কি কথা।
এবছর আমাদের নতুন ফ্ল্যাট দেবে কি না।
মনে থাকলে জিজ্ঞেস করব।
তোর দাদীমা’র কথা বলিস। বেচারীর এখন একার একটা ঘর দরকার।
আচ্ছা বলব।
তোর মুখটা এমন কালো লাগছে কিছু হয়নি তো মা?
না।
পিপলী রেশন কার্ড নিয়ে গেল। পিপড়া সমাজের নিয়ম হল –সব খাদ্য স্টোর রুমে জমা হবে। তারপর হিসেব হবে কি পরিমাণ খাদ্য আছে। হিসেব মত সব খাবার সমানভাবে ভাগ করা হবে। কেউ বেশি পাবে না। কেউ কমও পাবে না।
মাঝে মাঝে কিছু খাবার পাওয়া যায় যার পরিমাণ খুবই অল্প –যেমন এক টুকরা চকলেট। খুব দামী খাবার পরিমাণ অল্প হলে রাণী মাকেই উপহার দেবার নিয়ম। তবে এদের রাণী মা কোন খাবার উপহার হিসেবে নেন না। যত ভাল খাবারই হোক প্রজাদের দিয়ে দেন। এ জাতীয় খাবারের বেলায় নিয়ম অন্য। কাকে বাড়িতে নিতে দেয়া হবে না –এখানে এসে খেতে হবে। খাবার সময় বলতে হবে –রাণীমা’র মঙ্গল হোক।
ষ্টোর ইনচার্জ পিপলীকে দেখে বললেন, কি খবর মা? মুখ মলিন কেন? শরীর ভাল।
জি চাচা শরীর ভাল।
খাবার নিয়েছিস?
হু।
পিপলীর ভাগে পড়ল চারদানা চিনি। এক টুকরা নোনতা বিসকিট। শাদা শাদা এক ধরনের গুড়া। স্টোর-ইন-চার্জকে পিপলী বলল, চাচা, ওটা কি? খেতে ভয়ংকর তিতা।
স্টোর-ইন-চার্জ রাগী গলায় বললেন, তুই কি এটা খেয়ে দেখেছিস?
হু।
তোকে নিয়ে তো বড্ড যন্ত্রণা হল। কতবার বলেছি জিজ্ঞেস না করে কিছু মুখে দিবি না।
জিনিসটা কি চাচা? বিষ না-কি?
না, বিষ না। এক ধরনের সাবান। গুড়া সাবান। গায়ে মেখে গোসল করার জন্যে আনা। তোর বুদ্ধিশুদ্ধি এখনো হলো না। কিছু দেখলেই ফট করে মুখে দিয়ে দেয়া। যা, জিনিসপত্র নিয়ে বিদেয় হয়ে যা। একা সব নিতে পারবি, না লোক দেব?
না, লোক লাগবে না। আমি নিজেই নিতে পারব। একবারে না পারলে দুবারে এসে নেব।
বাহু, এই তো লক্ষ্মী মেয়ের মতো কথা। নিজের কাজ নিজে করার আনন্দই আলাদা। তোর দাদীমা কেমন আছে রে পিপলী?
ভাল। আচ্ছা চাচা, আমরা কি এ বছর নতুন ফ্ল্যাট পাব না?
উঁহু। রাণী-মা’র হুকুমে বাড়ি বানানো এখন বন্ধ। এই মাটিও রাণী-মা’র পছন্দ হচ্ছে না। আরো দূর থেকে মাটি আনতে বলেছেন। তবে বাড়ি তৈরি হলে প্রথম ফ্ল্যাটটা তোদের দেয়া হবে। তোর দাদীমাকে এই নিয়ে কিছু ভাবতে নিষেধ করবি।
আচ্ছা। যাই চাচা?
কাল মনে করে আসিস। ভালখাবার পাওয়া গেছে শুঁটকি মাছ। অনেক দূর থেকে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসার কথা। কাল ভোরেই সব ভাগাভাগি করে দেব।
পিপলী বলল, শুঁটকি মাছ নিয়ে আগের বারের মত কালো পিপড়াদের সঙ্গে যুদ্ধ হবে না তো।
না। বার বার কি যুদ্ধ হয়। কিছুই হবে না দেখিস।
আমাদের সৈন্য যায় নি চাচা। গিয়েছে।
আগের বারের চেয়ে অনেক বেশি গিয়েছে?
