হেদায়েত গভীর চিন্তা শুরু করল। প্রকৃতি কি ম্যাজিক পছন্দ করে? সৃষ্টির রহস্যের অনেক কিছু লুকিয়ে রাখে? এমন কি হতে পারে যে, আলোর গতি ধ্রুবক না। প্রকৃতির ম্যাজিকের কারণে মানুষের কাছে মনে হচ্ছে ধ্রুবক। আলোর গতির বিষয়টা জটিল। প্রকৃতির ম্যাজিক প্রকাশ হয়ে পড়লে দেখা যাবে বিষয়টা দড়ি কাটার মতই সহজ।
টেলিফোন বাজছে। পাঁচটা রিং হবার পর হেদায়েত টেলিফোন ধরল, কারণ পাঁচ হলো প্রাইম সংখ্যা।
কে সেতু। ঠিকমতো পৌঁছেছ?
ও পাশ থেকে মিষ্টি গলা ভেসে এল, স্যার আমার নাম নীতু। রোল নাম্বার টেন।
ও আচ্ছা।
স্যার আমাকে চিনেছেন?
হুঁ।
সেতু কে স্যার। ম্যাডাম?
হুঁ।
উনি বাসায় নেই?
না।
কোথায় গেছেল?
তার মা’র বাসায় গেছে। রাতে থাকবে। তারা একটা ভূতের ছবি দেখবে। ছবির নাম Swan। দুর্বল হার্টের মানুষদের জন্যে ছবিটা নিষিদ্ধ।
তাহলে তো স্যার ছবিটা আমি দেখতে পারব না। আমার হার্ট অত্যন্ত দুর্বল। প্যালপিটিশন হয়।
সেই ক্ষেত্রে তোমার এই ছবি না দেখাই ভালো।
স্যার আমি কী জন্যে টেলিফোন করেছি জানতে চাইলেন না তো?
কী জন্যে করেছ?
আপনি ক্লাসে বলছিলেন গত কাল রাতে একটা হাতের উপর আপনার হাত পড়েছিল। সেই হাতটা কার সেটা বের করেছি। আমার ধারণা বের করে ফেলতে পেরেছি।
হেদায়েত আগ্রহের সুরে বলল, কার হাত?
নীতু বলল, মাহজাবিনের হাত স্যার। রোল নাইটিন।
তার হাত কীভাবে হবে? সে তো আমাদের ফ্লাটে থাকে না।
আত্মার ব্যাপার স্যার। সে মগবাজারে থাকে, তার আত্মা আপনাদের ফ্ল্যাটে চলে গিয়েছিল।
সেটা কীভাবে সম্ভব? আত্মার হাত থাকবে কীভাবে?
নীতু বলল, তার আত্মার সঙ্গে আপনার আত্মার মিলন হয়েছে স্যার।
হেদায়েত বলল, তোমার কথায় কোনো যুক্তি পাচ্ছি না তো। Soul কোনো material বস্তু না।
নীতু বলল, অনেক বিষয় আছে স্যার যুক্তির ঊর্ধ্বে। আত্মা তো আর আপনি অংক দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন না।
হেদায়েত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তা ঠিক। তবে আত্মা যদি সত্যি থাকে তাহলে কোনো একদিন সেটা অংকের সীমানায় চলে আসবে। ম্যাথমেটিসিয়নরা আত্মার একটা ইকুয়েশন বের করে ফেলবেন। একটা ওয়েভ ফাংসান। ওয়েভ ফাংসানটা হতে হবে টাইম ইনডিপেনডেন্ট। কারণ আত্মা সময়ের বাইরে।
স্যার আমি রাখি? মা দুর থেকে কেমন করে জানি তাকাচ্ছে। মা ভাবছে আমি কারো সঙ্গে প্রেম করছি। আমার মা খুব সন্দেহবাতিকগ্রস্ত মহিলা।
ও আচ্ছা!
আমার বাবাও সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, তবে মার চেয়ে সামন্য কম।
ও আচ্ছা!
স্যার আপনার হাতের কাছে কি কাগজ-কলম আছে?
