এই হলঘরের মতো বড়ো বাথরুমে বাথটাবের ব্যবস্থাও থাকবে। বিদেশী বাথটাবগুলির সাংঘাতিক দাম। দেশীগুলি আবার দেখতে ভালো না। গুলশান মার্কেটে মাঝে মাঝে সেকেণ্ড-হ্যাণ্ড বিদেশী বাথটাব পাওয়া যায়। সাহেবরা ঘর ভাড়া নিয়ে নিজেরা বাথটাব ফিট করে নেয়। আবার যাবার সময় খুলে বেচে দিয়ে। যায়। দুলাভাই কিনতে চেষ্টা করছেন।
পাওয়া গেলে খুব ভালো হয়। আমি তাহলে গরমের সময় তোমাদের ওখানে চলে যেতে পারি। সিনেমার নায়িকাদের মতো সাবানের ফেনার মধ্যে ড়ুবে থাকব, শুধু মাথাটা ভাসবে। তোমাকে এই অবস্থায় আমার একটা ছবি তুলে দিতে হবে।
আপা, আমার চিঠির সঙ্গে যে লিস্টিটা দেখছ, এটা টুটুলের। এর প্রতিটি জিনিস তোমাকে আনতে হবে। না আনলে টুটুল নাকি একটা সিরিয়াস কাণ্ড করবে। আমি কোনো লিস্ট দিচ্ছি না, তোমার শুভ বুদ্ধির উপর আস্থা রাখছি। এবং আমি জানি, তুমি আমাকে বেশি ভালোবাসা।
আলো মরে আসছে। রেবেকা উঠে পড়ল। তার পাশা ভাইয়ের ওখানে যেতে ইচ্ছা করছে। দেশ থেকে চিঠি পেলেই কারো সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে ইচ্ছা করে। কেন করে কে জানে? রেবেকা টেলিফোন বুথের দিকে এগোল।
হ্যালো, পাশা ভাই?
হ্যাঁ।
এমন এক দিনও গেল না, যেদিন টেলিফোন করে আপনাকে পাওয়া যায় নি। আপনি কি এক সেকেণ্ডের জন্যেও ঘর ছেড়ে কোথাও যান না?
যাই। তবে বেশির ভাগ সময় ঘরেই থাকি। এক সময় পুলিশ রাস্তাঘাট থেকে ইল্লিগ্যাল এলিয়েন ধরতে শুরু করল। রেগান এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শুরুর দিকের কথা বলছি। সেই সময় পুলিশের ভয়ে ঘর থেকে বিশেষ বের হতাম না। কাজেই ঘরে থাকতে-থাকতে ঘরে থাকাই অভ্যেস হয়ে গেছে।
এখন অভ্যাসটা বদলাতে হবে। আমাকে নিয়ে এক জায়গায় যেতে হবে।
কোথায়?
ক্রিসমাসের একটা গিফট কিনব। কী কেনা যায় বলুন তো?
কত টাকার মধ্যে কিনবে? তোমার বাজেট কত?
আগেই বাজেটের কথা বললে আমার রাগ লাগে। কী কেনা যায় সেটা আগে ভেবেটেবে বলুন। কী দিলে সবচে খুশি হবে?
খুব ভালো এক বোতল শ্যাম্পেন দিতে পার। ওরা এটা পছন্দ করবেই।
কী যে পাগলের মতো আপনার কথা! আমি তাকে মদের বোতল দেব? কী সর্বনাশ!
তুমি তো আর খাচ্ছ না। ও খাবে। এবং বেশ পছন্দ করেই খাবে।
হ্যালো, পাশা ভাই।
বল।
টুটুল একটা লিস্টি পাঠিয়েছে। অদ্ভুত সব জিনিসের নাম সেই লিস্তিতে। এগুলি কোথায় পাওয়া যায় বলতে পারেন?
নাম বল, তখন বুঝতে পারব।
একটা প্লাস্টিকের মাকড়সা, যেটা চাবি দিয়ে ছেড়ে দিলে দেয়াল বেয়ে ওঠে। একটা রবারের পুতুল তো মার্বেলের গুলির মত ছোট, কিন্তু পানিতে ছেড়ে দিলে বড়ো হতে থাকে। আরেকটা যন্ত্র, যেটা মুখে দিয়ে কথা বললে মনে হয় অনেক দূর থেকে কেউ কথা বলছে। পাশা ভাই, আপনি হাসছেন কেন?
