তাহলে বরং দই রাখুন। রিচ ফুড খাওয়ার পর দই খেতে ভালো লাগে।
মা শোন, তুমিও চলে আস। রাতে ছন্দার সঙ্গে বসে খাবে।
মৃন্ময়ী বলল, অবশ্যই আসব। চাচা আমি কি সঙ্গে করে দু-একটা আইটেম নিয়ে আসতে পারি? যদি অনুমতি দেন।
ইয়াকুব আলি ছন্দার এই বান্ধবীর ভদ্রতায় মুগ্ধ হলেন। আজ-কালকার মেয়েদের ভেতর থেকে এ ধরনের ভদ্রতা উঠেই গেছে।
ছন্দা নিজের ঘরে বসে আছে। একটু আগে বাথরুমে ঢুকে কিছুক্ষণ কেঁদেছে। চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে গেছে। আবার কাজল দিবে। মুখে হালকা পাউডার দিতে হবে। বাবার কথামতো ঠোঁটে লিপস্টিক। পেত্নী সাজা যাবে না। আবার রাজকন্যাও সাজা যাবে না।
বরের দুই মামার আগমন উপলক্ষে ছন্দার বোনরা চলে এসেছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। ইয়াকুব আলি স্ত্রীর উপর যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন। খবর দিয়ে দুনিয়ার মানুষ আনার দরকার কি! এরা সবাই খেয়ে যাবে। সেই আয়োজন কি আছে। না-কি সেই আয়োজন করা সম্ভব? একটা মুরগির কোরনা। খাসির মাংস এক কেজি। পোলাওয়ের চাল অবশ্যি বেশি এনেছেন। পোলাও রান্না করা যাবে। পোলাও খাবে কী দিয়ে? আলু ভর্তা দিয়ে?
ছন্দার বড় বোনের নাম শিউলী। বিয়ের আগে রোগা-পাতলা ছিল। এখন প্রতিদিন প্রস্থ বাড়ছে। সে ছন্দার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। গলা খাদে নামিয়ে বলল, এই তোর সঙ্গে যে ছেলের বিয়ে হচ্ছে তার না-কি আগে একটা বউ ছিল?
ছন্দা চমকে উঠে বলল, জানি না তো। কে বলেছে?
তোর দুলাভাই বলল, সে বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল।
ছন্দা বলল, বাবা কী বললেন?
বাবা হ্যাঁ-না কিছুই বলেন নি। চুপ করে ছিলেন। বাবা ঐ ছেলের মধ্যে কি দেখেছেন কে জানে। কুস্তগিরের মতো ছেলে।
ছন্দা বলল, বাবা মেয়ে পার করতে চাচ্ছেন। আর কিছু না।
শিউলী বলল, ইউনিভার্সিটিতে এত ছেলে, একজনকে খুঁজে বের করতে পারলি না, যাকে বিয়ে করা যায়?
ছন্দার চোখে আবার পানি এসে গেছে।
হইচই শুনা যাচ্ছে। দুই মামা এসেছে। মামার সঙ্গে ছেলেও এসেছে। ছেলের এক বন্ধুও সঙ্গে আছে। তার আসার কথা ছিল না। সঙ্গে মিষ্টির প্যাকেট আছে। মিষ্টির প্যাকেট ছাড়া আরও কি সব প্যাকেট দেখা যাচ্ছে।
দুই মামাই ছন্দার জন্যে শাড়ি এনেছেন। দুটা শাড়িই ভালো। একটা রাজশাহী সিল্ক আরেকটা জামদানী। বড় মামা ছন্দার হাতে আংটি পরিয়ে দিতে দিতে বিড় বিড় করে অনেক কথাই বললেন। কোনো কথা হুন্দার কানে ঢুকল না। তার ইচ্ছা করছে দাঁত দিয়ে কেটে শাড়ি দুটা ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে।
ইয়াকুব আলি তার ইজিচেয়ারে হতাশ হয়ে শুয়ে আছেন। বাবুলকে আরেকটা মুরগি এবং খাসির মাংস আনতে পাঠানো হয়েছে। এতেও হবে কি-না কে জানে।
অতিথিদের খাবার দেয়ার আগে আগে মৃন্ময়ী চলে এল। তার গাড়ি থেকে প্যাকেটের পর প্যাকেট খাবার নামছে। খাবার এসেছে হোটেল সোনারগাঁও থেকে। ইয়াকুব আলি একবার অবাক হয়ে মৃন্ময়ীকে দেখছেন একবার খাবার দেখছেন।
বরের বড় মামা ইয়াকুবকে বললেন, বেয়াই সাহেব!
