খালাম্মা আপনি রেগে যাচ্ছেন।
বাবা আমি রাগছি না। যে মেয়ে সমস্যায় পড়েছে তার মা রাগতে পারেন। আমি মোটেই রাগছি না। মীরার বাবা যখন সবকিছু শুনবেন তখন তিনি রাগ করবেন। তার ব্লগ চাল ব্লগ। সেই রাগকে আমি প্রচণ্ড ভয় করি। আমি চাই না তার কানে ব্যাপারটা যাক। তোমার এবং মীরার মঙ্গলের জন্যেই এটা চাই না।
আপনার কথাবার্তা শুনে আমি খুবই অবাক হচ্ছি—আসলে আমি কিছুই জানি না।
কিছু না জানলে জানবে। জানার জন্যেই আসতে বলছি। এখন আমি তোমার সঙ্গে লাভক্ষতির একটা আলাপ করব। এই আলাপটা মন দিয়ে শোন। লাইনে ডিস্টার্ব হচ্ছে না তো? পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি?
জ্বি পাচ্ছি।
আমার দুটাই মেয়ে। আমাদের যা বিষয়সম্পত্তি আছে সবই এদের। বাংলাদেশের হিসেবে মীরার বাবা শুধু সম্মানিত মানুষই নন, বিত্তবান মানুষও। ঢাকা শহরে কলাবাগানে আমাদের চারতলা একটা বাড়ি আছে। ঐ বাড়ি তুমি দেখনি। ভাড়া দেয়া আছে। এ ছাড়াও মীরার বাবা দু মেয়ের নামে গুলশানে তিনহাজার স্কয়ার ফিটের দুটা এপার্টমেন্ট কিনে দিয়েছেন। দুটি মেয়ের জন্যেই দশ লক্ষ টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা আছে।
আপনি আমাকে এইসব কেন বলছেন বুঝতে পারছি না।
তোমাকে বলছি কারণ মীরা তোমাকে অসম্ভব পছন্দ করে। যদি কোনো কারণে সে তোমাকে হারায় সেটা সে সহ্য করতে পারবে না।
আমার হারাবার কথা উঠছে কেন? আমি তাকে বলেছি আমরা দুজনই এখন ছাত্র। তারপর একটা প্ল্যান করে Inst
আমি সেই সময়টা মীরাকে দিতে পারছি না। মীরার দাদীজানের বয়স আশির উপরে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। আমরা মূলত গ্রামে এসেছি তাকে দেখতে। তিনি নাতজামাইয়ের মুখ দেখতে চাচ্ছেন।
আপনি কি সত্যি সত্যি বিয়ের কথা ভাবছেন?
মিথ্যামিথ্যি বিয়ের কথা কেউ ভাবে না। বিয়ের কথা যদি ভাবে, সত্যি বিয়ের কথাই ভাবে। যাই হোক তুমি ভেবো না যে তুমি এখানে আসবে আর জোর করে তোমাকে বিয়ে দেয়া হবে। আমি চাই মীরার দাদাজান তোমাকে দেখুন। তারপর আমরা পারিবারিক ভাবে আলাপ-আলোচনা করব। তোমার মা-বাবার সঙ্গে আলাপ করব।
আমার বাবা বেঁচে নেই। আমার গার্জিয়ান হচ্ছেন আমার বড়মামা।
আমরা তোমার মার সঙ্গে আলাপ করব, তোমার মামার সঙ্গে আলাপ করব। আমি কথা যা বলার বলে ফেলেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরতে হবে। অসুই মেয়ে ফেলে এসেছি। তুমি কি আর কিছু জানতে চাও?
মীরা আপনাকে কী বলেছে?
