বড় ভাই সাহেব, ভুল কথা বললেন, পুরুষের চেয়ে মেয়েদের বুদ্ধি অনেক কম।
তাই-না-কি?
হ্যাঁ। আমার মুখের কথা না, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। একজন পুরুষ মানুষের ব্ৰেইনের ওজন হচ্ছে ১,৩৭৫ গ্রাম। আর একজন মেয়ে মানুষের ১,২২৫ গ্রাম। একশ পঞ্চাশ গ্ৰাম।
এই তথ্য পেয়েছেন কোথায়?
খোঁজ-খবর রাখি বড় ভাই। একেবারে মুখতো না। কই, এখানে চা দিল না।
পেপসি খেলামতো আবার চা কেন?
পেপসি খেলেন পানির বদলে। চা ছাড়া নাস্তা শেষ হয় না-কি? হয় না।
আনিস নাস্তার শেষে চা-এর জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল। সুলায়মান সাহেব বললেন, বড় ভাই সাহেব, এবার একটু কাজের কথা বলি।
বলুন।
ফ্ল্যাটটা যে বড়ভাই ছেড়ে দিতে হয়।
ছেড়ে দেব। বাড়ি খুঁজছি। বিশ্বাস করুন খুঁজছি। পাওয়া মাত্র ছেড়ে দেব।
বুধবারের মধ্যেই যে ছেড়ে দিতে হয় ভাই সাহেব। আমি একজনকে জবান দিয়ে ফেলেছি, সে বুধবারে বাড়িতে উঠবে। জবান তো বড় ভাই সাহেব রক্ষা করতে হয়।
আমি যদি এর মধ্যে কিছু খুঁজে না পাই— আমি যাব কোথায়?
আমি আমার একটা ঘর ছেড়ে দিব। মেহমান হিসেবে কয়েকদিন থাকবেন।
চা এসে গিয়েছে। আনিস চা-য়ে চুমুক দিল। কি বলবে ভেবে পেল না।
বড় ভাই সাহেব।
জি বলুন।
বলতে শরম লাগছে–না বলেও পারছি না। আপনার কাছে তিন মাসের ভাড়া পাওনা আছে। বলেছিলেন একটা ব্যবস্থা করবেন।
অবশ্যই করব।
তা করবেন জানি। কিন্তু ভাইসাহেব যাওয়ার আগে পরিশোধ করে যাওয়াটা কি ভাল না। একবার চলে গেলে আপনার হয়ত মনে থাকবে না।
আনিস তিক্ত গলায় বলল, এই মুহূর্তে আমার হাত একেবারে খালি তবে স্ত্রীর কিছু গয়না আছে। ঐগুলো বিক্রি করে হলেও আপনার পাওনা মিটিয়ে দেব।
এইটা খুব ভাল কথা বলেছেন। যে পুরুষ ঋণ রেখে এক কদম পা ফেলে না, সে হচ্ছে সাচ্চা পুরুষ। বড় ভাই সাহেব, আমার একটা পরিচিত গয়নার দোকান আছে। আপনি যদি চান আপনাকে নিয়ে যাব।
ঠিক আছে যাব আপনার সঙ্গে।
কাল বিকালে কি আপনার সময় হবে?
হবে। এখন তাহলে উঠি? না-কি আরো কিছু খাওয়াবেন?
সুলায়মান সাহেব হো হো করে অনেকক্ষণ হাসলেন। যেন এরকম মজাদার কথা অনেকদিন শোনেননি। আনিস শীতল গলায় বলল, এরকম শব্দ করে হাসবেন না। সুলায়মান সাহেব। শব্দ করে হাসলে হার্টে প্রেসার পড়ে। আপনার যা বয়স তাতে হার্টে বাড়তি প্রেসার দেয়াটা ঠিক হবে না।
সত্যি বলছেন?
হ্যাঁ সত্যি। হাসাহাসি একেবারেই করবেন না। সব সময় মন খারাপ করে বসে থাকবেন তাহলেই দেখবেন হার্ট ভাল থাকবে, অনেক দিন বাঁচতে পারবেন।
অনেক দিন বাঁচতে ইচ্ছা করে না। যত তাড়াতাড়ি কবরে যেতে পারব ততাই ভাল।
তোড়াতাড়ি কবরে চলে গেলে এই যে টাকা পয়সা রোজগার করছেন সেগুলো ভোগ করবে। কে? ভোগ করবার জন্যেই তো আপনার দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা দরকার।
আপনি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন।
হ্যাঁ করছি।
হাসলে হার্টের উপর চাপ পড়ে ঐটাও তাহলে ঠাট্টা?
