হেদায়েত হাই তুলতে তুলতে বলল, আরেকদিন বল। আজ শরীরটা খারাপ। নাশতা খেয়ে শুয়ে পড়ব। কলেজেও যাব না। গত রাতে একটা ঘুমের অষুধ খেয়েছিলাম। মনে হয় তার অ্যাফেক্ট। পুরোটা খাওয়া ঠিক হয় নি। এখন থেকে অর্ধেকটা করে খাব।
হেদায়েত নাশতা খেয়ে শুয়ে পড়ল। সারাদিন ঘুমাল। দুপুরে নাদুর মা কয়েকবার ডাকতে এলেও ঘুম ভাঙতে পারল না। তার ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার আগে আগে। টেলিফোনের রিংয়ের শব্দ। হেদায়েত টেলিফোন তুলে তার স্বভাবমতো বলল, কে সেতু?
স্যার আমি নীতু। রোল টেন।
ও আচ্ছা তুমি।
আজ ক্লাস নেননি কেন স্যার? মাহজাবিন খুব মন খারাপ করেছে।
কেন?
আপনার ক্লাস তার খুব পছন্দ। মনে হয় এই কারণে কিংবা অন্য কিছুও হতে পারে।
অন্য কী? সেটা স্যার আপনাকে বলতে পারব না। সেতু ম্যাডাম এখনো ফিরেন নি?
না।
উনার সঙ্গে কি আপনার ঝগড়া হয়েছে?
না তো! আমাদের ঝগড়া হয় না। স্যার আপনাকে যে আমার টেলিফোন নাম্বার দিয়েছিলাম সেটা কি আপনার মনে আছে।
হ্যাঁ মনে আছে। ৯৬৫৪৩২১ হয়েছে?
জ্বি স্যার হয়েছে। এখন বাসায় কি আপনি একা?
একা না, নাদুর মা আছে।
আপনাদের কাজের বুয়া?
হুঁ।
নিশ্চয়ই ময়মনসিংহ বাড়ি। সব কাজের বুয়াদের বাড়ি ময়মনসিংহ হয়।
ঠিকই ধরেছ?
ওদের ফেভারিট খাবার কী জানেন স্যার?
না। কখনও জিজ্ঞেস করি নি।
পাটশাক। এরা আবার পাটশাকের শুটকিও খায়। পাটশাক রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে বৈয়মে ভরে রাখে। সেটা দিয়ে ভর্তার মতো বানায়। কখনো খেয়েছেন?
নাদুর মা’কে বলবেন, বানিয়ে দেবে। খেতে কিন্তু অখাদ্য। স্যার আপনাকে আরেকটা টেলিফোন নাম্বার বলি? একবার বললেই তো আপনার মনে থাকবে। মাহজাবিনের মোবাইল নাম্বার।
তার মোবাইল নাম্বার মনে রেখে কী হবে?
কিছু হবে না। তারপরও মনে থাকল। স্যার বলব?
বল।
নীতু মোবাইল নাম্বার বলল।
হেদায়েত বলল, নাম্বারটা খুবই ইন্টারেস্টিং। প্রতিটি সংখ্যা প্রাইম।
স্যার টেলিফোন রাখি। মায়ের সাল্ডেলের আওয়াজ পাচ্ছি। আমার হাতে টেলিফোন দেখলেই মা ভাববে আমি প্রেম করছি। আপনাকে তো বলেছি, আমার মা খুব সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত মহিলা।
স্যার খোদা হাফেজ।
খোদা হাফেজ।
হেদায়েত বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ ধরে চোখে-মুখে পানি দিল। মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। মনে হয় বেশি সময় ঘুমালে মাথার যন্ত্রণা হয়। দুটা প্যারাসিটামল আর এক কাপ গরম চা খেতে হবে।
নাদুর মা চা দিয়ে গেছে। চায়ের সঙ্গে একটা চিঠি। চিঠি পাঠিয়েছে বেলায়েত। চিঠিতে লেখা—
ছোটন
পীর সাহেবের তাৰিজ এবং পানি-পড়া যোগার করেছি। পানিটা ফ্ল্যাটের প্রতিটি ঘরে ছিটায়ে দিতে হবে। তাবিজটা বানতে হবে ডান হাতের কব্জিতে।
