এতবড় একটা মাছ দেখে একজন মানুষ কী করে বলে মাছটাতো খারাপ না। দাদাজান কি আশা করেছিলেন সে ছিপ দিয়ে তিমিমাছের সাইজের একটা কাতল মাছ ধরবে?
মাছের গায়ে হাত রেখে শেফা বসে আছে। আজহার সাহেব এই অবস্থায় মেয়ের ছবি তুললেন। এটা নিয়ে শোর মনে অশান্তি। বাবা একেবারেই ছবি তুলতে পারেন না। শাটার টেলার সময় বাবার হাত কাপবেই। শুধু যে হাত কাপে তাই না, তিনি ফ্রেমও কেটে ফেলেন। ছবি প্রিন্ট হবার পর দেখা যায় মাথা অর্ধেকটা কাটা। কিংবা একটা হাত বাদ পড়েছে। আপা এখন থাকলে কত ভালো হত। সে কখন আসবে কে জানে।
আজহার সাহেব বললেন, কাদায় পানিতে মাখামাখি হয়ে আছিস। যা গোসল করে কাপড় বদলা।
শেফা বলল, উহুঁ আপা আসুক তারপর বাবা তুমি এই মাছটা খাবে তো?
খাব না কেন?
আমি রান্না করব।
তুই কি রান করতে পারিনা। কার
দাদীজানের কাছে শিখে নেব।
ভালো তো। ঠিক আছে তুই রান্না কর। আমি তোকে সাহায্য করব।
তোমাকে সাহায্য করতে হবে না। আমি ঠিক করেছি এখন থেকে আমি যা করব নিজে নিজে করব। মাছ মারলেও একা এক মারব। রান্না করলেও একা একা রান্না করব।,
আজহার সাহেব হাসছেন। মেয়েটার অভিমানী মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনে হচ্ছে তিনি এই গ্রহের সবচে সুখী মানুষ।
শেফা বলল, বাবা তুমি আমার দিকে তাকিয়ে এমন বিশ্রীভাবে হাসছ কেন? তুমি এখন যাওতো বাবা, আমি কাজ করছি।
কাজ করছিস কোথায়, তুইতো মাছের গাছে হাত রেখে বসে আছিল।
শেফা আসলেই কাজ করছে। মনে মনে ক্লাসের বন্ধুদের কাছে চিঠি লিখছে। তার চারজন অতি প্রিয় বান্ধবী আছে। সবার কাছে আলাদা আলাদা চিঠি যাবে। চিঠির সাথে মাছের একটা করে ছবি দিতে পারলে ভালো হত। সেটা সম্ভব হবে না। ছবি প্রিন্ট করাতে হবে ঢাকায় গিয়ে। তাছাড়া বা ছবি যা তুলেছে—হয়তো দেখা যাবে ছবিতে সে আছে, মাছটা নেই।
তুই শুনে খুবই মজা পাবি যে আমি আমাদের গ্রামের বাড়ির ও পুকুরে একটা মাছ ধরে ফেলেছি। মাছটা কত বড় বললে, তুই ভাববি গুল মারছি। বাবাকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে রেখেছি। তোকে ছবি দেখাব। ছবি দেখলেই বুঝবি। প্রথম যখন ছিপে ট্রান পড়ল, আমি ভাবলাম …
উহুঁ চিঠিটা ভালো হচ্ছে না। আরো গুছিয়ে আরো সুন্দর করে লিখতে হবে।
মাছটা ধড়ফড় করছে। মাছটার দিকে তাকিয়ে শেফার এখন কেন জানি খুব খারাপ লাগছে। আহারে বেচারা! পানির নিচে সে হয়তো ছেলেমেয়ে নিয়ে কত সুখে ছিল। সে কি কোনোদিন ভেবেছিল শেফা নামের একটা মেয়ে তাকে মেরে ফেলবে? মাছটার ঠোঁটে বঁড়শি বিঁধে আছে। ঠোঁট দিয়ে রক্ত পড়ছে। মাছটা তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিশ্চয়ই তীব্র ঘৃণা নিয়েই তাকাচ্ছে।
মনোয়ারা দরজা জানালা বন্ধ করে
মনোয়ারা দরজা জানালা বন্ধ করে শুয়ে আছে. বাড়ি ফিরে তিনি একবার বমি করেছেন। মুখ ধোঁয়ার জন্যে কলপাড়ে যেতে গিয়ে মাথাঘুরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে
আজহার সাহেব অবাক হয়ে বললেন, তোমার কী হয়েছে?
