হুঁ।
দাঁতগুলি নকল, কিন্তু বোঝার কোনো উপায় নেই। মাসে দুবার কলপ দেই। একবার ফ্যাসিয়েল করাই। ভালো একটা পার্লার আমার পরিচিত আছে, এরা খুবই যত্ন করে কাজটা করে। ফ্যাসিয়েল কখনো করিয়েছিস?
জ্বি না।
এটা মুখের একটা ম্যাসেজ। ক্রিম টিম মাখিয়ে কিছুক্ষণ ডলাডলি করে। স্টিম দেয়। এতে মুখের চামড়া ভালো হয়। চামড়ায় যে দাগ পড়ে দাগগুলি উঠে যায়। বয়স কম লাগে। বুড়ো সেজে ঘুরে বেড়ানোর দরকার কী? কোনো দরকার নেই। তোর অফিস ঘরে সিগারেট খাওয়া যায় তো?
যায়।
বাঁচলাম। আজকাল বেশিরভাগ অফিসেই নো স্মোকিং করে দিয়েছে। অফিসে কারো সঙ্গে দেখা করতে গেলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবার জোগাড় হয়। একটা জিনিস এরা বোঝে না রাস্তায় এক ঘণ্টা গাড়ির ধোয়া খাওয়া দশ প্যাকেট সিগারেট খাওয়ার সমান। ঠিক বলেছি না?
জি।
সালু মামা ফতুয়ার পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করতে করতে বললেন—চা দিতে বল। আর দরজা টেনে দে। জরুরি কথাগুলি শেষ করি। এখানে কথা বলতে অসুবিধা আছে না-কি ক্যান্টিনে চলে যাব?
এখানেই বলুন।
সালু মামা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন—ইস্তিয়াকের কাছে সঞ্জুর ঘটনা শুনে আমার কচ্ছপের মতো অবস্থা হয়েছিল। হাত পা সব দেখি শরীরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। বলে কী? আমাদের সঞ্জু। দুধের শিশুর এ-কী কারবার!
ফরহাদ উদ্দিন বললেন, ঘটনা ঠিক না। সঞ্জু হাসনাত নামে কাউকে চিনে।
চিনে না?
জ্বি না। ওরা ভুল করেছে। নাম গুলিয়ে ফেলেছে।
সালু মামা চিন্তিত গলায় বললেন, পুলিশ এমন জিনিস যে, ওরা যদি শুদ্ধ করে তাহলেও বিপদ, যদি ভুল করে তাহলে আরো বড় বিপদ। আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হলো বিপদ কাটিয়ে বের হতে হবে।
বেয়ারা চা নিয়ে এসেছে। সালু মামা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তৃপ্তির শব্দ করলেন। ফরহাদ উদ্দিন মামার দিকে তাকিয়ে আছেন। মানুষটাকে দেখে তাঁর ভরসা লাগছে। এমনভাবে কথা বলছে যেন কিছুই হয় নি।
ফরহাদ!
জ্বি মামা।
তুই কোনোরকম চিন্তা করিস না। চিন্তা ভাবনার ব্যাপারটা তুই আমার হাতে ছেড়ে দে। সঞ্জু কী করেছে এটা কাক পক্ষীও টের পাবে না। আমরা পুরো ঘটনাই গিলে ফেলব।
ও কিছু করে নি মামা।
ফাইন। অতি উত্তম। না করলে তো ভালো। করবেই বা কেন? ও ভদ্রলোকের ছেলে না? যাই হোক পুলিশ যখন সন্দেহ করছে তাদের সন্দেহ দূর করতে হবে। ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের সঙ্গে আমি অলরেডি কথা বলেছি। নম্র ভদ্র বিনয়ী। নাম মকবুল। মকবুল সাহেব বলেছেন—স্যারের আপন ভাগ্নে। স্যারের অতি প্রিয় বোনের একমাত্র ছেলে। বোন মারা গেছেন। ছেলেটাই শুধু আছে। সেটা আমি দেখব।
তবে ঐ লোক গভীর পানির মাছ। মাছ বলা ঠিক না, সে হলো মৎস্য। গভীর পানির মৎস্য—দশ হাজার ফুট নিচের পানির জিনিস।
ও আচ্ছা!
