হঠাৎ চিন্তাটা করলি কেন?
তোমাকে একা একা বসে থাকতে দেখে মায়া লাগল। তখনই ঠিক করলাম রাতে থাকব। তোমার সঙ্গে গল্প করব।
গল্প করলে পড়বি কখন?
এক রাত না পড়লেও হবে।
বইখাতা আনতে লোক পাঠাতে হবে না?
না।
মৃন্ময়ী পাটিতে বসেছে। সে দাদাজানের দিকে তাকিয়ে বলল, পাটিতে এসে বসো। আমি তোমার পিঠ ডলে দিব।
আলিমুর রহমান পাঠিতে উঠে এলেন। এখন তার মেজাজ সর্বোচ্চ ভালো স্তরে।
নিম চিকিৎসা চলছে দাদাজান?
হুঁ।
আজকে ফোর্থ ডে না?
হ্যাঁ।
আলিমুর রহমান খুবই অবাক হলেন মেয়েটা মনে রেখেছে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা তো কোনো কিছুই মনে রাখে না। তিনি মৃন্ময়ীকে একবার শুধু টেলিফোনে বলেছিলেন শুক্রবার থেকে নিম চিকিৎসা।
আলিমুর রহমান বললেন, গাধাটা আছে কেমন?
বাবার কথা বলছ?
গাধা তো ঐ একটাই।
বাবা ভালো আছে।
গাধার স্ত্রী আছে কেমন?
মাও ভালো।
এখনও ঘর অন্ধকার করে বসে থাকে?
হুঁ। দাদাজান তোমার ম্যানেজারকে তেল আনতে বল। তোমার পিঠে তেল দিয়ে দেব।
বাদ দে।
বাদ দেব কেন? ম্যানেজারকে ডাক। আমি কফি খাব। কফির নতুন কৌটা কিনেছ, নাকি ছাতা-পড়া ঐটাই আছে।
আলিমুর রহমান তৃপ্তির সঙ্গে বললেন, তুই যা-ই চাবি তা-ই পাবি। প্রয়োজনে কফির বাগান কিনব। তবে তোর গাধা-বাবাকে একটা শিক্ষা আমি দিব। কঠিন শিক্ষা। বাবাজী টাইপ শিক্ষা।
সেটা কেমন?
শিক্ষা শেষ হলে শুধু বাবাজী বাবাজী করবে। এর নাম বাবাজী শিক্ষা।
বাবা কি নতুন কিছু করেছে?
আমার কাছে নোট পাঠিয়েছে। ইংরেজি নোট তার নাকি কিছু টাকার প্রয়োজন।
তুমি কি করেছ, টাকা পাঠিয়েছ?
আমি নোটের জবাবে নোট দিয়েছি। চিঠিপত্র চালাচালি হচ্ছে। কি লিখেছি তোকে পড়ে শুনাই। ম্যানেজার গাধাটা আবার গেল কোথায়?
দাদাজান তুমি কি সবাইকে গাধা ডাক নাকি?
সবাইকে ডাকি না। তোর বাবাকে ডাকি আর ম্যানেজারটাকে ডাকি। দুজনই একই লেভেলের গাধা। এক্সপোর্ট কোয়ালিটি। দেশে রাখার জিনিস না। বিদেশে পাঠিয়ে দেবার জিনিস।
মৃন্ময়ী কফি খাচ্ছে। তার মুখ হাসি হাসি। আলিমুর রহমান নাতনীকে চিঠি পড়ে শুনাচ্ছেন।
শাহেদুর রহমান
১১৫ বারিধারা
বিষয় : ১৬–৭–২০০৫ এ প্রেরিত ইংরেজিনোটের জবাবে
গাধা পুত্র
তোমার ইংরেজি পত্র পাইয়াছি। পত্রের জবাব এই যে তোমাকে আর কিছুই দেওয়া হইবে না। দশ টাকার ছেঁড়া স্কচ টেপ লাগানো নোটও না। তুমি যে চারতলা বাড়িতে বাস করিতেছ সেই বাড়ি আমার নামে। এক মাসের ভিতর তুমি বাড়ি খালি করিয়া দিবে। তোমার মতো অপদার্থ ষাড়ের গোবরকে টাকা নামক অক্সিজেন সাপ্লাই করিবার কোনো প্রয়োজন আমি বোধ করিতেছি না। আমি বাংলাদেশ অক্সিজেন লিমিটেড কোম্পানী না। তুমি গর্ধব কুলেরও কলঙ্ক।
ইতি
তোমার পিতা
আলিমুর রহমান
চিঠি শেষ করে আলিমুর রহমান বললেন, মুসাবিদা কেমন দেখলি?
