ভাইয়া আমি এই চিঠিটা আমার বিছানার পাশে রেখে যাব। চিঠিতে অনেক বানান ভুল হয়েছে। তুমি কিছু মনে করো না। টুনটুনিকে কখনও তার বাবার মিথ্যা মামলার বিষয়ে কিছু বলবে না। সে হয়ত ভেবে বসবে সত্যি। মনে কষ্ট পাবে। তাকে তার বাবার বিষয়ে ভালো ভালো কথা বলবে। যেমন একবার টুনটুনির রক্ত-আমাশা হয়েছিল, তার বাবা সারারাত তাকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাটি করেছে। দু-একটা ভালো ভালো কথা বানিয়ে বানিয়েও বলবে। তুমি তো আবার মিথ্যা কথা বলতে পার না। টুনটুনির মুখের দিকে তাকিয়ে দু-একটা মিথ্যা যদি বল তাতে পাপ হবে না।
টুনটুনিকে তোমার কাছে রেখে যেতে আমার মোটেও খারাপ লাগছে না। কারণ আমি জানি সে খুবই যত্নে বড় হবে। বাবা মারা যাবার পর তুমিই তো আমাকে বড় করেছ। কোনোদিন আমার অযত্ন হতে দাও নি।
ভাইয়া ভালো ছেলে দেখে টুনটুনির বিয়ে দিও। বিয়ের অনুষ্ঠান অবশ্যই ভিডিও করাবে। আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠান ভিডিও করার চল উঠে গেছে। আমার মেয়ের বেলায় যেন এ রকম না হয়। ভাইয়া আরেকটা অনুরোধ— বিয়ের দিন সুন্দর একটা শাড়ি কিনে পুরানো ময়লা একটা প্যাকেট করবে।
প্যাকেটর উপর কাউকে দিয়ে লেখাবে—
আমার মা টুনটুনিকে
তার বাবা
সবুজ
এবং টুনটুনিকে বলবে এটা তার বাবা রেখে গিয়েছিলেন।
ইতি
মীনা
চিঠি শেষ করে মীনা ঝামে বন্ধ করল। ঘুমের ওষুধগুলি খেল। জহিরের পেছনে এসে দাঁড়াল। জহির বলল, পেছন থেকে সরে দাঁড়া। আলো আটকাচ্ছিস।
মীনা বলল, ভাইয়া আমার শরীরটা খারাপ লাগছে আমি কিছুক্ষণ শুয়ে থাকব।
জহির জবাব দিল না। মীনার খুব ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে আদর করে। সে ইচ্ছাটা প্রশ্রয় দিল না। আগ্রহ নিয়ে সে মামার ছবি আঁকা দেখছে দেখুক। কে জানে বড় হয়ে হয়ত সেও মামার মতো ছবি আঁকবে।
মীনা বলল, ভাইয়া টুনটুনিকে নিয়ে মাঝে মাঝে আলিমুর রহমান সাহেবের খামারবাড়িতে বেড়াতে যাবে। জায়গাটা তার খুব পছন্দ।
জহির বিরক্ত হয়ে বলল, তুই করিণ ছাড়া এত কথা বলিস কেন?
মীনা চোখ মুছতে মুছতে বলল, আর বলব না ভাইয়া।
জহির বলল, চোখে পানি চলে এসেছে? চোখে পানি আসার মতো কিছু বলেছি? সামনে থেকে যা।
মীনা ঘুমুতে গেল।
সন্ধ্যা মিলাবার আগে পর্যন্ত জহির জানতেও পারল না মীনা মারা গেছে।
আজ টুনটুনির বিয়ে।
তার মামা সকাল থেকেই কাঁদছেন। মামার জন্যে টুনটুনির খুবই মায়া লাগছে। বিয়ে হচ্ছে বলে তো টুনটুনি জন্মের মতো চলে যাচ্ছে না। মামা যখন তাকে ডাকবেন তখনই সে ছুটে আসবে।
বিয়েতে বিপুল আয়োজন করা হয়েছে। ছাদে সানাই বাজানোর আয়োজন করা হয়েছে। সানাই বাদকরা এসেছেন কোলকাতা থেকে। সানাই-এর ব্যবস্থা করেছেন টুনটুনির এক আর্টিস্ট চাচু। তার নাম ফজলু।
টুনটুনির যে কজন বান্ধবী বিয়ে উপলক্ষ্যে এসেছে তাদের প্রত্যেককে টুনটুনির মামী মৃন্ময়ী একটা করে হীরের নাকফুল দিয়েছেন। বান্ধবীরা সবাই হতভম্ব।
টুনটুনি জহিরের হাত ধরে বলল, মামা ছাদে গিয়ে বোস। সানাই বাজনা শুরু হবে। তুমি যাচ্ছ না বলে শুরু হচ্ছে না।
জহির বলল, তোরা যা, আমি যাব না।
টুনটুনি বলল, মামী একা ছাদে বসে আছে। তুমি পাশে নেই বলে তার মন ভালো নেই।
সানাই বেজে উঠেছে। রাগ ভীমপলশ্রী।