মাথার উপরে সারি সারি টিভি ঝুলছে, তার একটির লেখার সঙ্গে অন্যটির কোন মিল নেই। বুড়োবুড়ির বিরাট একটি দল ক্লান্ত ভঙ্গিতে ভারি ভারি মালপত্র টেনে-টেনে আনছে। এত রঙচঙ তাদের পোশাকে যে চোখ ধাধিয়ে যায়। তারা বারবার একই জায়গায় ঘোরাফেরা করছে।
কয়েক জন তরুণ-তরুণী লোকজনের ভিড় সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে জড়াজড়ি করে চুমু খাচ্ছে। একটি দাড়িওয়ালা ছেলের চুমু খাওয়ার ভঙ্গি এতই অশ্লীল যে রেবেকার গা কাঁপতে লাগল। ছেলেটি তার একটি হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে মেয়েটির প্যান্টের ভেতর। কেউ তা দেখেও দেখছে না।
রেবেকার নিশ্চিত ধারণা হল, সে এই জীবনে ফ্লাইট নাম্বার এন ডাবলিউ টু টু ওয়ান খুঁজে বের করতে পারবে না। সে বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞেস করল। সবাই বলল, আমি জানি না। এক জন বলল, তুমি কী বলছ, বুঝতে পারছি না। আবার বল।
রেবেকা আবার বলল। লোকটি মাথা ঝাকাল।
উঁহুঁ। বুঝতে পারছি না, আবার বল। ধীরে ধীরে বল, এত ছটফট করছ কেন?
ছোটখালু বলে দিয়েছিলেন, কোনোই ঝামেলা হবে না, বুঝলি। ঐটা কোনো ঝামেলার দেশই না। তবু খোদা না খাস্তা যদি কিছু হয়, স্ট্রেইট পুলিশের কাছে গিয়ে বলবি–হেল্প মি প্লীজ। দেখবি সব ফয়সালা। ওদের পুলিশ আমাদের পুলিশের মতো নয়। ওরা হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু। দি বেস্ট ফ্রেণ্ড।
ছোটখালু এমনভাবে কথা বলেন, যেন বিদেশের সব কিছু তাঁর জানা। যেন অসংখ্য বার ঘুরেটুরে এসেছেন। অথচ তার সবচেয়ে দীর্ঘ ভ্রমণ হচ্ছে চাঁদপুর থেকে লালমনিরহাট। সেই লালমনিরহাট যেতেই কত কাণ্ড। ভুল ট্রেনে উঠে বসে আছেন। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, লাফিয়ে নামতে গিয়ে চশমা ভেঙে ফেললেন। হাঁটুতে চোট পেলেন।
এত দুঃখেও ছোটখালুর কথা মনে করে তার হাসি পেল। কত সুখের, কত আনন্দের দেশ ছেড়ে কোথায় এলাম ভেবে পরক্ষণেই তার বুক ব্যথা করতে লাগল।
শেষ পর্যন্ত এক পুলিশকেই জিজ্ঞেস করল। সেই পুলিশের পর্বতের মতো চেহারা। কোমরের দুই দিকে দুটি পিস্তল ঝুলছে। ওয়েস্টার্ন ছবিতে যেরকম দেখা যায় অবিকল সেরকম। সে দীর্ঘ সময় তার দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, এই প্রশ্নটি আমাকে জিজ্ঞেস না করে নর্থ ওয়েস্ট অরিয়েন্টের ইনকোয়েরিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়। ওদের জানার কথা, আমার নয়।
তাদের কোথায় পাব?
কি বলছ বুঝতে পারছি না, আবার বল।
তাদের কোথায় পাব?
কাদের কোথায় পাবে? যা বলতে চাও গুছিয়ে বল। তুমি কী জানতে চাও, তা তুমি নিজেও ভালো জান না।
এয়ারপোর্ট থেকে সে কোনো দিন বের হতে পারবে, এই আশা রেবেকা প্রায় ছেড়েই দিল। তার ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছিল। হয়তো কেঁদেও ফেলত, যদি না এক জন নিগ্রো যুবক এসে বলত, তোমার কী অসুবিধা আমাকে বল। এরকম করছ কেন?