কাগজ-কলম হাতের কাছে নাই।
হাতের কাছে কাগজ-কলম থাকলে আমার টেলিফোন নাম্বারটা লিখে রাখতে বলতাম। আত্মার ইকুয়েশনটা যদি আপনি বের করে ফেলতে পারেন তাহলে টেলিফোনে আমাকে জানতে পারবেন। আমার ধারণা কেউ না পারলেও আত্মার ইকুয়েশনটা আপনি বের করতে পারবেন। কারণ আপনি আফু।
‘আফু’ মানে কী?
‘আফু’ মানে আপনাকে বলব না। স্যার, কাগজ-কলম পেয়েছেন?
হেদায়েত বলল, একবার শুনলেই আমার টেলিফোন নাম্বার মনে থাকে। তুমি নাম্বারটা বল।
স্যার আপনার এত স্মৃতিশক্তি!
আমার স্মৃতিশক্তি ভালো না। আমি একটা বিশেষ টেকনিক ব্যবহার করি। নাম্বার মনে রাখার জন্যে টেকনিকটা ভালো।
স্যার টেকনিকটা আমাকে বলবেন?
অবশ্যই বলব। তুমি করবে কি নাম্বারগুলি তিনটা ভিজিট করে আলাদা করবে। তারপর দেখবে প্রতিটি ভাগে কয়টা প্রাইম নাম্বার আছে। প্রাইম নাম্বারগুলির পাশের সংখ্যাটার সঙ্গে কত যোগ করলে আবার প্রাইম সংখ্যা হয় সেটা হিসাব করবে। শূন্য কয়টা আছে সেটা বের করবে। একক দশক শতক হিসাবে শূন্যের অবস্থানটা জানবে…
স্যার আপনি তো আমার মাথা পুরা আউলায়ে দিয়েছেন। আমি আমার লাম্বারটা বলি এক সপ্তাহ পরে জিজ্ঞেস করব, দেখি বলতে পারেন কিনা? আমার নাম্বার হল ৯৬৫০৩০২১, স্যার মনে থাকবে?
অবশ্যই মনে থাকবে। মোট চারটা প্রাইম সংখ্যা আছে। শূন্য আছে দু’টা। তাদের অবস্থান শতকের ঘরে এবং অযুতের ঘরে।
স্যার খোদা হাফেজ। মা এদিকে আসছেন তো আর কথা বলা যাবে না।
খোদা হাফেজ।
হেদায়েত টেলিফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গেই টেলিফোন বাজতে লাগল। হেদায়েত রিসিভার কানে নিতেই সেতু বলি, টেলিফোন এতক্ষণ এনগেজ কেন? যতবারই রিং করছি এনগেজ টোন। কার সঙ্গে কথা বলছিলে?
আমার এক ছাত্রীর সঙ্গে, তার নাম নীতু। রোল নাম্বার টেন।
এত রাতে ছাত্রীর সঙ্গে কীসের কথা?
তার ধারণা সে একটা সমস্যার সমাধান করেছে। সমাধানটা আমাকে জানাতে টেলিফোন করেছিল। তবে সমাধান ঠিক না, হাস্যকর! আমার ধারণা কোনো একটা ফাজলামি করার জন্যে সে টেলিফোন করেছে।
বকবকানি রাখ। শোন তুমি শোবার ঘরে সিগারেট খাচ্ছ না তো!
একটা খেয়েছি।
আর খাবে না। খেতে ইচ্ছা হলে বারান্দায় গিয়ে খাবে।
আচ্ছা।
টেবিল-ল্যাম্পের কাছে এক পাতা ডরমিকাম ট্যাবলেট আছে। এক্ষুনি একটা খেয়ে নাও।
এই ট্যাবলেট খেলে কী হবে?
ভালো ঘুম হবে। তুমি আজে-বাজে স্বপ্ন, হাতের উপর হাত— এইসব দেখবে না।
আচ্ছা ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমাব।
এক্ষুনি খাও। নয় তো মনে থাকবে না। আমি টেলিফোন ধরে আছি, তুমি ট্যাবলেট খেয়ে আস।
হেদায়েত ট্যাবলেট খেয়ে আবার টেলিফোন ধরল। সেতু বলল, আমাদের সমস্ত প্রোগ্রাম বাতিল হয়ে গেছে। এমন মেজাজ খারাপ লাগছে!
প্রোগ্রাম বাতিল হলো কেন?