এই মেয়ে কে? ইয়াকুব বললেন, ছন্দার বান্ধবী।
ঘনিষ্ট বান্ধবী।
ছন্দা মৃন্ময়ীকে দেখে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল। ছন্দা হাউমাউ করে কাঁদছে। মৃন্ময়ী বলল, কী সমস্যা বল দেখি?
ছন্দা সমস্যা বলছে না, কেঁদেই যাচ্ছে।
আলিমুর রহমান বড় একটা কাঠের চেয়ারে
আলিমুর রহমান বড় একটা কাঠের চেয়ারে পা তুলে জবুথবু ভঙ্গিতে বসে আছেন। তার পরনে শাদা রঙের হাফ-পাজামা হাফ প্যান্ট জাতীয় একটা জিনিস। খালি গা। চেয়ারটা নিমগাছের নিচে বসানো। তিনি নিমগাছের পাতা ভেদ করে আসা রোদ গায়ে মাখছেন। তিনি আগ্রহ নিয়ে তার সামনে দাঁড়ানো যুবকটির কাণ্ডকারখানা দেখছেন। যুবকটি তাঁর পোট্রেট আঁকছে।
বেশ বড়-সড় একটা ইজেল তার সামনে। থালার মতো একটা বাটিতে রঙ। যুবকের হাতে ব্রাশ। সে দ্রুত বোর্ডে রঙ ঘষছে। আলিমুর রহমান বললেন, তোমার নাম কী?
যুবক তার দিকে না তাকিয়েই বলল, স্যার! আমার নাম জহির।
নামের আগে আহম্মদ, মুহম্মদ এইসব কিছু নাই?
জি না।
তুমি তো আমার দিকে তাকাচ্ছই না। না তাকিয়ে কি কাকের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং আঁকছু।
যুবক মুখ তুলে তাকাল। আবার রঙ লাগাতে লাগাতে বলল, মাঝে মাঝে আপনাকে দেখছি।
আমি যেভাবে বসেছি তাতে কি তোমার সমস্যা হচ্ছে?
জি না।
আমাকে দেখে মনে হচ্ছে না চেয়ারে একটা শাদা ব্যাঙ বসে আছে? সামনেই পুকুর। শাদা ব্যাঙটা এক্ষুনি লাফ দিয়ে পুকুরে পড়বে।
এ রকম মনে হচ্ছে না।
আমাকে বসে থাকতে দেখলে আমার নাতনীর এ রকম মনে হয়। মৃন্ময়ীর কথা বলছি।
জি বুঝতে পারছি।
এতক্ষণ কী আঁকলে আমাকে দেখাও।
যুবক বোর্ড উল্টে দেখাল। গাঢ় হলুদ রঙ। লম্বা লম্বা রঙের কিছু টান। আলিমুর রহমান বললেন, এই সব কী?
স্যার রঙ। ইয়োলো ওকার।
আমার ছবি কোথায়?
ছবি আসবে। প্রথমে রঙ আনছি।
ঠিক আছে আঁকতে থাক। মাঝে মাঝে আমাকে দেখাবে।
জি স্যার। দেখাব। আপনি যখনই বলবেন তখনই দেখাব। স্যার আমি কি একটা সিগারেট খেতে পারি?
আলিমুর রহমান বললেন, না। আমি তোমার বাপের চেয়েও বেশি বয়সের একজন বৃদ্ধ। আমার সামনে সিগারেট কেন খাবে? তোমার কি ছবি আঁকার সময় সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস?
জি।
বদঅভ্যাস দূর কর। বাবা-মা আছেন?
জি না।
ভাই-বোন কী?
একটাই বোন।
বোনের বিয়ে হয়েছে?
জি।
বাচ্চা-কাচ্চা আছে?
একটা মেয়ে আছে।
আমি যে কথা বলছি তোমার ছবি আঁকতে অসুবিধা হচ্ছে?