জি আচ্ছা।
তিন তারিখটা মনসুরের জন্যে খুব শুভ
তিন তারিখটা মনসুরের জন্যে খুব শুভ।
মিলির সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল তিন তারিখে। প্রথম যেদিন মিলি তাকে ডাক্তার হিসেবে তাদের বাড়িতে ডাকে ঐ দিনও ছিল তিন তারিখ। নিউম্যারোলজি এই সংখ্যাটি সম্পর্কে কি বলে সে জানে না- তবে কিছু নিশ্চয়ই বলে।
আজ হচ্ছে তিন তারিখ।
সকাল থেকেই মনসুরের মনে হচ্ছিল আজ তার জীবনে বড় কোন ঘটনা ঘটবে। সকালে দাঁত মাজতে মাজতে লক্ষ্য করল দুটি শালিক কিচিরমিচির করেছে। খুবই শুভ লক্ষণ, দুই শালিক মানেই হচ্ছে আনন্দ। আনন্দময় কিছু আজ ঘটবেই। দিনটাও চমৎকার। আকাশ ঘন নীল। বাতাসও কেমন জানি মধুর।
মনসুর নাস্তা খেয়েই মিলিদের বাড়ির দিকে রওয়া হল। সাত সকালে ঐ বাড়িতে উপস্থিত হবার জন্যে কোন একটা অজুহাত দরকার। সেই অজুহাতও তৈরি করা হয়েছে। মনসুর গিয়ে বলবে কয়েক দিনের জন্যে দেশের বাড়িতে যাবার আগে দেখা করতে এলাম ইত্যাদি।
নিরিবিলি বাড়ির গেট খুলে ভিতরে ঢোকার সময়ও আরেকটি সুলক্ষণ দেখা গেল। আবারো দুটি শালিক। আনন্দে মনসুরের বুক টিপটপ করতে লাগল। সে মনস্থির করে ফেলল, যে করেই হোক মিলিকে সেই বিশেষ বাক্যটি বলবে। দরকার হলে চোখ বন্ধ করে বলবে- আমি তোমাকে ভালবাসি। তবে বলার আগে দেখে নিতে হবে কথাগুলো মিলিকেই বলা হচ্ছে, অন্য কাউকে না। রং নাম্বার না হয়ে যায়।
সোবাহান সাহেব বারান্দায় ইজিচেয়ারে শুয়ে তামাক টানছিলেন।
ডাক্তাকে দেখে হাসি মুখে বললেন, কেমন আছ ডাক্তার?
স্যার ভাল আছি।
অনেক দিন আস না। এদিকে ৷
খুব ব্যস্ত থাকি আসা হয়ে উঠে না।
তোমার সঙ্গে খুব জরুরি কথা আছে। বস এখানে।
মনসুর বসল। তার বুক ধক ধক করছে। কি সেই জরুরি কথা?
প্ৰবন্ধ পড়ে শুনাবেন নাতো? এছাড়া আর কি জরুরি বিষয় থাকতে পারে? আজও যদি প্ৰবন্ধ শুনতে হয় তাহলে সাড়ে সর্বনাশ। শালিক দুটি এখনো ঘুরছে। লক্ষণ শুভ। একটি যদি উড়ে চলে যায় তাহলে বুঝতে হবে প্ৰবন্ধ শুনতে হবে। এখনো উড়ছে না।
ডাক্তার!
জি স্যার।
তোমাকে যে আমি অত্যন্ত স্নেহ করি তা কি তুমি জান?
মনসুরের ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়তে লাগল। কথাবার্তা কোন দিকে এগুচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। তার তৃষ্ণা বোধ হচ্ছে।
আমি চাই ভাল একটি মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে হোক। সুখী হবার জন্যে ভাল একটি মেয়ের পাশে থাকা দরকার।
মনসুরের হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে। কি পরম সৌভাগ্য। স্বপ্ন নাতো আবার? না। স্বপ্ন বোধ হয় না। স্বপ্নে ঘাণ পাওয়া যায় না- এইতো তামাকের কড়া গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
আমি তোমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছি। বলতে পারি তো?