তুই রাতে আমার বাসায় চলে আয়। তখন তোর হাতে তাবিজ এবং পানি-পড়া দিয়ে দেব। কিশোরগঞ্জ থেকে বড় পাবদা মাছ এসেছে। তোর ভাবীকে ঝোল ঝোল করে বাঁধতে বলেছি। ঢেঁপি বুড়োর চালের ভাত আর পাবদা মাছ। সেতুকেও সঙ্গে নিয়ে আসিস। তাকে দু’একটা উপদেশ দেয়া প্রয়োজন। তোক একা ফেলে মায়ের বাড়িতে প্রায়ই যায়, এটা ঠিক না।
রাত ন’টার দিকে আমি বাসায় ফিরব। করাত কলে কি যেন নষ্ট হয়েছে। রাত আটটায় মিস্ত্রী ঠিক করতে আসবে। তখন সামনে থাকতে হবে। সব চোরের গুষ্ঠি।
আমার উপস্থিত থাকা দরকার।
বেলায়েত হোসেন
চিঠি শেষ করে হেদায়েত চিঠিতে মোট কতগুলি শব্দ আছে গুগল। মোট ৬৭টি শব্দ আছে, প্রাইম নাম্বার। এটা একটা ভালো বিষয়। নাদুর মা মুখ শুকনা করে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হেদায়েত বলল, কিছু বলবে?
নাদুর মা বলল, আপা তো এখনও আসে নাই।
কোনো একটা কাজে আটকা পড়েছে। চলে আসবে। আর শোন, রাতে আমি খাব না। ভাইজান পাবদা মাছ খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন।
নাদুর মা বলল, আপার মায়ের বাসার ডেরাইভার আপা সম্পর্কে অনেক আজেবাজে কথা আমাকে বলেছে। আপা নাকি প্রায়ই হোটেলে থাকে।
হেদায়েত বিরক্ত গলায় বলল, কেউ কোনো কথা বললে কথাটা লজিক দিয়ে বিচার করবে। লজিক মানে হচ্ছে যুক্তি। কারণ এই প্রকাণ্ড বিশ্বভ্রহ্মাণ্ড চলছে লজিকে। তোমার আপার নিজের ফ্ল্যাট আছে। আছে না? ভাড়া হলেও তো আছে?
জ্বি আছে।
তার মায়ের বাড়ি আছে। আছে কি-না বল।
আছে।
সেতুর দুই মামা থাকেন ঢাকায়। সেতু ইচ্ছা করলে এদের বাসাও থাকতে পারে। হোটেলে থাকবে কেন?
নাদুর মা চুপ করে রইল। হেদায়েত বলল, যুক্তি বুঝতে পারছ?
নাদুর মা বিড়বিড় করে কি যেন বলল। হেদায়েত বলল, ঘড়ির দিকে একটু লক্ষ রাখ। ভাইজানের বাসায় রাত ন’টার সময় পৌঁছতে হবে। বাসা থেকে বের হব আটটা একুশ মিনিটে, ৮২১ একটা প্রাইম নাম্বার। বুঝেছ?
জ্বি ভাইজান বুঝেছি। টেলিফোনে আপার একটা খুঁজ নেন, কই আছে।
হেদায়েত বলল, অকারণে খোঁজাখুঁজির দরকার নেই। অকারণে খোজাখুঁজির মানে বিরক্ত করা। তাছাড়া সেতুর মায়ের বাড়ির টেলিফোনের নাম্বারে গণ্ডগোল আছে। একটা সংখ্যাও প্রাইম না। বুঝেছ?
নাদুর মা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। বুঝেছে।
বেলায়েত ভাইকে নিয়ে খেতে বসেছে। খাবার বেড়ে দিচ্ছে বেলায়েতের স্ত্রী হেনা। রূপবতী মহিলা কিন্তু গলব্লাডারে কি একটা অপারেশনের পর সে মোটা হতে শুরু করেছে। মুখমণ্ডল আগের মতোই ছোট। শরীর বিশাল। তাকে এলিয়েনের মতো দেখায়। বেলায়েত তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, পাবদা মাছ পাতে তুলে দিয়ে তুমি দূরে চলে যাও। কাছে থাকবা না।