মনোয়ারা বললেন, তারা আসে তোমার গল্প শুনতে। গল্প শুনতে পাচ্ছে এতেই তারা খুশি।
তা ঠিক। তবুও এক রাতে ভালো করে এদের খাওয়াব। আগামীকাল রাতে খেতে বলি কেমন?
আচ্ছা বলো।
গরুর মাংস দিয়ে তুমি যে একটা প্রিপারেশন কর—মঙ্গোলিয়ান বিফ, ঐটা করতে পার কিনা দেখ তো। এরা গ্রামে পড়ে আছে, নতুন কিছু খেতে পারলে খুশি হব।
দেখি পারি কি না।
আজহার সাহেব চলে যেতেই মীরা বলল, মা, তুমি কি দাদীজানকে সামলে ছু? আশা করি তিনি আমার সঙ্গে ঘুমুতে আসবেন না। উনাকে বলে দিয়েছ তো মা।
এখনো কিছু বলি নাই। কীভাবে বলব সেটাই বুঝতে পারছি না।
তোমাকে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দেই?
দে।
আজ রাতে তুমি আমার সঙ্গে ঘুমুতে আসে। তাছাড়া এম্নিতেই আমার শরীরটাও ভালো লাগছে না। জ্বর-জ্বর লাগছে। আমার তোমার সঙ্গে ঘুমাতে ইচ্ছা করছে। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমুতে এলে দাদীজান বাধ্য হয়ে শেফার সঙ্গে ঘুমুবেন। প্রবলেম সলভড।
শেফা বলল, আজ রাতের প্রবলেম নাহয় সলভড় হল, কাল কী করবে? মা কি রোজ তোমার সঙ্গে ঘুমুবে?
মীরা বলল, কালকেরটা কাল দেখা যাবে। আগে বর্তমানের সমস্যা মিটুক। ভবিষ্যতের সমস্যা ভবিষ্যতে মেটানো হবে। we Live in Present, we do not live in future. তোর মাছ মারা কেমন হয়েছে?
ভালো হয়নি।
শখ মিটছে কি-না বল। শখ মিটলেই হল।
মাছ মারতেই পারলাম না, শখ মিটবে কীভাবে?
কাল আবার বসছিল?
হুঁ। তুমি কি আমার সঙ্গে বসবে আপা?
না।
প্লিজ আপা তুমি বোস, তোমার তো ভাগ্য ভালো। আমার ধারণা তুমি থাকলেই মাছ ধরা পড়বে।
আমার ভাগ্য ভালো?
অবশ্যই ভালো। মা, আপার ভাগ্য ভালো না?
মনোয়ারা হাসিমুখে বললেন, দুজনের ভাগ্যই ভালো।
শেফা বলল, জন্মের সময় আল্লাহ যদি রিপোর্ট-কার্ডের মতো একটা কার্ডে আমাদের ভাগ্য লিখে দিয়ে দিত তাহলে খুব ভালো হত। রিপোর্ট-কার্ড দেখে আমরা আগেভাগে সব জানতাম।
মনোয়ারা বললেন, তুই এমন মজা করে কথা বলা কোথেকে শিখেছিস?
শেফা বলল, বাবার কাছ থেকে শিখেছি মা। বাবার কাছ থেকে শিখেছি কীভাবে গল্প করলে গল্পগুলি বোরিং হয়। আমি গল্প করার সময় সেইটা বাদ। দিয়ে গল্প করি।
মীরা হেসে ফেলল। মনোয়ারা হাসতে শুরু করলেন। শুধু শেফা গম্ভীর হয়ে রইল। গম্ভীর হয়ে থাকলেও তার খুব মজা লাগছে। দরজায় দেলোয়ারকে দেখা গেল। তাকে দেখাই যাচ্ছে না। নতুন প্যান্ট, জুতা, তার ওপর হলুদ কোট।
শেফা ফিসফিস করে বলল ও মাই গড়। দেলোয়ার ভাইকে কীরকম সঙের মতো লাগছে দেখেছ মা? মনে হচ্ছে না সার্কাসের জোকার, এক্ষুনি ডিগবাজি খেয়ে কোনো খেলা দেখাবে?
মনোয়ারা বললেন, চুপ কর।
উনাকে আগের মতো লুঙ্গি গেঞ্জি পরে থাকতে বলি মা?
