যদি পাই আনব। টিয়া বাবু কোথায়?
ঘুমাচ্ছে। ভাইয়া শোন, তুমি টিয়াবাবু ডাকছ কেন? টিয়া আমার দেয়া নাম। একটা পার্সোনাল ব্যাপার। তুমি তাকে তার নামে ডাকবে। আর কখনও টিয়াবাবু বলবে না।
যা আর ডাকব না।
টুনটুনিকে সঙ্গে করে নিয়ে যাও। কোলে নিলে সে শান্ত হয়ে থাকবে। মামার সঙ্গে পরিচয় হোক।
মেয়ে কোলে নিয়ে ঘুরতে পারব না।
কেন পারবে না? মামা ভাগ্নিকে কোলে নিবে না।
কোলে নেবে, কিন্তু কোলে নিয়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরবে না।
ভাইয়া তুমি বদলে গেছ এটা জান। তোমার মুখ দেখে পরিষ্কার বুঝা যায় তুমি আমাদের উপর খুবই বিরক্ত। আমরা কি হঠাৎ বেড়াতে এসে তোমার কোনো প্রবলেম করেছি।
তুই কথা বেশি বলিস এইটাই প্রবলেম। এ ছাড়া কোনো প্রবলেম নেই।
জহির তেহারির সন্ধানে বের হলো। টিয়াবাবুর আসল নাম এখনো মনে আসছে না। সালাম? না সালাম না? সালাহউদ্দিন? না সালাউদ্দিন না। সাগর? উঁহু! সাগরও না। দন্তস দিয়ে আর কী নাম আছে? নিউ মার্কেট থেকে নবজাতকের নতুন নাম জাতীয় কোনো বই কিনে আনলে কেমন হয়?
নিউ মার্কেটের কথায় মনে পড়ল ফজলুকে টাকা দিতে হবে। নিউ মার্কেটের কাঁচাবাজারে একটা ঘর নিয়ে ফজলু থাকে। তার হাত একেবারেই খালি। এর মধ্যে ধরেছে ইনফ্লুয়েনজায়। ডাক্তার দেখিয়েছে কি-না, কে জানে। তার যে স্বভাব! নিশ্চয়ই না খেয়ে বিছানায় পড়ে আছে।
তেহারি কিনতে সামান্য দেরি হলে ময়না এবং টিয়া মারা যাবে না। দুজনের পেটেই বার্গার আছে। বার্গার ভাতের মতো চট করে হজম হয়ে যায় না। অনেকক্ষণ পেটে থাকে।
ফজলুকে তার ষরে পাওয়া গেল না। পাশের ঘরের এক ছেলে বলল, উনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন?
জহির বলল, কোন হাসপাতাল? কত নাম্বার বেড।
কত নম্বর বেড জানি না। ঢাকা মেডিকেল।
অবস্থা খারাপ না-কি?
জি খারাপ।
জহির রিকশা নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা হলো।
ফজলুকে সহজেই খুঁজে বের করা হলো। হাসপাতালে তার সীট এখনো হয়নি। বারান্দায় আপাতত শুইয়ে রাখা হয়েছে। পাশে স্ট্যান্ডে স্যালাইনের ব্যাগ ঝুলছে। স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। চেহারা হয়েছে কাকলাশের মত। চোখ ঢুকে গেছে। মুখ ভর্তি কালো কালো ছোপ।
জহির বলল, অবস্থা কী?
ফজলু বলল, এখন একটু ভালো। কাল তো মনে হচ্ছিল এই বুঝি গেলাম। আজরাইল হাত ধরে টানাটানিও করেছে।
তোর টাকা নিয়ে এসেছি।
কত এনেছিস?
যা নিয়েছিলাম সবটাই এনেছি। দরকার লাগলে আরও দেব। টাকা সঙ্গে আছে।
তোর কাছে রেখে দে। এখানে টাকা রাখব না। চুরি হয়ে যাবে। আব্দুল কাদের বলে এখানে একজন আছে। খুঁজে বের কর। তাকে পাঁচশ টাকা ঘুষ দে। ঘুষ দিলে সীটের ব্যবস্থা হবে।
আব্দুল কাদেরটা কে?
