পিপীলিকার কি খাদ্য তা স্কুলে পড়ানো হয়? হয় না!
হয়।
সেখানে নিশা ফুলের মধু নামের কোন খাবারের নাম পড়েছ?
না।
এই খাবার কাদের খাবার জান?
জানি না।
এটা হচ্ছে উই পোকাদের খাবার।
উইপোকাদের খাবার?
হ্যাঁ। ওরা এই খাবার সংগ্রহ করে। খায়। খেয়ে নাচানাচি করে।
এখন কি বুঝতে পারছ আমাদের রাণী-মা আসলে একটি জন্মান্ধ উইপোকা? এই জন্যে তিনি আমাদের খাবার খান না।
বুঝতে পারছি।
কি ভয়ংকর ঘটনা! তাই না পিপলী?
হ্যাঁ, তাই এতবড় একটা ঘটনা অথচ কেউ বুঝতে পারল না কেন?
পারবে না কেন? পেরেছে। অনেকেই বুঝতে পেরেছে। অনেকেই অনুমান করেছে। তবে যারাই অনুমান করেছে –তাদেরই জায়গা হয়েছে এই অন্ধকূপে।
পিপলী হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। তার হতভম্ব ভাব কাটতে সময় লাগল। সে বলল, একটা উইপোকা কি করে আমাদের রাণী হয়ে বসল?
অরং দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, মাঝে মাঝে পিপীলিকা গোত্রে এরকম হয়। উইপোকা এসে পিপড়ার রাণীকে মেরে তার জায়গা দখল করে নেয়। কাজটা তারা এমনভাবে করে যেন কেউ কিছু বুঝতে না পারে। জন্মান্ধ উইপোকা অসম্ভব ধূর্ত। তবে আমরা এখন তাকে উচিত শিক্ষা দেব।
কিভাবে?
সেটা তুমি ঠিক করবে। তুমি যেভাবে শিক্ষা দিতে চাও! সেই ভাবেই শিক্ষা দেয়া হবে। হুকুম দিতে হবে তোমাকে।
পিপলী অবাক হয়ে বলল, আমাকে কেন?
তুমি একটা বড় ব্যাপার এখনো ধরতে পারছ না। পিপীলিকা গোত্রের একটা প্রধান নিয়ম হল রাণীর হুকুম ছাড়া তারা কিছু করতে পারে না। তাদের কিছু করতে হলে রাণীর হুকুম লাগে।
আমরা এই অন্ধকূপে দীর্ঘদিন পড়ে আছি। এই জায়গাটা পাথরের তৈরী। কিন্তু আমরা খুঁজে খুঁজে এমন একটা জায়গা বের করেছি যা মাটির তৈরি। আমাদের কর্মী পিপড়ারা অল্প কিছুদিন পরিশ্রম করলেই এই মাটিতে সুরঙ্গ তৈরী করে ফেলতে পারবে। কিন্তু তারা তা করবে না –যতদিন পর্যন্ত না রাণী হুকুম দিচ্ছেন। এখন পিপলী বেগম, তুমি হবে আমাদের রাণী। তুমি আমাদের হুকুম দেবে।
আমিই রাণী?
হ্যাঁ, তুমি রাণী। এখানে আমরা যারা আছি তারা সবাই পুরুষ। পিপীলিকা গোত্র পুরুষের হুকুমে চলে না। তাদের রাণীর হুকুম লাগে। এখন তুমি আমাদের রাণী। তুমি হুকুম দেবে, আমরা কাজ শুরু করব।
আপনারা মুখে বললেই আমি রাণী হয়ে যাব?
এ ছাড়া আর উপায় কি?
বৃদ্ধ অরং একটুক্ষণ থেমে বলল –পিপলী বেগম এখন থেকে আমাদের রাণীমা। রাণীর কল্যাণ হোক! মঙ্গল হোক!
সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে বলল, রাণী-মা’র কল্যাণ হোক। মঙ্গল হোক। পিপীলিকা গোত্রের মহান রাণী –আমরা আপনার হুকুমের অপেক্ষা করছি।
পিপলী বলল, হুকুম দেবার আগে আমি জানতে চাচ্ছি এই যে দীর্ঘদিন আপনারা বেঁচে আছেন, কিভাবে বেঁচে আছেন। খাদ্য পেয়েছেন কোথায়?