মনোয়ারা বললেন, বুঝতে পারছি না। মাথা ঘুরছে।
সেকি!
নিশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে।
নেত্রকোনায় যাওয়াই তোমার ঠিক হয়নি। অসুস্থ শরীর নিয়ে গিয়েছ–শাড়ির ঝাঁকুনি, পেট্রলের ধোঁয়া। এসো বিছানায় শুয়ে থাক।
বিছানায় শুয়ে থাকলে হবে কীভাবে? রাতে মেহমান খাবে।
সেটা আমি দেখব। দেলোয়ারকে নিয়ে যা পারি করব। তুমি শুয়ে থাক। ঘণ্টাখানিক ঘুমাও—দেখলে ভালো লাগবে।
আমার ঘুম আসবে না।
আমি ঘুম আনার ব্যবস্থা করছি।
ঘুম কি তোমার কোর্টের পেশকার যে তুমি ডাকলেই চলে আসবে।
আসে কি না দেখ।
আজহার সাহেব নিজেই দরজা জানালা বন্ধ করলেন। পর্দা টেনে দিলেন। মশারি ফেলতে গেলেন। মনোয়ারা বিরক্ত গলায় বললেন, দিনের বেলা মশারি খাটাচ্ছ কেন?
মশা আছে। তোমার যখন ঘুম আসতে ধরবে তখন কানের কাছে যদি একটা মশা ইনগুন করে ওঠে তাহলেই ঘুম শেষ। আমি এমন ব্যবস্থা করে দিচ্ছি যেন সন্ধ্যা পর্যন্ত তুমি ঘুমাতে পার। তুমি লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে থাক। আমি আসছি।
আর কিছু বাকি আছে?
লেবুর শরবত বানিয়ে আনছি। বিশেষ উপায়ে বানানো লেবুর শরবত। একগ্লাস খেয়ে শুয়ে পড়বে, দশ মিনিটের মধ্যে ঘুম আসবে। পরীতি ও অষুধ।
মনোয়ারা বললেন, তোমার সঙ্গে আমার খুব জরুরি কিছু কথা আছে।
তুমি ঘুম থেকে ওঠো তারপর জরুরি কথা শুনব। এখন আমি লেবুর শরবত বানিয়ে নিয়ে আসি। আমি তোমাকে রেসিপি শিখিয়ে দিচ্ছি—কড়া ধরনের ইনসমনিয়াতে এসিপিটা ট্রাই করবে। খুব মিষ্টি দিয়ে একগ্লাস শরবত বানাবে। দুটা মাঝারি সাইজের লেবু কচলে রস দেবে। কাগজি লেবু না। সামান্য একটু লবণ দেবে। দুই-তিন দানার বেশি না। দুটা শুকনা মরিচ পুড়িয়ে পোড়া মরিচটা শরবতের সঙ্গে মেশাবে। ঢক ঢক করে পুরোটা খেয়ে বিছানায়, যাবে।
আনো তোমার লেবুর শরবত।
আজহার সাহেব ব্যস্ত ভঙ্গিতে লেবুর শরবত বানাতে গেলেন। মনোয়ার। খাটে হেলান দিয়ে বসে আছেন। বুকের ব্যথা এখানে। আছে তবে মাথা ঘোরানোটা নেই। মনোয়ারা ঠিক করলেন লেবুর শরবত খেয়ে তিনি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবেন। একটা ব্যাপার নিয়ে ভালোমতো চিন্তা করা দরকার। মীরার বাবাকে কি সবকিছু জানাবেন? এখন তার মনে হচ্ছে জানানো উচিত। এতবড় দায়িত্ব একা-একা তার পক্ষে নেয়া সম্ভব না। তার শাশুড়িকেও জানানো দরকার। পুরানো দিনের মানুষদের মাথা খুব ঠাণ্ডা থাকে। জটিল ধরনের সমস্যা তারা খুব সহজ সমাধান দিতে পারেন।