অবশ্যই পারেন, অবশ্যই।
প্ৰস্তাবটি তোমার কাছে গ্ৰহণযোগ্য হবে বলেই আমি মনে করি। কারণ আমি শুনেছি মেয়েটিকে তুমি পছন্দ কর।
এসব ক্ষেত্রে চুপ থাকাই বাঞ্ছনীয়। মনসুর তা পারল না। মনের উত্তেজনায় বলে ফেলল- স্যার আপনি ঠিকই শুনেছেন।
বিয়ের ব্যাপারে তোমার তাহলে আপত্তি নেই?
জ্বি না।
এদেশের ছেলেদের একটি প্রবণতা হচ্ছে বিয়ের পর স্ত্রীকে অবহেলা করা— আশা করি তুমি তা করবে না।
অবশ্যই না।
স্ত্রীর পড়াশোনার দিকটিও দেখবে। যেন তাকে পড়াশোনা ছাড়তে না হয়।
কোন দিন ছাড়তে হবে না।
তোমার কথায় খুশী হলাম। তুমি বস আমি এমদাদ সাহেবকে খবরটা দেই। ভদ্রলোক খুশী হবেন। নাতনীকে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছিলেন। মেয়েটি ভাল। তুমি সুখী হবে।
মনসুরের মুখ থেকে কু কু জাতীয় শব্দ হল। আদি মানুষ গাছের ডালে বসে এই রকম শব্দেই মনের ভাব প্ৰকাশ করত। প্ৰাথমিক ধাক্কাটা এই শব্দের উপর দিয়েই গেল। তারপর খুব ঘাম হতে লাগল। সোবাহান সাহেব দ্বিতীয়বার বললেন, তুমি বস আমি সংবাদটা এমদাদ সাহেবকে দিয়ে আসি। উনি খুশী হবেন। মনসুর কিছু বলল না। তার ইচ্ছা করল ছুটে পালিয়ে যেতে তাও সে পারছে না। মনে হচ্ছে পেরেক দিয়ে কেউ তাকে চেয়ারের সঙ্গে গেঁথে ফেলেছে।
ডাক্তার পুতুলকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এই সংবাদ মিলি শুনল এমদাদ সাহেবের কাছে। ডাক্তারকে সে চিঠি লিখে এসেছিল। গাধা ডাক্তার কি চিঠি পড়েনি? মিলি তীক্ষা কণ্ঠে বলল, ডাক্তার রাজি হয়েছে?
ষোল আনার উপরে দুই আনা, আঠারো আনা রাজি।
কি বলছেন। আপনি?
সত্যি কথা বলতেছি ভইন। আইজ হইল মঙ্গলবার সত্য দিবস। সত্য দিবসে মিথ্যা বলি ক্যামনে? এখন তুমি ভইন পুতুলারে একটু সাজায়ে দেও।
এখন সাজিয়ে দিতে হবে কেন?
ডাক্তার বইসা আছে। পুতুলরে নিয়া ঘুরা ফিরা করবে। একটু রং ঢং আর কি? এতে দোষের কিছু নাই। দুদিন পরে বিবাহ। বিবাহ না হইলে অন্য কথা ছিল। ভইন একটা ভাল দেইখ্যা শাড়ি পরায়ে দেও। লাল রঙ্গে পুতুলারে মানায় ভাল।
ডাক্তার যতটা হতভম্ব হয়েছিল। মিলি তারচে বেশি হতভম্ব হল। তার চোখ জ্বালা করছে। গলার কাছে কি যেন আটকে আছে। নিজেকে সামলাতে অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে। বাথরুমে দরজা বন্ধ করে খানিকক্ষণ হিউমাউ করে কাদতে পারলে ভাল লাগত। কাঁদতেও ইচ্ছা করছে না। ইচ্ছা করছে ইট ভাঙা মুগুর দিয়ে ডাক্তারের মাথায় প্ৰচণ্ড একটা বারি দিতে।
এমদাদ বলল, তাড়াতাড়ি কর ভইন। পুতুলের মুখে পাউডার একটু বেশি কইরা দিবা। মাইয়া আবার শ্যামলা ধাঁচের। পাউডার ছাড়া এই মাইয়ার গতি নাই।
পুতুলকে পাঠিয়ে দিন আমি সাজিয়ে দিচ্ছি।