বৃদ্ধ অরং বলল, সেই দুঃখের কাহিনী আপনার না শোনাই ভাল রাণী-মা। আমাদের মধ্যে যারা মারা গেছেন –তাদেরকে আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। আমরা জানি পিপীলিকা গোত্রের কাছে আমরা অপরাধ করেছি। অপরাধের যে শাস্তি আপনি দেবেন সেই শাস্তিই আমরা মাথা পেতে নেব।
পিপলী বলল, আপনারা অপরাধ করেছেন। বিশেষ ভয়ংকর পরিস্থিতির কারণে অপরাধ করেছেন বলেই আমি তা ক্ষমা করলাম। এখন আপনাদের মধ্যে যারা কর্মী তাঁরা সুরঙ্গ খোঁড়ার কাজে লেগে যান। যারা কর্মী নন তারাও সুরঙ্গ খোঁড়ার কাজে সাহায্য করবেন।
সুরঙ্গ খোঁড়া শেষ হবার পর আমরা কি করব রাণী-মা?
তা ঠিক করা হবে যখন আমরা অন্ধকূপ থেকে বের হব, তখন। আপনারা কাজে লেগে পড়ুন। শুধু বৃদ্ধ অরং থাকবেন আমার পাশে। আর সবাই কাজে যাবেন।
সব পিপড়া একসঙ্গে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বৃদ্ধ অরং রইল পিপলী বেগমের কাছে। পিপলী ফিসফিস করে বলল, সুরঙ্গ খোঁড়া শেষ হলে আমরা কি করব?
অরং বলল, তা তো রাণী-মা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।
আপনি আমাকে বুদ্ধি দেবেন না?
পিপীলিকা গোত্রে রাণীকে বুদ্ধি দেবার নিয়ম নেই।
শুনুন, বৃদ্ধ অরং আমি সব পুরানো নিয়ম-কানুন ভাঙব। আমি করব নতুন নতুন নিয়ম। আমার নতুন নিয়মে আপনি বা আপনার মত যারা জ্ঞানী তারা আমাকে বুদ্ধি দিতে পারবেন। এখন আমাকে বুদ্ধি দিন।
বৃদ্ধ অরং বলল, উইপোকা রাণীকে খুব সহজেই সরানো যাবে। জন্মান্ধ উইপোকা আলো সহ্য করতে পারে না। আমরা এমনভাবে মাটি ফুটো করব যেন আলো গিয়ে পড়ে উইপোকা রাণীর প্রাসাদে। এতেই কাজ হবে।
এ ছাড়া আর কোন বুদ্ধি কি আপনার আছে?
আমরা মাটি ফুটো করে সরাসরি উইপোকা-রাণীর প্রাসাদে চলে যেতে পারি। তখন আমাদের যুদ্ধ করতে হবে রাণীর নারী সৈন্যদের সাথে। সেইসব সৈন্যদের সবাই অন্ধ। কাজেই আমাদের যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাছাড়া একবার সত্য প্রকাশ হয়ে পড়লে পিপীলিকা সৈন্যরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।
মাটি কেটে সুরঙ্গ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বিপুল উৎসাহে সবাই মাটি কাটছে। নতুন রাণী পিপলী বেগম এগিয়ে গেল। শান্ত গলায় বলল, আমিও মাটি কাটব। আমাকে দেখিয়ে দিন কিভাবে মাটি কাটতে হয়।
অরং অবাক হয়ে বলল, আপনি হচ্ছেন সবার রাণী-মা। আপনি সুরঙ্গ কাটবেন তা-কি করে হয়?
সবাই কাজ করবে, আমি বসে বসে দেখব তা হয় না। তাছাড়া আমি তো আপনাদের বলেছি –আমার রাজত্বের নিয়ম-কানুন আলাদা। আজ থেকে নতুন নিয়ম –কেউ বসে থাকতে পারবে না। সবাইকে কাজ করতে হবে।