খুঁজে বের কর কে। ক্লিনিকেল সেকশানে। সবাই চেনে। এত কথা বলতে পারব না।
খাওয়া-দাওয়া কী করছিস?
খাওয়া-দাওয়া কিছুই করছি না। সালাইন দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে স্যালাইনটা আমার পোলাও-কোরমা। তোর কাছে কাগজ-কলম আছে?
কাগজ-কলম দিয়ে কী হবে?
মার ঠিকানা লিখে দেব। মাকে দুই হাজার টাকা পাঠিয়ে দিবি। আমার খবর কিছুই জানাবি না।
আব্দুল কাদেরকে খুঁজে বের করতে অনেক সময় লাগল। পাঁচশ টাকার বদলে তাকে দেয়া হলো পনেরশ টাকা। সে অন্য এক রোগীকে সীট থেকে নামিয়ে ফজলুকে সীটে তুলে দিল। গম্ভীর গলায় বলল, টাইট হইয়া শুইয়া থাকেন। কেউ কিছু বললে আমার নাম বলবেন। ক্লিয়ার?
সব ঝামেলা মিটিয়ে জহির বাসার দিকে রওনা হলো রাত এগারোটায়। তার হাতে দুই প্যাকেট কাচ্চি বিরিয়ানী। সে নিজে কিছু খাবে না। তার শরীর গুলাছে। মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। হাসপাতালে গেলেই তার এই সমস্যা হয়।
মৃন্ময়ীর দাদা আলিমুর রহমান
মৃন্ময়ীর দাদা আলিমুর রহমান শাদা হাফ পেন্ট পরে খালি গায়ে নিমগাছের নিচে উবু হয়ে বসে আছেন। গায়ে নিমের বাতাস লাগানোর ব্যবস্থা। কবিরাজ এই বিধান দিয়েছে। কবিরাজের নাম বিজয়কালী ঠাকুর বেদান্ত শাস্ত্রী। আলিমুর রহমানের হযমের সমস্যা কিছুই খেতে পারেন না।
সকালে এক ঘণ্টা নিমের বাতাস। দুপুরে চায়ের চামুচে এক চামচ নিমপাতা পিসা রস। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে নিমগাছের ছাল ভেজানো পানি। এই চিকিৎসার নাম মহানিম চিকিৎসা। চিকিৎসা সাতদিন চলবে। সাতদিন পর অন্য বিধান। আজ চিকিৎসার চতুর্থ দিন।
আলিমুর রহমান দূর থেকে মৃন্ময়ীকে দেখলেন। তার মেজাজ ভয়ংকর খারাপ ছিল। মেজাজ ঠিক হতে শুরু করল। তিনি আশেপাশে তাকালেন। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটা এসে বসবে কোথায়? মাটিতে নিশ্চয়ই বসবে না? তার মেজাজ আবারো খানিকটা খারাপ হলো। সাভারের তার এই খামার বাড়িতে খুব কম করে হলেও পনেরোজন লোক। আশে পাশে কেউ নেই এটা কেমন কথা?
ম্যানেজারকে এখন অবশ্যি দেখা যাচ্ছে। শীতল পাটি হাতে দৌড়ে আসছে। আলিমুর রহমানের মেজাজ ঠিক হলো। পুরোপুরি না, তবে কাজ চলাবার মতো।
মৃন্ময়ী বলল, দাদাজান দূর থেকে তোমাকে দেখে মনে হচ্ছিল ধবধবে শাদা একটা ব্যাঙ লাফ দেওয়ার জন্যে বসে আছে। ব্যাঙটার সামনে পুকুর। সে লাফ দিয়ে পুকুরে পরবে।
আলিমুর রহমান বললেন, পরীক্ষা শেষ নাকি?
ফার্স্ট পেপার শেষ। তিন দিনের গ্যাপ আছে। তোমাকে দেখতে এসেছি। দাদাজান আমি রাতে কিন্তু থাকব।
থাকতে চাইলে থাকবি। এত বলাবলির কি আছে।
ঢাকায় লোক পাঠিয়ে আমার বইখাতা আনিয়ে দাও। বই ছাড়া চলে এসেছি। রাতে থাকব এ রকম চিন্তা করে তো আসি নি।