, ছবিটা কেমন মা?
ছন্দা বলল, অসাধারণ।
ছবিটা দেখে যামিনি রায়ের কথা মনে হয় না?
যামিনী রায়ের নাম ছন্দা শুনে নি তারপরেও সে বলল, হুঁ হয়।
সেই তুলির টান, সেই রং এর ব্যবহার। ঠিক না?
জি।
পানিতে মেয়েটার যে রিফ্লেকশন সেদিকে তাকাও। আলো-ছায়ার খেলাটা দেখ। অপূর্ব না?
ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে পুরানো ঘাটের শ্যাওলার গন্ধ পর্যন্ত পাবে।
ছবিটা কার আঁকা?
নাম করা কেউ না। জহির নাম। ইয়াং ছেলে। আমি এক্সিবিশন থেকে কিনেছি। ওর আঁকা একটা ছবিই ছিল। আরও থাকলে অরিও কিনতাম।
কত দিয়ে কিনেছেন?
দশ হাজার টাকা।
কী আশ্চর্য এত টাকা!
শাহেদুর রহমান বললেন, মারে! ছবির বাজারে দশ হাজার টাকা কোনো টাকাই না। এস এম সুলতানের ওয়াটার কালার দুই লাখ টাকার নিচে পাবে না। জয়নুলের উডকাট কয়েক দিন আগে কিনেছি তিন লাখ পচাত্তুর হাজার টাকায়।
কী বলেন চাচা!
শাহেদুর রহমান আনন্দের হাসি হাসলেন।
ছন্দা বলল, চাচা আপনি নিজে ছবি আঁকা ধরেন তো অন্যের ছবি কেন কিনবেন। নিজে এঁকে যারে সাজিয়ে রাখবেন। দু-একটা ছবি আমরাও উপহার হিসেবে পবি।
শাহেদুর রহমানের আনন্দ আরো বাড়ল। এই মেয়েটা তার মনের কথা বলেছে। তিনি অনেক দিন থেকেই ভাবছেন ছবি আঁকা শিখবেন। ক্রিয়েটিভ কাজে বয়স কোনো ফ্যাক্টর না। Even a old dog can lear few new tricks, বৃদ্ধ কুকুরও কয়েকটা নতুন খেলা শিখতে পারে। জহির ছেলেটার ঠিকানা জোগাড় করা হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন সে যদি আসে মন্দ কি?
ছন্দা বলল, চাচা আমি যাই। মৃন্ময়ী অপেক্ষা করছে।
শাহেদুর রহমান বললেন, পাঁচটা মিনিট বোস। আমার সঙ্গে চা খাও। ফরিদকে চা দিতে বলি। চা খেতে খেতে আরো কিছু ছবি দেখ। শুধুমাত্র একটা রঙ দিয়ে আঁকা ছবির নমুনা দেখাব। আর্টিস্ট লেমন ইয়োলোর নানান শেড ব্যবহার করে কী জিনিশ যে তৈরি করেছেন! ছবি দেখলে মনে হয় সাত রঙের খেলা। আসলে একটা সাত রঙ লেমন ইয়েলো।
মৃন্ময়ী শেয়ালের ডাক শুনেই যাচ্ছে। বিন্তি অতি দ্রুত ঘর গুছিয়ে ফেলেছে। মেঝেতে কফির দাগ বসে গেছে। সে এখন দাগ উঠানোর জন্যে ভিক্সল দিয়ে মেঝে ঘসছে।
মুন্ময়ী সিডি বন্ধ করে হাতের ইশারায় বিন্তিকে ডাকল। বিন্তুি অবাক হয়ে কাছে এগিয়ে এল। ঘরে সে ছাড়া দ্বিতীয় ব্যক্তি নেই। তাকে কিছু বলতে হলে হাতে ইশারা করে কাছে ডাকতে হবে না।
আমার বান্ধবী ছন্দাকে তোমার কেমন লাগল?
বিন্তি বলল, ভালো।
ও দেখতে কেমন?
খুব সুন্দর।
আমার মতো
মৃন্ময়ী বলল, দশের মধ্যে নাম্বার দাও। দশে আমাকে কত দেবে আর ছন্দাকে কত দেবে।
বিন্তি চুপ করে আছে। কি বলবে সে? আপার যত অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন।
মৃন্ময়ী বলল, ঝিম ধরে থাকবে না উত্তর দাও।
বিন্তি বলল, আপনি দশে নয় আর ঐ আপা সাত।
মৃন্ময়ী বলল, আমি দশে দশ না কী না? আমি এক পয়েন্ট কম কেন পেয়েছি? তুমি কি দশে দশ কোনো মেয়ে এর আগে দেখেছ?
জি না।
তাহলে তোমার স্ট্যান্ডার্ডটা কী? পয়েন্ট দিতে হলে একটা স্ট্যান্ডার্ড লাগে।
হুট করে পয়েন্ট দেয়া যায় না।
মৃন্ময়ী নাকে হাত দিয়ে নাকফুল খুলছে। নাকফুলটা হীরার। ওয়ান ফোর্থ ক্যারেট। শাহেদুর রহমান স্পেন থেকে তার মেয়ের জন্যে কিনে এনেছিলেন।
বিন্তি আমার এই নাকফুলটা তুমি বাথরুমের বেসিনে সোপকেসের পাশে রেখে আস। এমনভাবে রাখবে যেন হাত-মুখ ধুতে গেলেই চোখে পড়ে। আমার বান্ধবী ছন্দা চোর স্বভাবের মেয়ে। আমি দেখতে চাই সে নাকফুলটা চুরি করে কি-না। হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে না। আমি হা করে তাকিয়ে থাকার মতো কোনো কথা বলিনি।
বিন্তি নাকফুল নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। মৃন্ময়ী আবারও শিয়ালসংগীত চালু করল।
কথা ছিল ছন্দা দুপুর পর্যন্ত থাকবে। দুপুরে রূপচান্দা শুঁটকি দিয়ে ভাত খাবে। হঠাৎ সে মত বদলালো। দুপুরে খাবে না। অনেক পড়া বাকি। বাসায় চলে যাবে।
ছন্দা বলল, তোদের গাড়ি কি আমাকে একটু নামিয়ে দিতে পারবে?
মৃন্ময়ী বলল, অবশ্যই পারবে।
তাহলে দেখা হবে পরীক্ষার হলে।
ছন্দা চলে যাবার পরেই মৃন্ময়ী বলল, বিন্তি দেখ তো বাথরুমে আমার নাক ফুলটা আছে কি-না।