বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক – হুমায়ূন আহমেদ

Chader Aloy Koyekjon Jubok By Humayun Ahmed

মোটা লোকটা বলল, এইটা কী করলেন?

মজিদ ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল, হারামজাদা তুই কানে ধর।

কী কন আপনে?

হারামী কানে ধর।

খুট করে শব্দ হল। মজিদ খাপ থেকে তার ক্ষুর বের করে ফেলেছে। মোটা লোকটি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। মজিদ হিসহিস করে বলল, কানে ধর কানে ধর।

মোটা কর্মচারীটির চোখে ভয় ঘনিয়ে এল। ভয় ঘনিয়ে আসাই স্বাভাবিক। মজিদের পুরো চেহারা পাল্টে গেছে। তার চোখে উন্মাদ দৃষ্টি। এই দৃষ্টি চিনতে কারোর ভুল হবার কথা নয়।

আলম লিটুর দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে রক্ত পড়ছে। এই দৃশ্য তাকিয়ে দেখা যাচ্ছে না আবার দৃষ্টিও ফিরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। লিটু বিড়বিড় করে কি যেন বলল, মজিদ তার দিকে তাকিয়ে ক্রুদ্ধ গলায় বলল, নখু, রেক বলফে।

লিট্‌ কিছুই বুঝল না। কিন্তু মির্জা সাহেবের গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। মাহিন কাউন্টারের এক পাশে রাখা ক্রিকেট ব্যাটের স্তুপের দিকে এগিয়ে গেল। প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই বিকট শব্দ হল। সে ব্যাট দিয়ে বাড়ি মেরে কাউন্টারের কাচের দেরাজ গুড়িয়ে ফেলেছে। ঘরময় কাচের টুকরা।

মোটা কর্মচারীটি প্রায় ফিসফিস করে বলল, মাফ করে দেন ভাইজান। মাফ চাই। মাফ…

মজিদ চাপা গলায় বলল, নখু রেক বলফে। মোটা কর্মচারী আবার বলল, ভাইজান মাফ করে দেন। ও লিটু ভাইজানের পায়ে ধরে মাফ চা।

লিটু সঙ্গে-সঙ্গেই রক্তমাখা হাতে মজিদের প্যান্ট চেপে ধরল। মজিদ প্রচণ্ড লাথি। দিয়ে তাকে কাচের টুকরোর উপর ফেলে দিল। আবার একটি শব্দ হল। মাহিন কাচের আরেকটি দেরাজ ভেঙ্গেছে।

মোটা কর্মচারীটি ভীতু গলায় বলল, লা-ইলাহা ইল্লা আন সোবাহানাকা ইনি কুন্তু মিনাজজুয়ালেমিন। লাই লাহা ইল্লা আনতা সোবাহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজজুয়ালেমিন।

মজিদ চড়া গলায় বলল, নখু রেক বলফে।

ভাইজান মাফ করে দেন। ভাইজান মাফ করে দেন।

নখু রেক বলফে।

জানে মাইরেন না ভাইজান। আমার ছোট-ছোট দুইটা বাচ্চা।

মোটা কর্মচারীটি কেঁদে ফেলল। মির্জা সাহেবের আত্মা কেঁপে উঠল। লোকটি ভয় পাচ্ছে। অসম্ভব ভয় পাচ্ছে। এই ভয় সংক্রামক। এই ভয় ঢুকে যাবে মজিদের ভেতর তখন ভয়ংকর কিছু হয়ে যাবে।

মাফ করে দেন ভাইজান। মাফ করে দেন।

আর কোনো দিন কাস্টমারের সাথে খারাপ ব্যবহার করবি?

না ভাইজান না।

এরপর থেকে কাস্টমাররে বাপ ডাকবি?

জ্বি ভাইজান ডাকব।

আর মেয়ে কাস্টমার হইলে মা ডাকবি?

জ্বি ভাইজন ডাকমু।

ওরা বেরিয়ে এল। মির্জা সাহেব পেছনে পেছনে বেরিয়ে এলেন, যদিও তাঁর ধারণা তার কথা এখন আর তাদের মনে নেই। তারা কিছু দূর এগিয়ে একটা লাইট পোস্টের নিচে দাঁড়াল। এখন বেশিরভাগ লাইট পোস্টেই সোডিয়াম ল্যাম্প। এইটির তা নয়। সাদা টিউব লাইট জ্বলছে।

আলম বলল, মজিদ তোর সারা গায়ে রক্ত। এত রক্ত এল কোত্থেকে?

