সেটাই তো বলার চেষ্টা করছি। তুই তো কথাই শুনছিস না। মুখ ভর্তি হাসি। হাসির এখনো কিছু হয় নি।
তুমি বলো আমি শুনছি।
যেদিন হাসনাতকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়, ঐদিন অর্থাৎ আটই জুলাই ছিল সঞ্জুর বিয়ের দিন। ঐ দিন তার বিয়ে হয়। মিরপুরের উৎসব কমিউনিটি সেন্টারে।
মামা, আটই জুলাই তো পার হয়ে গেছে। ঐ দিন তো সঞ্জুর বিয়ে হয় নি। ও চাঁদপুরে না কোথায় যেন তার বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
কথার মাঝখানে এত কথা বললে বুঝবি কী করে? শুনে যা, পরে ব্যাখ্যা করব। আটই জুলাই ছিল সঞ্জুর বিয়ে। ঐ রাতেই তুনা নিশিথিনী এক্সপ্রেসে করে স্বামী স্ত্রী দুজন চলে যায় চিটাগাং। সেখান থেকে যায় কক্সবাজার। তারা দুরাত ছিল কক্সবাজারে। সমস্ত ডকুমেন্টস থাকবে আমাদের হাতে। আমরা বলব যে ছেলের বিয়ে হয় আট তারিখে, যে এগারো তারিখ পর্যন্ত ঢাকার বাইরে সে কি ঢাকায় কোনো লোককে খুন করতে পারে? তুই বল পারে?
না।
এই তো পথে আসছিস। তুর্না নিশিথিনী ট্রেনের ফার্স্টক্লাস এসি কামরার দু’টা ব্যাক ডেটের টিকিট জোগাড় হয়েছে। সঞ্জুর নামে টিকিট ইস্যু হয়েছে।
ও।
চিটাগাং-এ যে হোটেলে ছিল সেই হোটেলে ব্যাক ডেটে বুকিং স্লিপ হয়েছে। কক্সবাজারে হয়েছে। মিরপুরের উৎসব কমিউনিটি সেন্টারে ব্যাক ডেটে বুকিং স্লিপ আছে।
ও।
বাকি আছে শুধু ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাবিননামা। একটু ঝামেলা হচ্ছে—তবে সন্ধ্যা নাগাদ খবর পেয়ে যাব যে এটাও কমপ্লিট। এইসব কাজ আমি খুব অল্প পয়সায় সেরেছি। মাত্র সাড়ে তের হাজার খরচ হয়েছে। কাজি অফিসের কাবিননামাটায় বেশি লাগবে। মিনিমাম দশ হাজার ধরে রাখ।
মিথ্যা বিয়ে?
মিথ্যা হবে কেন? সত্যি সত্যি বিয়ে। কনক মেয়েটার সঙ্গে বিয়ে। একটু ব্যাক ডেটে হচ্ছে। সেটা কারোর জানার তো দরকার নেই। আমির কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেব। তারিখটা বসানো হবে পিছনের। ক্লিয়ার?
সঞ্জু রাজি হবে না।
রাজি হবে না কেন?
কনক মেয়েটাকে সে পছন্দ করে না।
সালু মামা থমথমে গলায় বললেন, ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচার জন্যে আমি যদি পথ থেকে একটা নেড়ি কুত্তি ধরে এনে শাড়ি পরিয়ে নিয়ে গিয়ে বলি সঞ্জু একে বিয়ে করতে হবে, সঞ্জু সোনামুখ করে বলবে—কবুল কবুল কবুল।
চিকেন কাটলেট এবং ভেজিটেবল প্যাকোরা চলে এসেছে। সালু মামা চিকেন কাটলেটে একটা কামড় দিয়ে বললেন—জিনিস খারাপ না। ঝাল একটু বেশি, কিন্তু ঝালটার প্রয়োজন ছিল। তুই কিছু খাবি না?
না।
পাথরের মতো মুখ বানিয়ে ফেলেছিস কী জন্যে? তুই কি ভেবেছিস সঞ্জুর সঙ্গে কথা না বলে আমি এগিয়েছি? ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।
সঞ্জু রাজি?
