জহির বলল, আজ উঠি। ফজলু বলল, কাল আসবি?
না। কাল, পরশু, তর এই তিনদিন আসব না। সাভারের এক খামার বাড়িতে যাব। টাকার কুমির এক বুড়োর পোট্রেট আঁকব।
বুড়োর গায়ের রঙ কি ফর্সা?
হুঁ।
তাহলে এক কাজ করিস ইয়েলো ওকার ব্যবহার করিস। ইয়োলো ওকারের সাথে সামান্য লাল রঙ দিবি। টাইটেরিয়াম হোয়াইট কিংবা জিংক অক্সাইড একেবারেই ব্যবহার করবি না। এক্সপেরিমেন্ট করে দেখ।
আচ্ছা।
জহির পকেট থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে ফজলুর বালিশের নিচে রাখতে গেল। ফজলু বলল, টাকা রাখিস না। চুরি হয়ে যাবে। গতকালই বালিশের নিচ থেকে একশ টাকা চুরি হয়েছে।
খালি হাতে থাকবি?
হুঁ। আসছি নেংটা, থাকব নেংটা, যাব নেংটা।
জহির বাসায় ফিরল রাত দশটায়। মীনা তার মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় একা বসে আছে। জহিরকে দেখে উঠে দাঁড়াল।
ভাইয়া ও ফিরে নাই।
জহির কিছু না বলে ঘরে ঢুকে গেল। মীনা তার পেছনে ঢুকল।
ভাইয়া এখন আমি কী করব?
কি আর করবি কান্না শুরু কর। মেয়েকে ঘুম থেকে তোল। সে কাঁদুক।
ভাইয়া তুমি পাষাণের চেয়েও খারাপ। সিমারের চেয়েও খারাপ। মীর জাফরের চেয়েও খারাপ।
জহির বলল, ভাত দে। আয় ভাত খাই।
মীনা ভাত বাড়ল। জহিরকে অবাক করে দিয়ে খেতেও বসল। জহির ভেবেছিল মীনা খাবে না। রাগ করে ভাত না খাওয়া তার ছোটবেলার অভ্যাস।
মীনা। জি ভাইয়া।
তোর টিয়া টাকা-পয়সা, সিগারেট, কাপড়-চোপড় তোকে না জানিয়ে নিয়ে চলে গেছে এটা ঠিক না, তোকে জানিয়েই গেছে। তুই তাকে দশ হাজার টাকার একটা বান্ডেল দিয়ে দিবি টিকিট কেনার জন্যে এটা কখনও হবে না। ঘটনা কি বলতে চাইলে বল। বলতে না চাইলে বলতে হবে না।
মীনা মাথা নিচু করে বলল, ও ইন্ডিয়া যাবে। পাসপোর্ট নাই তো। বর্ডার ক্রস করে যাবে। যে বর্ডার পার করাবে তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে।
জহির বলল, ইন্ডিয়া যাবে কেন?
মীনা বলল, পালিয়ে থাকার জন্য যাবে। দেশে সে একটা ঝামেলায় পড়েছে।
কী ঝামেলা?
মীনা ক্ষীণ গলায় বলল, ওদের কারখানার কেন্টিনে একটা বাজে টাইপের মেয়ে কাজ করতো। এই মেয়েটাকে নিয়ে কি সব হয়েছে। শত্রুতা করে টিয়ার নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। মূল আসামী তিনজন। টিয়া ঘটনার বিন্দু-বিসর্গও জানে না। সারারাত সে ছিল আমার সাথে। আমার জ্বর। বেচারা সারারাত আমার মাথায় জলপট্টি দিয়েছে।
জহির বলল, রেপ কেইস না-কি?
মীনা হ্যাঁ না কিছুই বলল না।
জহির বলল, মেয়েটা মারা গেছে না বেঁচে আছে।
মীনা বলল, মারা গেছে।
আসামী চারজনের মধ্যে কয়জন ধরা পড়েছে।
তিনজনই ধরা পড়েছে। টিয়াকে শুধু ধরতে পারে নি। কীভাবে ধরবে? আল্লাহ আছে না আমাদের দিকে?