মনোয়ারা কিছু বলার আগেই দেলোয়ার বলল, ছোট আপা শুনে যান।
শেফা উঠে গেল। দেলোয়ার বলল, ভালো খবর আছে আপা। টিভি জোগাড় হয়েছে।
টিভি দিয়ে লাভ কী হবে, কারেন্ট নেই। রাত এগারোটার পর কারেন্ট এলে টিভি কী দেখব?
ব্যাটারি এনেছি। গাড়ির ব্যাটারিতে চুলবে।
একসেলেন্ট। আমার ঘরে ফিট করে দিন।
আমি তো ফিট করা জানি না। মিস্ত্রি নিয়ে আসছি।
নিয়ে এসেছেন তো সময় নষ্ট করছেন কেন? লাগিয়ে দিন।
চাচাজী রাগ করবেন নাতো?।
কী অদ্ভুত কথা! বাবা রাগ করবে কেন? ঢাকায় কি আমি টিভি দেখি না? সারাক্ষণই দেখি।
তবু চাচাজীর একটা অনুমতি…
আচ্ছা যান অনুমতি আমি নিয়ে নেব।
শেফা অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছে। টিভির অন্য কোনো প্রোগ্রাম না দেখলেও এক্স ফাইল না-দেখলে শেফার চলে না। আজ এক্স ফাইল আছে। দেলোয়ার ভাইকে সন্ধ্যাবেলা শুধু জিজ্ঞেস করেছিল—আশেপাশের কোনো বাড়ি আছে যাদের টিভি আছে আমাকে এক্স ফাইল দেখতে হবে। দেলোয়ার ভাই টিভিই জোগাড় করে ফেলেছে। মানুষুটা কাজের আছে। শুধু একটু জোকার টাইপ।
দেলোয়ার ভাই।
জ্বি।
কোট প্যান্ট পরে আপনার কেমন লাগছে?
জ্বি ভালো লাগছে। একটু লজ্জা-লজ্জা লাগছে।
লজ্জা-লজ্জা লাগছে তাহলে পরে আছেন কেন?
জুতা আর প্যান্ট বড় আপা কিনে দিয়েছেন। না পরলে মনে কষ্ট পাবেন।
উনি মোটেই কষ্ট পাবেন না। আপনার যদি লজ্জা-লজ্জা লাগে আপনি খুলে। ফেলল।
বড় আপার মনটা কি এখন ভালো?
খুবই ভালো। মন খারাপ হবে কেন? দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করছেন কেন? এক্স ফাইল শুরু হয়ে যাবে তো।
দেলোয়ার কাঁচুমাচু মুখে বলল, চাচাজীর কাছ থেকে যদি অনুমতিটা নিয়ে দেন। টিভি দেখে হঠাৎ যদি রেগে যান।
আচ্ছা আমি এক্ষুনি অনুমতি এনে দিচ্ছি। আপনি মিস্ত্রি নিয়ে আমার ঘরে চলে যান। এমন জায়গায় টিভি ফিট করবেন যেন আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখতে পারি।
জ্বি আচ্ছা।
শেফা বসার ঘরের দিকে যাচ্ছে।
সে ঘরে ঢুকল না। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। আজহার সাহেব গল্প করছেন, সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে। আজহার সাহেবের সেই পুরানো গল্প। নেদারল্যান্ডের সিন ইটারদের কাণ্ডকারখানা।
হেডমাস্টার সাহেব বললেন, স্যার কী বললেন? নগ্ন শরীরে খাদ্যবস্তু সাজিয়ে রাখে।
জ্বি।
শবদেহ যদি স্ত্রীলোকের হয়?
সবার জন্যই একই অবস্থা।
হেডমাস্টার সাহেব শিউরে উঠলেন। অতিথিরা কিছুক্ষণ মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। এ্যাসিসটেন্ট হেডমাস্টার বললেন, অতি বর্বর জাতি।
আজহার সাহেব বললেন, প্রাচীন জাতিগুলোর মধ্যে এইজাতীয় অনেক বিচিত্র বিশ্বাস প্রচলিত। আফ্রিকার রেইন ফরেস্টে এই প্রাচীন জাতিগোষ্ঠী আছে তারা তাদের মৃত আত্মীয়স্বজন কবর দেয় না বা দাহ করে না। খেয়ে ফেলে।