হয়।
উনার ঠিকানাটা তোমার মনে আছে? থাকলে একদিন চল যাই উনাকে টাকাটা দিয়ে আসি। ভদ্রলোক নিশ্চয়ই খুব অবাক হয়ে যাবেন। এত দিন পর হঠাৎ।
ইলা শান্তু গলায় বলল, টাকা আমি উনাকে দিয়ে এসেছি।
রুবা বিস্মিত হয়ে বলল, কবে দিলে?
দিন-তারিখ মনে করে রেখেছি নাকি? দেয়ার কথা–দিয়েছি।
আমাকে বল নি কেন?
এটা এমন কি ঘটনা যে তোকে বলতে হবে?
রুবা অবাক হয়ে বলল–তুমি এমন রেগে যাচ্ছ কেন আপা?
কি আশ্চর্য, রাগলাম কোথায়?
আমি জানি তুমি রেগে গেছ। রাগলে তোমার কান লাল হয়ে যায়, নাক ঘামে। ব্যাপারটা কি আপা?
ব্যাপার কিছু না।
ইলা উঠে রান্নাঘরে চলে গেল। ভাত ফুটছিল, হাঁড়ি নামিয়ে মাড় গলল। বাথরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে সহজ স্বাভাবিক গলায় বলল, আমার চুলটা বেঁধে দে। এক বেণী করবি।
রুবা চিরুনি নিয়ে বসল। ইলা বলল, ভাত খেয়ে তারপর চুল নিউ মার্কেটে। বিকেল পর্যন্তু ঘুরব, তারপর তোকে রেখে আসব। রাতে তোদের সঙ্গে খাব। তারপর ভাইয়াকে বলব পৌঁছে দিতে। ভাইয়া কেমন আছে রে?
প্রথমেই তো একবার বললাম, ভাল।
ভাইয়ার বিয়ে দেবার কথা কেউ ভাবছে না, তাই না?
না। মাকে একদিন বললাম। মা মুখ শুকনো করে বলল, ও বউকে খাওয়াবে কি? তাছাড়া কোন ভদ্রলোক এই গরীবের ফ্যামিলীতে মেয়ে দেবে কেন? তাদের কি গরজ?
এ আবার কেমন কথা?
আমি মাকে তাই বললাম। আমি বললাম, আমাদের মত গরীব ফ্যামিলীর একটা মেয়েকেই না হয় আন। মা রেগে অস্থির।
এর মধ্যে রাগের কি আছে?
রেগেমেগে বলেছে, তোর বাবার সম্মানটা দেখবি না তোরা? কত বড় মানুষ ছিলেন। মার মাথার মধ্যে একটা পোকা ঢুকে গেছে।
দুটিার দিকে দুজনে খেতে বসল। খেতে বসে রুবা আবার পুরনো প্রসঙ্গ তুলল–নিচু গলায় বলল, ঐ ভদ্রলোকের কথা ওঠায় তুমি রেগে গিয়েছিলে কেন আপা?
রাগব কেন? রাগি নি। উনি আমার সঙ্গে অভদ্র ব্যবহার করেছিলেন, তাতে আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল। ব্যস।
তুমি মিথ্যা কথা বলছ আপা। অন্য কোন ব্যাপার। উনি শুধু শুধু তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন কেন?
ইলা জবাব দিচ্ছে না। নিঃশব্দে ভাত খাচ্ছে। রুবা বলল, তুমি একা একাই গেলে উনার কাছে?
হুঁ।
তোমাকে চিনতে পারলেন?
না। পরে চিনেছেন।
উনি কি ম্যারেড আপা?
কি মুশকিল, আমি এসব জানব কেন? গিয়েছি, টাকা দিয়ে চলে এসেছি।
তুমি কি একবারই গিয়েছ না আরো গেছ?
তুই কি শুরু করলি বল তো, রুবা। জেরা করছিস কেন?