আমি কী করব বুঝতে পারছি না।
যাবে কোথায় তুমি? তোমার জিনিসপত্র আছে? টিকিট আছে? টিকিটটা কোথায় আমার কাছে দাও।
ছোটখালু বারবার বলে দিয়েছেন, ব্ল্যাকদের কাছ থেকে সাবধান থাকবি। দেখবি অনেকে যেচে সাহায্য করতে আসবে। তুই মুখের উপর স্ট্রেইট বলবি–নো, থ্যাংকস। আমেরিকার ক্রাইম ওয়ার্লডটা হচ্ছে ওদের হাতে। ইটালিতে যেমন মাফিয়া, আমেরিকাতে তেমনি ব্ল্যাক। হাড়ে-হাড়ে শয়তান। মহা পাজি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনসন নামের তালগাছের মত লম্বা কালে ছেলেটি তাকে নিয়ে গেল একটি নাম্বার ইলেভেনে। বোর্ডিং কার্ড করিয়ে দিয়ে কোমল স্বরে বলল, এগার নম্বর দেখে দেখে চলে যাও। আর কোন প্রবলেম হবার কথা নয়।
থ্যাংকস দিতে গিয়ে রেবেকার গলা জড়িয়ে গেল। ছেলেটি বলল, টেক কেয়ার অব ইয়োরসেলফ। এই বলেই সে তার বিশাল হাত বাড়িয়ে দিল। হাত বাড়ান হয়েছে হ্যাগুশেকের জন্য, এটা বুঝতে অনেক সময় লাগল রেবেকার।
অনেকক্ষণ রেবেকার হাত ঝাকাল ছেলেটি। কিংবা হয়ত অল্পক্ষণই অসংখ্য বার ঘুরেটুরে এসেছেন। অথচ তাঁর সবচেয়ে দীর্ঘ ভ্রমণ হচ্ছে চাঁদপুর থেকে লালমনিরহাট। সেই লালমনিরহাট যেতেই কত কাণ্ড! ভূল ট্রেনে উঠে বসে আছেন। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, লাফিয়ে নামতে গিয়ে চশমা ভেঙে ফেললেন। হাঁটুতে চোট পেলেন।
এত দুঃখেও ছোটখালুর কথা মনে করে তার হাসি পেল। কত সুখের, কত আনন্দের দেশ ছেড়ে কোথায় এলাম ভেবে পরক্ষণেই তার বুক ব্যথা করতে লাগল।
শেষ পর্যন্ত এক পুলিশকেই জিজ্ঞেস করল। সেই পুলিশের পর্বতের মতো চেহারা। কোমরের দুই দিকে দুটি পিস্তল ঝুলছে। ওয়েস্টার্ন ছবিতে যেরকম দেখা যায় অবিকল সে-রকম। সে দীর্ঘ সময় তার দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
এই প্রশ্নটি আমাকে জিজ্ঞেস না করে নর্থ ওয়েস্ট অরিয়েন্টের ইনকোয়েরিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়। ওদের জানার কথা, আমার নয়।
তাদের কোথায় পাব?
কি বলছ বুঝতে পারছি না, আবার বল।
তাদের কোথায় পাব?
কাদের কোথায় পাবে? যা বলতে চাও গুছিয়ে বল। তুমি কী জানতে চাও, তা তুমি নিজেও ভালো জান না।
এয়ারপোর্ট থেকে সে কোন দিন বের হতে পারবে, এই আশা রেবেকা প্রায় ছেড়েই দিল। তার ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছিল। হয়তো কেঁদেও ফেলত, যদি না এক জন নিগ্রো যুবক এসে বলত, তোমার কী অসুবিধা আমাকে বল। এরকম করছ কেন?
আমি কী করব বুঝতে পারছি না।
যাবে কোথায় তুমি? তোমার জিনিসপত্র আছে? টিকিট আছে? টিকিটটা কোথায় আমার কাছে দাও।
ছোটখালু বারবার বলে দিয়েছেন, ব্ল্যাকদের কাছ থেকে সাবধান থাকবি। দেখবি অনেকে যেচে সাহায্য করতে আসবে। তুই মুখের উপর স্ট্রেইট বলবি–নো, থ্যাংকস। আমেরিকার ক্রাইম ওয়ার্লডটা হচ্ছে ওদের হাতে। ইটালিতে যেমন মাফিয়া, আমেরিকাতে তেমনি ব্ল্যাক। হাড়ে-হাড়ে শয়তান। মহা পাজি।