কিছু না বলে জহির খাওয়া শেষ করে উঠল। মীনা বলল, ভাইয়া পানি খাও তোমার জন্য পান আনিয়ে রেখেছি।
জহির পান খেল। একটা সিগারেট ধরাল। মীনা তার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জহির বলল, তুই কি আরো কিছু বলবি?
মীনা বলল, তুমি কি আমাকে তোমার এখানে থাকতে দিবে?
জহির বলল, অবশ্যই। এখন যা, ঘুমাতে যা।
মীনা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ভাইয়া আমার মেয়েটা তোমাকে খুব ভয় পায়। তুমি ওর ভয়টা ভাঙ্গায়ে দিও। তোমার সঙ্গেই তো সে থাকবে। এত ভয় পেলে চলবে?
———————
* চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রাগে অনুষ্ঠিত বিশ্ব পেনসিল স্কেচ প্রতিযোগিতায় Unfinished শিরোনামে এই ছবিটি যৌথভাবে জাপানের ইতিমশোর আঁকা Lovely bamboo tree ছবির সঙ্গে স্বর্ণপদক পায়।
হ্যালো ছন্দা
হ্যালো ছন্দা।
হুঁ।
কেমন আছিস?
ভালো কে?
গলা চিনতে পারছিস না?
ও আচ্ছা মৃন্ময়ী! তুই একেক সময় একেক স্বরে কথা বলিস চিনব কীভাবে?
মোবাইলের যুগে গলা চিনতে হয় না। কে টেলিফোন করেছে এম্নিতেই টের পাওয়া যায়। তার নাম উঠে। নাম্বার উঠে।
খেয়াল করি নি।
ঠিকই খেয়াল করেছিস। মাঝখান থেকে একটা ঢং করলি।
বিশ্বাস কর। খেয়াল করি নি। গড প্রমিজ।
কথায় কথায় গড় নিয়ে আসিস কেন? উনাকে শান্তিতে থাকতে দিবি না। উনাকে মিথ্যা কথার সাক্ষীও হতে হবে?
মৃন্ময়ী কী বলতে চাস বলে ফেল।
তোর পোট্রেট করা হবে।
কী করা হবে?
পোট্রেট। একজন আর্টিস্ট প্রতিদিন তোর বাসায় যাবেন। তুই এক ঘণ্টা করে সিটিং দিবি। তোর একটা পোট্রেট হবে। আমার একটা হবে। এই দুইটা ছবি আমি আমার ঘরে টানিয়ে রাখব। রোববার পরীক্ষা শেষ হচ্ছে। সোমবার থেকে আর্টিস্ট যাবে।
ছন্দা বলল, কোনো আর্টিস্ট আমার বাসায় আসবে, আমি সিটিং দেব, এটা কখনও হবে না। বাবা আমাকে বাসা থেকে বের করে নেবেন।
কেন?
মৃন্ময়ী তুই একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছিস, আমি লোয়ার-মিডিল ক্লাসের মেয়ে। আমাদের বাসার ধ্যান-ধারণও লোয়ার-মিডিল ক্লাস টাইপ।
লোয়ার-মিডিল ক্লাসের ধ্যান-ধারণা কী?
এরা সব কিছু সন্দেহের চোখে দেখে। সন্দেহ এবং অবিশ্বাস। আর্টিস্ট বাসায় এসে ঢুকলেই বাবা ভাববেন প্রেমের কোনো ব্যাপার। তার মুখ গম্ভীর হয়ে যাবে।
তাহলে তুই এক কাজ কর, আমার বাড়িতে সিটিং দে।
তোর নতুন পাগলামীর মানে কী?
মানে হচ্ছে একজন বিখ্যাত আটিস্টকে দিয়ে তার ছবি আঁকানো।
বিখ্যাত না কি!
অবশ্যই বিখ্যাত।
ম্যারিড?
মৃন্ময়ী বলল, ম্যারিড না আনম্যারিড এটা জেনে কী হবে? তুই তো তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিস না।
ছন্দা বলল, এমি জিজ্ঞেস করলাম।
তোর বাবা যে তোকে কোথায় বিয়ে দেবার চেষ্টা করছে তার কী হলো?
জানি না। মৃন্ময়ী আমি এখন রাখি, পরে টেলিফোন করব। একটু আগে বাবা সামনে দিয়ে গিয়েছেন। বেশিক্ষণ টেলিফোনে কথা বলতে দেখলে তিনি রেগে যান।