জেরা করছি না। জানতে চাচ্ছি।
ভাত খেতে বসেছিস, ভাত খা।
রুবা তীক্ষ দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে রইল।
ইলা খাওয়া শেষ না করেই উঠে পড়ল। রুবা আপার দিকে তাকিয়ে আছে। তার এই আপাটি খুব অদ্ভুত। অনেক রহস্য সে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। রুবার ধারণা আপা একবার না কয়েকবারই গিয়েছে ঐ মানুষটার কাছে। রুবা চেঁচিয়ে বলল, আপা তুমি নাসিম ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিলে। উনি কি কখনো এসেছিলেন তোমার এই ফ্ল্যাটে?
ইলা কঠিন গলায় বলল, উল্টাপাল্টা কথা কেন বলছিস? নাসিম ভাই এখানে কেন আসবেন?
আসলে অসুবিধা কি? উনি কি আসতে পারেন না?
ইলী জবাব দিল না। বাথরুমে ঢুকে গেল। রুবা বাথরুমের দরজার কাছে এসে বলল, বিয়ের পর তোমার মেজাজ অন্য রকম হয়ে গেছে আপা, মা বলছিল, তুমি নাকি ঐদিন বাসায় গিয়ে মার সঙ্গে অকারণে ঝগড়া করেছ।
অকারণে ঝগড়া করি নি।
তুমি তো কখনো এরকম কর না। হঠাৎ কে তোমাকে বদলে দিল।
চুপ কর রুবা। মানুষ এক রকম থাকে না। কিছুদিন পরপর বদলায়।
ইলা বাথরুম থেকে হাসিমুখে বের হয়ে এল। তার মুখ ভেজা। রুবা মুগ্ধ গলায় বলল, তোমাকে কি যে সুন্দর লাগছে আপা।
বন এন্টারপ্রাইজেসের অফিস
বন এন্টারপ্রাইজেসের অফিস ঘরে বাবু এবং নাসিমকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। সেখানে ঘটাং টাং শব্দ হচ্ছে। সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘর অন্ধকার। নাসিম একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছে। সস্থা সিগারেট। উৎকট গন্ধ। দুজনকেই খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। চিন্তাগ্রস্ত হবার সংগত কারণ আছে। তারা একটা ভাল সাপ্লাইয়ের কাজ পেয়েছিল। মতিঝিলের এক বড় অফিসে কাগজ, পেনসিল, ফাইল, আইকা গাম সাপ্লাই। অফিসের একশ দশজন কর্মচারীর জন্যে সাবান, গামছা, গ্লাস, কুড়িটা। সেক্রেটারিয়েট টেবিল, চল্লিশটা বেতের চেয়ার। তিনটা দশ ফুট বাই বার ফুট কামার জন্যে জুট কাপেট। সবই দেয়া শুয়েছে। বিল পাস হচ্ছে না। আত্ব হবে, কাল হবে বলে তারা এক মাস পার করেছে। শেষব্বার বলে দিয়েছিল, বুধবার সকাল এগারটায় আসতে। আজ বুধবার। তারা দুজনই গিয়েছিল। বিল যার পাস করার কথা–রহমান সাহেব, তাদের দুঘণ্টা বসিয়ে রাখলেন। একটার সময় ডেকে পাঠালেন। শীতল গলায় বললেন–এখন লাঞ্চ টাইম। বেশি কথা বলতে পারব না। বিল তো আপনারা পাবেন না।
নাসিম হতভম্ব হয়ে বলল, কেন?
জিনিস ঠিকমত দেন নি। লো কোয়ালিটি জিনিস দিয়েছেন।
সব জিনিস তো স্যরি আপনাদের দেখিয়ে–আপনাদের এখোলে নিয়ে তারপর ডেলিভারি দিয়েছি।
তা দিয়েছেন, তবে যে জিনিস দেখিয়েছেন সেই জিনিস দেন নি। দিয়েছেন রদ্দি মাল।
বাবু বলল, স্যার আপনার কথা ঠিক না। যা দেখিয়েছি তাই দিয়েছি। বিশ্বাস করুন, কোন উনিশ-বিশ হয় নি।
আপনি বললে তো হবে না–মিষ্টির ব্যাপারে ময়রার কথা গ্রাহ্য না। আমাদের নিজস্ব টিম ইনকোয়ারি করেছে। তারা বলেছে–লো কোয়ালিটি।