অবশ্যই রাজি। আমি ইস্তিয়াক সাহেবের সঙ্গে এই প্ল্যান নিয়ে কথা বলেছি। উনি আমার প্ল্যানে মুগ্ধ। তবে তিনি বলেছেন এই মুহূর্তে যেন মকবুল হোসেন কিছু না জানেন। আমরা পুরো ব্যাপারটা পুরোপুরি গুছিয়ে রাখব। খেলার জন্যে যে সব তাস দরকার সব হাতে থাকবে। প্রয়োজন হলে শেষ মুহূর্তে মকবুল হোসেনকে আমাদের তাস দেখাব। ব্যাটার চোখ শুধু যে কপালে উঠবে তা-না, মাথার তালুতে উঠে যাবে। এখন বল আমার বুদ্ধি কেমন?
মামা তোমার বুদ্ধি ভালো।
সালু মামা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, বুদ্ধি শুধু ভালো বললে বুদ্ধির অপমান করা হয়। আমার অতিরিক্ত বুদ্ধি। অতিরিক্ত বুদ্ধির কারণে নিজের জন্যে কিছু করতে পারলাম না। তুই এক কাজ কর, অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নে। আজ আমার সঙ্গে থাকবি।
কেন?
অনেক কাজ বাকি আছে। ব্যাক ডেটে বিয়ের কার্ড ছাপতে দেব। এই কার্ড বিলি করবার দরকার নেই—কিছু স্যাম্পল থাকবে। কাজির অফিসে যাব। আমার যে বন্ধু কাজি অফিসের ব্যাপারটা দেখছে তার বাসায় রাতে আমার দাওয়াত। তুইও থাকবি। মামার সঙ্গে ঘুরবি, কোনো সমস্যা আছে?
না।
আমার ঐ বন্ধুর আবার সামান্য মদ্য পানের অভ্যাস আছে ওর জন্যে দু’টা ব্ল্যাক লেভেল কিনতে হবে। আমার দিক থেকে উপহার। এত বড় একটা কাজ করে দিচ্ছে। বুঝতেই পারছিস। বুঝতে পারছিস না?
ফরহাদ উদ্দিন ক্ষীণ স্বরে বললেন, পারছি।
সঞ্জুকে নিয়ে ভাবিস না। বেলাইনে চলে যাওয়া ছেলেপুলেকে লাইনে তুলতে হয় বিয়ে দিয়ে। এক দেড় বছর স্ত্রীর সঙ্গে লটর-পটর করতে করতেই পার হয়ে যায়। তারপর সংসারে ছেলে-মেয়ে চলে আসে, তখন আর যাবে কোথায়? ঠিক বলেছি কি-না বল।
হুঁ।
টাকার ব্যবস্থা করেছিস?
কী টাকা?
লাখ দুই টাকা লাগবে বলেছিলাম না? মকবুলকে আজ কালের ভিতর দিয়ে দিতে হবে। আমি যে প্যাঁচ খেলেছি তাতে অল্পের ওপর দিয়ে যাবে। মকবুলের ডিমান্ড ছিল ফাইভ।
ও
চিমশা মেরে থাকিব না তো। বি হ্যাপী। কনক মেয়েটাকেও তো বিয়েতে রাজি করাতে হবে। তুই করবি না আমি করব?
ফরহাদ উদ্দিন জবাব দিলেন না।
সালু মামা বললেন, তুই বল? তুই বললেই হবে। এখন যা বাসায়। একটা টেলিফোন কর, তারপর চল বের হই।
বাসায় টেলিফোন করব কেন?
ফিরতে দেরি হবে এটা জানিয়ে দে। নয়তো দুশ্চিন্তা করবে।
ফিরতে দেরি হবে কেন?
আরে এতক্ষণ কী বললাম–নানান কাজ কর্ম আছে। রাতে বন্ধুর বাসায় যাব। সেখানে রাত হবে। যা, চট করে টেলিফোনটা করে আয়; আমি আরেক কাপ চা খাই। আজকের চা-টা ঐ দিনের মতো হয় নাই।