না। ঐটা ঠাট্টা না। ঐটা সত্যি। যে কারণে হাসি খুশী মানুষদের বেশি দিন বাঁচতে দেখা যায় না। বেঁচে থাকে খিটখিটে গম্ভীর মানুষজন। দেখেন না পৃথিবী ভর্তি বদমেজাজী বুড়ো-বুড়ি।
কথাটাতো ভাইসাহেব খুব ভুল বলেন নাই।
কথা আমি সচরাচর ভুল বলি না। আচ্ছা আজ তাহলে যাই। কাল সন্ধ্যায় দেখা হবে। এক সঙ্গে গয়নার দোকানে যাব।
ইনসাআল্লাহ।
হাসির ব্যাপারটা মনে রাখবেন। হাসি সম্পূর্ণ বন্ধ। দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে হলে রাম গরুর ছানা হতে হবে।
নিজের ঘরে ঢুকে আনিসের মন খারাপ হয়ে গেল। টগর এখনো একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিশা রণে ভঙ্গ দিয়ে ছবি আঁকছে। বাবাকে দেখে নিশা বলল, টগর ভাইয়ার শাস্তি আর কতক্ষণ হবে বাবা?
আনিস বলল, শাস্তি শেষ।
টগর বাবার দিকে তাকিয়ে হাসল। আনিস বলল, পা ব্যথা করছে?
হুঁ করছে।
আর কোনদিন ফায়ার ব্রিগেড খেলা খেলবে না তো?
টগর না সূচক মাথা নাড়ল। আনিস বলর, মাথা নাড়লে হবে না। বল, আর কোনদিন খেলিব না।
আর কোনদিন খেলিব না। ভেরি গুড। তোমরা এখন হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বস। আমি রান্না শেষ করি।
নিশা বলল, আমি কি তোমাকে সাহায্য করব বাবা?
না। সাহায্য লাগবে না। আজ তোমাদের কি খেতে ইচ্ছা করছে বল? ডিমের ভাজি না তরকারী?
টগর বলল, আমরা রোজ ডিম খাচ্ছি কেন বাবা?
ডিম রান্না সবচে সহজ এই জন্যে রোজ ডিম খাচ্ছি।
নিশা গম্ভীর গলায় বলল, আমরা পৃথিবীর সব ডিম খেয়ে শেষ করে ফেলছি তাই না বাবা?
হ্যাঁ তাই। এখন বই নিয়ে বস।
বই নিয়ে বসতে ইচ্ছা করছে না।
কি ইচ্ছা করছে?
নিশা অবিকল বড়দের মত গলায় বলল, কি যে ইচ্ছা করছে তাও তো জানি না।
আনিস হেসে ফেলল। তার ছোট মেয়েটি বড় মায়াবতী হয়েছে। কথা বলার কি অদ্ভুত ধরন। কোথেকে পেয়েছে এসব?
টগর বলল, আজ রাতে কি গল্প বলার আসর বসবে বাবা?
এখনো বুঝতে পারছি না। সম্ভাবনা আছে।
গল্প বলার আসর শেষ পর্যন্ত বসল না। নিশা ঘুমিয়ে পড়েছে। একা একা গল্প শুনতে টগরের ভালো লাগে না। অথচ তার ঘুমও আসছে না। আনিস তার পিঠে চুলকে দিল, মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, তাতেও কিছু হলো না। টগর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। একটু পর পর বলছে— ঘুম আসছে না বাবা।
একেবারেই আসছে না?
না।
তাহলে আস নতুন ধরনের একটা খেলা দুজনে মিলে খেলি।
কি খেলা?
এই খেলাটার নাম হচ্ছে সত্যি-মিথ্যা খেলা। আমি তোমাকে প্রশ্ন করব তুমি মিথ্যা জবাব দেবে। দশটা প্রশ্ন করব। প্রতি বারই যদি মিথ্যা জবাব দিতে পার তাহলে তুমি জিতে যাবে। যেমন ধর আমি যদি জিজ্ঞেস করি, তোমার নাম কি? তুমি যদি বল টগর তাহলে তুমি হেরে যাবে। সব জবাব হতে হবে মিথ্যা।