না। আগের বার যত জন গিয়েছিল, এবার ততজনই গেছে।
আরো বেশি পাঠানো উচিত ছিল না চাচা?
পাঠালে ভাল হত। তবে এসব ব্যাপারতো মা রাণীমাই ভাল বুঝেন। উনিই সব ঠিক করেন। আমাদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার দায়িত্ব তো রাণী মা’র। ঠিক না-মা?
হ্যাঁ ঠিক চাচা।
পিপলী বাড়ি ফিরে দেখে সব কেমন থমথম করছে। পিপলীর দাদীমা বিছানায় শুয়ে বিড় বিড় করে বলছেন, কি সর্বনাশ হয়ে গেল রে। কি সর্বনাশ হয়ে গেল রে। আশে পাশের ফ্ল্যাট বাড়ি থেকেও কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছে। পিপলীর মা একবার ছুটে রাস্তায় যাচ্ছেন, আরেকবার ঢুকছেন ঘরে। পিপলী বলল, কি হয়েছে মা?
যুদ্ধ লেগে গেছে রে। ভয়ংকর যুদ্ধ লেগে গেছে। এই মাত্র খবর এসেছে।
কালো পিপড়াদের সঙ্গে যুদ্ধ?
হ্যাঁ। ভয়ংকর যুদ্ধ।
বল কি মা? আমাদের এখান থেকে সৈন্য যাচ্ছে না?
না। রাণী মা হুকুম দিয়েছেন শ্রমিক পিপড়াদের যুদ্ধে যাবার জন্যে।
ওরা তো যুদ্ধ জানে না।
রাণী হুকুম দিয়েছেন। কিছু তো করার নেই।
এ রকম হুকুম উনি কেন দিলেন মা? উনি সৈন্য পাঠালেই পারেন। আমাদের কি সৈন্যের অভাব আছে?
রাণী মা যখন শ্রমিক পাঠাতে বলেছেন তখন ভেবে চিন্তেই বলেছেন। উনি অনেক কিছু জানেন যা আমরা জানি না। রাণী-মা’র মঙ্গল হোক। বলেই পিপলী বেগমের মা ছুটে বের হয়ে গেল।
পিপলীও গেল মা’র পেছনে পেছনে। কি করুণ দৃশ্য শ্রমিক পিপড়ারা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে, তাদের ছেলেমেয়েরা কাঁদছে। শ্রমিক পিপড়া মাথা নিচু করে নামছে রাস্তায়। শুকনো মুখে এগুচ্ছে সামনের দিকে। প্রধান রাস্তার শুরুতে উঁচু মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে শহরের মেয়র রাণী-মা’র হুকুম পড়ে শুনাচ্ছেন —
শ্রমিক পিপীলিকার জন্যে
রাণী মা’র জরুরী বার্তা।
কালো পিপড়াদের সঙ্গে আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছি। নির্দেশ দিচ্ছি সকল শ্রমিক পিপীলিকাদের তারা যেন এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। অপ্রাপ্তবয়স্ক, রুগ্ন ও অসুস্থ পিপীলিকারাই শুধু এই নির্দেশের বাইরে থাকবে।
শ্রমিক পিপীলিকার জন্যে
রাণী-মা’র জরুরী বার্তা
কালো পিপড়াদের সঙ্গে আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছি …
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পিপলী নির্দেশ শুনল। তার এত মন খারাপ লাগছে। শ্রমিক পিপড়ারা যুদ্ধের কিছুই জানে না। এরা যাবে আর মারা পড়বে। রাণী-মা কেন এদের পাঠাচ্ছেন?
পিপলী এগিয়ে গেল মেয়রের দিকে। চিকণ গলায় ডাকল, মেয়র চাচা, মেয়র চাচা।
মেয়র তাকালেন পিপলীর দিকে। তাকিয়েই চমকে উঠলেন –আরে পিপলী। তুমি আমার আশে পাশে থাক। তোমার সঙ্গে জরুরী কথা আছে। তোমার মা’র সঙ্গে দেখা হল কিছুক্ষণ আগে তাঁকে বলেছি। তোমাকে বলা হয় নি। তোমার মা তোমাকে খুঁজছেন।