সূর্য-দীঘল বাড়ীর তালগাছের তলায় করিম বক্শের মৃতদেহ টান হয়ে পড়ে আছে। আশ-পাশ গ্রামের লোক ছুটে আসে দেখ্তে। মৃতের শরীরে কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। সকলেই একমত— সূর্য-দীঘল বাড়ীর ভূত তার গলাটিপে মেরেছে।
যে হিম্মত বুকে বেধে জয়গুন এত দিন সূর্য-দীঘল বাড়ীতে ছিল, তা আজ খান্ খান্ হয়ে যায় এ ঘটনার পরে।
আজ বারবার করিম বকশের কথাই মনে পরে জয়গুনের। বেদনায় বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। দরদর ধারায় পানি ঝরে গাল বেয়ে। আহা বেচারা! জীবনে কাউকে ভালোবাসেনি। কারো ভালোবাসা পায়ও নি সে।
শফির মা আগে আগে গাইরি-বোচকা বাঁধে। জয়গুন জিজ্ঞেস করে—বাড়ী ছাইড়া কই যাইবা?
—আগেত সোনার মানিকগো লইয়া বাইর অ। খোদার এত বড় দুইন্যায় কি আর এট্টু জা’গা পাইতাম না আমরা?
ছেলে-মেয়েদের হাত ধরে জয়গুন ও শফির মা বেরিয়ে পড়ে। মনে তাদের ভরসা খোদার বিশাল দুনিয়ায় মাথা গুঁজবার একটু ঠাঁই তারা পাবেই।
চলতে চলতে আবার জয়গুন পেছন ফিরে তাকায়। সূর্য-দীঘল বাড়ী! মানুষ বাস করতে পারে না এ বাড়িতে। দু’খানা ঝুপড়ি। রোদ বৃষ্টি ও অন্ধকারে মাথা গুঁজবার নীড়। দিনের শেষে, কাজের শেষে মানুষ পশু-পক্ষী এই নীড়ে ফিরবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
ঐ উঁচু তালগাছ অনেক কালের অনেক ঘটনার নীরব সাক্ষী এটা। তারা এগিয়ে চলে।
বহুদূর হেঁটে শ্রান্ত পা-গুলোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্যে তারা গাছতলায় বসে। উঁচু তালগাছটা এত দূর থেকেও যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
আবার তারা এগিয়ে চলে…….