মজিদ তাকিয়ে দেখল, সত্যি রক্তে প্রায় মাখামাখি। সে শীতল গলায় বলল, দেখি সিগারেট দে।

আলম বলল, সিগারেটের প্যাকেটতো আনা হয় নি। আসল জিনিসই রয়ে গেছে। আবার যাবি?

মজিদ জবাব দিল না।

মির্জা সাহেব বললেন, আবার যাওয়া ঠিক হবে না। এতক্ষণে খবর হয়ে গেছে। লোজন চলে এসেছে।

মজিদ তীব্র গলায় বলল, আসুক না। ভয় পাই না-কি। আবদুল মজিদ কোনো শালাকে ভয় পায় না। উল্টো সব শাল আবদুল মজিদকে ভয় পায়।

আলম বলল, ক্ষুরটা খাপে ঢুকিয়ে রাখ মজিদ। দেখে ভয় ভয় লাগছে।

লাগুক ভয়। এই ক্ষুর দিয়ে আজ কোনো এক শালাকে আমি কাটব। না কাটলে মনে শান্তি হবে না। এই যে চাচা মিয়া আপনার নাম কি?

আমার নাম মির্জা।

তোমাকে আমি কাটব। কাটাকুটি খেলা হবে।

আমি অপরাধটা করেছি কী?

তুই শালা গরমের মধ্যে কোট পরেছিস। শালা ফুটানি দেখাচ্ছিস।

তোমরা যদি বল তাহলে কোট খুলে ফেলি।

শালা আবার তুমি করে বলে। মজিদ আচমকা এক চড় বসিয়ে দিল।

মির্জা সাহেব প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থে ভয় পেলেন। তাঁর মনে হল দোকানে ঢুকবার আগে এরা যা ছিল এখন তা নেই। এখন তার সামনে অন্য একদল ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। এরা যে কোনো মুহূর্তে ভয়ংকর কিছু করতে পারে।

মজিদ বলল, চল করিমের ওখানে যাই।

আলম বলল, করিমের ওখানে কেন?

ঐখানে গিয়ে এই চাচামিয়াকে কোরবাণী দিয়ে দিব। চাচা মিয়া কোট পরে ফুটানি দেখাচ্ছে।

আলম জবাব দিল না।

দলটি হাঁটতে শুরু করল। মীর্জা সাহেব লক্ষ করলেন মজিদ ছেলেটি এখন আর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে না। অর্থাৎ সে এই মুহূর্তে কোনো শারীরিক ব্যথা-বেদনা অনুভব করছে না। তিনি ঘড়ি দেখলেন। তাঁর ঘড়িতে এখন তিনটা বাজে। অর্থাৎ মাত্র আধা ঘন্টা সময় পার হয়েছে। এদের সঙ্গে যখন দেখা হয় তখন বেজে ছিল আড়াইটা। বাংলাদেশ সময় এখন কত? আলম ছেলেটির হাতে ঘড়ি আছে। তাকে কি সময় জিজ্ঞেস করবেন? জিজ্ঞেস করাটা কি ঠিক হবে?

মির্জা সাহেব আলমের দিকে তাকিয়ে বললেন, কটা বাজে?

উত্তর দিল মজিদ। চাপা গলায় বলল, চুপ।

মির্জা সাহেব নিঃশব্দে হাঁটতে লাগলেন। আকাশের চাঁদ জোছনার ফিনকি ছড়াচ্ছে। চারদিকে দিনের মতো আলো।

রেসকোর্সের মাঠে

মজিদ বলল, রেসকোর্সের মাঠে যাবি না-কি?

কেউ জবাব দিল না। মনে হচ্ছে সবাই কিছুটা ক্লান্ত। মাহিন বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে। তার পিছিয়ে পড়াটা ইচ্ছাকৃত। সিগারেট খেতে হবে প্যান্টের পকেটে চারটা ইমার্জেন্সি সিগারেট আছে। তারই একটা সে ধরাল। অন্যরা টের পেলে মুশকিল হবে। মাহিন সিগারেটের আগুন হাত দিয়ে আড়াল করে টানছে। তেমন আরাম পাওয়া যাচ্ছে না। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে। মজিদ টের পেলে খ্যাচাং শুরু করবে।

Page 16 of 20
Prev1...151617...20Next
Previous Post

গোরা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Next Post

চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস – হুমায়ূন আহমেদ

Next Post

চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস - হুমায়ূন আহমেদ

ছায়াবীথি - হুমায়ূন আহমেদ

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In