এমনি হাসছি।
এইসব পাওয়া যায় না, তাই না?
যায় নিশ্চয়ই। কোথাও দেখেই সে লিখেছে। দেখব খুঁজে।
হ্যালো, পাশা ভাই।
বল।
আপনার ঐ খেলাটি কি ওরা কিনেছে?
পাশা কোনো জবাব দিল না। রেবেকা বিরক্ত স্বরে বলল, কথা বলছেন না। কেন? না কিনলে বলুন সেটা।
না। কেনে নি।
এখন কী করবেন?
জানি না কী করব। দেখি।
আপনার কাছে এখন মোট কত ডলার আছে?
অল্প।
অল্পটা কত বলেন। নাকি আমাকে বলা যাবে না?
সাত শ ডলারের মতো আছে। এইসব শুনে তুমি কী করবে?
রেবেকা জবাব দিল না।
পাশা বলল, কাল বিকেলে তোমাকে বাজারে নিয়ে যাব, নাকি আজই যেতে চাও?
কাল গেলেই হবে।
রেবেকা ছোট একটি নিঃশ্বাস ফেলল।
টেলিগ্রাম আসবে
সে আশা করেছিল, টেলিগ্রাম আসবে। বড় ভাই টেলিগ্রামটিতে ড্রাফট এখনো না পাওয়ার ব্যাপারটি জানাবেন। টেলিগ্রামের ভাষা হবে–নো ড্রফট। সিরিয়াস পোবলেম। এই জাতীয় টেলিগ্রাম তিনি আগেও করেছেন। তাঁর বড় মেয়ের এ্যাপেণ্ডিসাইটিস অপারেশন হল। তিনি টেলিগ্ৰাম পাঠালেন–রুমা অপারেশন। সিরিয়াস প্রবলেম। সেও মানি।
অপারেশনটি হাসপাতালে বিনা পয়সায় করা যেত। কিন্তু তিনি মেয়েকে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ভালোই করেছেন। ক্লিনিকগুলিতে আজকাল নাকি ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। পাশার কল্যাণে যদি ভালে চিকিৎসার একটা সুযোগ তৈরী হয়, যোক না। অন্তত একটি পরিবার যদি ভাবে–বড় রকমের ঝামেলাতেও তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাদের পেছনে আমেরিকান ডলার আছে। সেটাও তো মন্দ নয়। আত্মশ্লাঘার একটা ব্যাপার তো বটেই। প্রতীক্ষিত টেলিগ্রাম এবং চিঠি পাশা পেল। ক্রিসমাসের আগের দিন। টেলিগ্রামটি আর্জেন্ট। সেখানে লেখা–ড্রাফট মিসিং। টেক এ্যাকশান। কী ধরনের এ্যাকশান নেবার কথা বড়ো ভাই ভাবছেন, কে জানে।
চিঠিটা মজার। এটা পোস্ট করা হয়েছে আমেরিকা থেকে। বড় ভাই কাউকে বের করেছেন, যে আমেরিকা আসছে। এইসব কাজ তিনি খুব ভালো পারেন। তার হাত ধরে বলেছেন, ভাই রিকোয়েস্ট, এই চিঠিটা আপনি আমেরিকায় গিয়েই পোস্ট করে দেবেন। খুব জরুরী। এই কাজটা ভাই আপনাকে করতেই হবে, খুব জরুরী।
চিঠিটা দীর্ঘ। তাতে হারান ড্রাফটের পাত্তা লাগানর জন্যে তিনি এ পর্যন্ত যা যা করেছেন তার নিখুঁত বর্ণনা আছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি এই প্রসঙ্গে দৈনিক বাংলায় একটা চিঠি লিখেছেন। পাঠকের মতামত কলামে সেই চিঠি ছাপাও হয়েছে। তিনি চিঠির একটি কাটিং পাঠিয়েছেন। চিঠিটা এরকম:
বিদেশী ড্রাফট কোথায় যায়?
বিদেশ থেকে যেসব ড্রাফট বা চেক দেশে অবস্থিত আত্মীয়স্বজনকে পাঠান হয়, তার সব কি ঠিক জায়গামত পৌঁছয়? আমার তা মনে হয় না। বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের কারসাজিতে প্রায়ই একটি বিশেষ মহলের হাতে কিছু কিছু ড্রাফট বা চেক চালান হয়ে যায়। যার ফল হিসেবে অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টের মধ্যে পড়তে হয়……