মীরা আমাকে কিছুই বলেনি। সে অত্যন্ত চাপা-ভাবের মেয়ে। তাকে মেরে ফেললেও তার পেট থেকে কোনো কথা বের করা যাবে না। তাকে হঠাৎ দেখছি সে খুব টেনশনে করছে। জানি না কী কারণ তার মাথায় ঢুকে গেছে যে তুমি তাকে ছেড়ে যাচ্ছি। আমার মেয়ের টেনশান আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। আমি তোমাকে মা বললাম, মেয়ের টেনশন কমানোর জন্যেই বললাম। আশা করি তুমি আমার উপর রাগ করোনি।
জ্বি না ব্রাশ করব কেন? রাগ করার মতো তো আপনি কিছু বলেননি।
আচ্ছা বাবা রাখি। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আমি আসতে পারব কি পারব ন এখনো বলতে পারছি না। ম! অসুস্থ তো।
বুঝতে পারছি। তুমি ভালো। ভেবেটলে সিদ্ধান্ত না ও। জানো সিদ্ধান্তই হুট করে নিতে নেই। সিদ্ধান্ত যত ছোটই হোক তার জন্যে চিন্তার সময় দিতে হয়। রাখি কেমন?
খালা স্লামালিকুম।
ওয়ালাইকুম সালাম।
মীরা এতক্ষণ অবাক হয়ে মার দিকে তাকিয়েছিল। এখন সে চোখ নামিয়ে নিল। মনোয়ারা বললেন, খুব পানির পিপাসা পেয়েছে। মা দেখ তো আমার জন্যে একগ্লাস পানি জোগাড় করা যায় কিনা।
মার গলা আগের মতো হয়ে গেছে। এই কঠর মমতা এবং ভালোবাসায় অর্দ্র। মীরার চোখ ভিজে উঠতে শুরু করেছে। সে বলল, মা তোমার কি জ্বর আসছে। চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে।
মনোয়ারা ক্লান্ত গলায় বললেন, বুঝতে পারছি না।
বুকে ব্যথা হচ্ছে?
হ্যাঁ।
বেশি ব্যথা হচ্ছে?
না বেশি না। আমি একগ্লাস পানি খাব। তুষায় বুক ফেটে যাচ্ছে।
মীরা পানির সন্ধানে বের হল।
মনোয়ারা উঠে দাঁড়াতে গিয়ে দেখলেন তার মাথা ঘুরছে। মনে হচ্ছে এক্ষনি মেঝেতে পড়ে যাবেন। চেয়ারের হাতল ধরে তিনি নিজেকে সামলালেন। তার উচিত বসে পড়া। তিনি বললেন না, প্রায় টলতে টলতে বের হলেন।
উত্তেজনায় শেষচার চোখমুখ লাল হয়ে আছে। তার শরীর কাঁপছে। মনে হচ্ছে এক্ষুণি সে কেঁদে ফেলবে। আসলেই তার কান্না আসছে। নিচের ঠোঁট দাত দিয়ে শক্ত করে কামড়ে ধরে সে কান্না থামাচ্ছে। কান্না থামানোর এটা তার পুরানো। কৌশল। এর ছিপে মাছ ব্রা পড়েছে। এমন সময় মাছটা ধরল যখন আশেপাশে কেউ নেই। অনু মণ আগেও আজাহার সাহেব ছিলেন। তিনি বললেন, যা আমি একটু হেঁটে আসি কেমন? শো চাচ্ছিল তার বাবা পাশে থাকে, তারপরে ও বলল, আচ্ছা। [জহার সাহেব চলে যাবার পর শেষ হঠাৎ দেখে তার দুটা ছিপের দুটা ফান্নার একটা নেই। সত্যি সত্যি নেই। প্রথমে সে বুঝতেই পারেনি যে মাছ টেনে ফানা পানির নিচে নিয়ে গিয়েছে। সে চিন্তিত মুখে ফানা খুঁজে বেড়াচ্ছে তখন হঠাৎ মনে হল মাছ টোপ গিলেনি তো! কী সর্বনাশা মাছ-মন্ত্র তো পড়া হয়নি।
সে তিনবার মাদু-মন্ত্র পড়ে পানিতে টোকা দিল। আর তখনি শিশিশি ধরনের শব্দ হল। মাছু সুতা টানছে। হুইল-বঁড়শির হুইল ঘুরছে। শেফার বুক ধক করে উঠল। সে ডাকল, বাবা বাবা।
তখন মনে হল বাবা নেই, একটু আগে উঠে গেছেন। সে কী করবে। বঁড়শি হাতে নিয়ে হ্যাচকা টান দেবে? না শুধু বঁড়শি শক্ত করে ধরে বসে থাকবে। বড় মাছ যদি হয় তাকে সুদ্ধ টেনে পানিতে নিয়ে যাবে নাতো?