মৃন্ময়ী বলল, সত্যিই এই চিঠি পাঠিয়েছ?
আলিমুর রহমান বললেন, অবশ্যই। প্রথম চিঠির পর দ্বিতীয় চিঠি গেছে, তৃতীয় চিঠি গেছে।
দেখি দ্বিতীয় তৃতীয়তে কী লিখেছ?
ঐ চিঠিগুলোতে শুধুই গালাগালি। মুখে গালি দিতে পারছি না বলে চিঠিতে গালি। গালাগালি পড়তে পারব না। তুই পড়ে নে।
মৃন্ময়ীর মুখভর্তি হাসি। সে আগ্রহ নিয়ে চিঠি পড়ছে। আলিমুর রহমান নাতনীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। চিঠি পড়তে পড়তে একেকবার এই মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠছে। কী সুন্দর দৃশ্য! আলিমুর রহমানের মনে হলো আরো কয়েকটা চিঠি থাকলে ভালো হতো।
(দ্বিতীয় চিঠি)
গাধপুত্র
অক্সিজেনের অভাব বোধ করিতেছ? শুধু অক্সিজেন বন্ধ করিয়া তোমাকে শায়েস্তা করা যাইবে না। তোমার নাক দিয়া কার্বনডাই-অক্সাইড ঢুকাইতে হইবে। তবে যদি তুমি শায়েস্তা হও।
ইতি
তোমার পিতা
শায়েস্তা খান
(আলিমুর রহমান)
(তৃতীয় চিঠি)
শাহেদুর রহমান
বারিধারা
বিষয়: তোমার অবস্থান বিষয়ক!
তুই গাধা। তুই গাধা? তুই গাধা। তুই গাধা। তুই গাধা। তুই গাধা। তুই গাধা! তুই গাধা। তুই গাধা? তুই গাধা। তুই গাধা। তুই গাধা।
ইতি
তোমার পিতা
শায়েস্তা খান
(তোমাকে শায়েস্তা করা হইবে)
মৃন্ময়ী বলল, তোমার চিঠি পড়ে খুবই মজা পেয়েছি। তবে এই চিঠিতে কাজ হবে না। বাবাও চিঠি পড়ে মজা পাবে। শায়েস্তা হবে না।
আলিমুর রহমান বলবেন, আমার মাথায় আরো প্ল্যান আছে। চিন্তা করছি। তোমার বাবা নাকি এখন ছবি আঁকা ধরেছে?
হুঁ। তার একজন টিচার আছে। জহির নাম। সপ্তাহে তিন দিন এসে ছবি আঁকা শিখাবে।
তোর বাবা তাহলে পিকাসো হয়ে যাচ্ছে? মহান বাংলাদেশি পিকাসো। পিকাসোর মাথায় তো চুল ছিল না। নাপিত ডেকে তোর বাবার মাথাটা কামিয়ে দে না।
দাদাজান বাবা প্রসঙ্গ বাদ থাকুক। আমি বাবাকে নিয়ে তোমার সঙ্গে আলাপ করতে আসি নি। তোমার সঙ্গে গল্প করতে এসেছি।
দুপুরে কী খাবি?
তুমি যা খাওয়াবে তা-ই খাব।
পুকুর থেকে নিজের হাতে মাছ ধরে দেই?
দাও।
আলিমুর রহমানের পুকুর পুরানো জমিদার বাড়ির পুকুরের মতোই বিশাল।
তিন ঘাটের পুকুর। বরশি ফেলার জন্যে আলাদা মাচা করা আছে। মাথার উপর খড়ের চালা, যেন মাছ মারার সময় মাথায় রোদ না লাগে।
বিপুল আয়োজনে আলিমুর রহমান মাছ মারতে বসেছেন। পাশেই পাটি পেতে শুয়ে আছে মৃন্ময়ী। মৃন্ময়ীর হাতে একটা বই। বইটার নাম The Chariots of Hone. সায়েন্স ফিকশান।
মৃন্ময়ীর প্রচুর গল্পের বই, গানের সিডি, ছবির ভিসিডি, দাদাজানের খামার বাড়িতে রাখা।