হারামিটা এক ফাঁকে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে—টাকা পয়সা লাগবে। অনেকের মুখ বন্ধ করতে হবে। মামলা অন্যভাবে সাজাতে হবে তার খরচা। আমি এমন ভাব করেছি যে তার কথাবার্তা বুঝতে পারছি না। সঞ্জু এত বড় ঘটনা ঘটিয়েছে এই দুঃখে আমি অস্থির এরকম একটা ভাব ধরলাম। ভালো করেছি না?
জ্বি।
তুমি যদি হও গভীর জলের মাছ—আমি পাতালের মাছ। আমাদের সঙ্গে ইস্তিয়াক আছে। আসামির আপন মামা। নিজেদের মধ্যে পুলিশের বড় অফিসার থাকায় সুবিধা হয়েছে। না থাকলেও অসুবিধা হতো না। ফাঁক দিয়ে বের করে নিয়ে আসতাম।
সালু মামা আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে গলা নিচু করে বললেন—টাকা খরচ করতে হবে। তোর টাকা পয়সার অবস্থা কী? লাখ দুএক টাকা এই মুহূর্তে লাগবে। এক কাজ কর টাকাটা ইস্তিয়াককে দিতে বল। ওরই তো ভাগ্নে। মাছের তেলে মাছ ভেজে ফেলি। তোর বলতে লজ্জা লাগলে আমি বলতে পারি। বলব?
ফরহাদ উদ্দিন চুপ করে রইলেন। হঠাৎ করে তার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। সালু মামা কী বলছেন মাথায় পুরোপুরি ঢুকছে না।
সালু মামা গলা নামিয়ে বললেন, সঞ্জুর মা তার বাপের সম্পত্তির অংশও তো পাবে। টাকাটা সেখান থেকে দিক। তুই ঝিম মেরে আছিস কেন? কিছু বল।
কী বলব?
টাকা পয়সার ব্যাপারটা কী করা যায় সে সম্পর্কে কিছু বল। ভাতের হাঁড়ির ঢাকনার মতো পড়ে থাকলে তো হবে না। একশানে যেতে হবে। সঞ্জু যে কোলকাতায় গিয়েছিল ফিরেছে?
ফিরেছে।
কবে ফিরেছে?
গতকাল সকালে।
থাকছে কোথায়? তোর বাড়িতে?
হা।
ওর তো তোর ওখানে থাকা ঠিক না। ইনভেস্টিগেটিং অফিসার যাবে—নানান যন্ত্রণা করবে। টাকা বের করার জন্যে নানান প্যাঁচ খেলতে থাকবে। সঞ্জুকে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিবি। তা ছাড়া ওর সঙ্গে আমার ক্রেজি সিটিং এরও দরকার আছে। প্ল্যান অব একশান ঠিক করতে হবে।
কী প্ল্যান অব একশান?
আমি কয়েকটা প্ল্যান ঠিক করেছি। প্রত্যেকটা প্ল্যানের ভালোও আছে, মন্দও আছে। চিন্তা ভাবনা করে যে-কোনো একটা নিতে হবে। পুলিশ ফাইন্যাল রিপোর্টে তার নাম লেখবে না এটা ধরে নিলাম। ইস্তিয়াক আছে। আমরাও টাকা খাওয়াব। তারপরেও ব্যাক আপ সিস্টেম থাকা দরকার।
ব্যাক আপ সিস্টেম মানে?
ধর লাস্ট মোমেন্টে কোনো একটা সমস্যা হলো—পুলিশ সঞ্জুর নাম বাদ দিল না। নাম ঢুকিয়ে দিল। তখন যাতে কেটে বের হয়ে যেতে পারি সেই ব্যবস্থা থাকা দরকার। তোর অফিসের চা-তো খুব ভালো। আরেক কাপ খাই—-এখানে না, চল তোদের ক্যান্টিনে বসে খাই। আমি আবার এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসতে পারি না। তোর ক্যান্টিনে নাস্তার ব্যবস্থা কী? আলসার ধরা পড়েছে, ঘন্টায় ঘন্টায় সলিড ফুড পেটে যাওয়া দরকার। আর শোন তুই মুখ এমন ভোঁতা মেরে বসে আছিস কেন? কন্ট্রোল পুলিশের হাতে না, আমার হাতে। নিশ্চিন্ত মনে থাক। টাকা পয়সা নিয়েও চিন্তা করবি না—জোগাড় হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এদিকে আরেক কাজ করব—কোনো একটা মাদ্রাসার তালেবুল এলেমদের দিয়ে এক লাখ চল্লিশ হাজার বার খতমে ইউনুস পড়ায়ে ফেলব। আল্লাহও খুশি রইল।