আলাউদ্দিন বললেন, জ্বি না। চা খাব না।
হামিদা বলল, মামা দশ মিনিটের মধ্যে আসবেন না। দেরি করবেন। আপনি ধরে রাখুন মামার ফিরতে আশ ন্টার মতো লাগবে। উনি আধ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন যাতে আপনি আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। পাত্র হিসেবে উনি যে আপনাকে এখানে এনেছেন আমি বুঝতে পারি নি। হঠাৎ উনার মাথায় ঢুকেছে আমাকে বিয়ে দিতে হবে। আমি কিছুতেই তাকে বুঝাতে পারছি না যে আমি বিয়ে করব না। আপনি সত্যি করে বলুন তো মামা কি আপনাকে পাত্রী দেখার কথা বলে এখানে আনেন নি?
আলাউদ্দিন হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন। হামিদা বলল, কী লজ্জার কথা চিন্তা করুন। আমার এত বড় বড় মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে ঘর সংসার করছে। এখন কিসের বিয়ে? বিয়ে যদি করতাম আগেই করতাম।
তা তো ঠিকই।
হামিদা বিরত্ত গলায় বলল, আগে বিয়ের কথা বললে চিৎকার চেঁচামেচি করতাম। এখন বিরক্ত হয়ে চুপ করে থাকি। এর থেকে আমার ধারণা হয়েছে আমি নিম রাজি। ছিঃ।
আলাউদ্দিন বললেন, আপনি আমার উপর রাগ করবেন না।
হামিদা বলল, আপনার উপর কেন রাগ করব! কেউ যদি ভুলিয়ে ভালিয়ে আপনাকে নিয়ে আসে আপনি কী করবেন?
আলাউদ্দিন বললেন, আমার খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। আমি বারান্দা। থেকে একটা সিগারেট খেয়ে আসি।
বারান্দায় সিগারেট খেতে হবে না। এখানেই খান।
সবচে ভালো হয় আমি যদি চলে যাই। আজ সারাদিন বাইরে কাটিয়েছি। শরীর ঘামে চট চট করছে।
মামা এসে যদি দেখেন আপনি নেই তাহলে আপনার উপর খুব রাগ করবেন। আপনি মামার রাগকে ভয় করেন না?
জ্বি করি।
তাহলে চুপচাপ বসে থাকুন। আমি আবার চা নিয়ে আসছি। চা খান। গল্প করে আধা ঘণ্টা সময় পার করে দিন।
আমি আসলে গল্প করতে পারি না।
আপনার জীবনের মজার কোনো ঘটনার কথা বলুন।
আলাউদ্দিন হতাশ গলায় বললেন, আমার জীবনে আসলে মজার কোনো ঘটনা ঘটে নি।
কখনো ঘটে নি?
জ্বি না।
ঘটতেই হবে। আমার ধারণা আপনার জীবনে প্রচুর মজার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না। যে পোকা মিষ্টি আমের ভেতর জন্মায় সে মিষ্টি রসের ব্যাপারটা ধরতে পারে না। সে মনে করে সে তার জীবনটা রসকষহীন অবস্থায় পার করে দিচ্ছে।
আলাউদ্দিন একটা সিগারেট ধরালেন। সিগারেট ধরাতে গিয়ে মনে হলো— রাতে হঠাৎ যে ভয় পেলেন সেই ঘটনা এই মহিলাকে কি বলা যায়। তার কাছে যে মনে হচ্ছিল কুটু তাঁর খাটের নিচে বসে আছে। তিনি কুটুর সঙ্গে কিছু কথাও বললেন। খাটের নিচের কাগজগুলি পাওয়া গেল ছেঁড়া। এই গল্প বলাটা কি ঠিক হবে? মনে হচ্ছে ঠিক হবে না।
হামিদা তাঁর দিকে ঝুঁকে এসে বলল, বলুন শুনি।
আলাউদ্দিন বললেন, কী বলব?
আপনার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে আপনি একটা গল্প বলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আবার দ্বিধায় পড়ে গেছেন। গল্প বলাটা ঠিক হবে কি-না বুঝতে পারছেন না। দ্বিধা দূর করে গল্পটা বলুন।
আলাউদ্দিন ব্ৰিত ভঙ্গিতে গল্প শুরু করলেন। হামিদা খুবই আগ্রহ নিয়ে গল্পটা শুনছে। এত আগ্রহ নিয়ে শোনার মতো কী গল্প? আলাউদ্দিন গল্প শেষ করলেন। হামিদা বলল, আপনি নিজে দেখলেন খাটের নিচের সব কাগজ ছেঁড়া?
জ্বি।
আপনার গল্পের খুব সহজ একটা ব্যাখ্যা আছে। ব্যাখ্যাটা দেই।
দিন।
যদিও আপনার জীবন কেটেছে একা একা তারপরেও আপনি খুব ভীতু টাইপ মানুষ। কারণ আপনি নিজেই বলেছেন আপনি অন্ধকার সহ্য করতে পারেন না। ঐ রাতে আপনি খুবই ভয় পেয়েছিলেন। অতিরিক্ত ভয় পেলে মানুষ মনগড়া জিনিস দেখে মনগড়া জিনিস কল্পনা করে। পুরোটাই আপনার কল্পনা।
আলাউদ্দিন বললেন, আমি যে দেখলাম আমার খাটের নিচের সব কাগজ ভেঁড়া।
আমার ধারণা আপনি কয়েকটা ছেঁড়া কাগজ দেখেছেন। আপনার উত্তপ্ত মস্তিষ্ক সেই কয়েক টুকরা কাগজ দেখে ভেবেছে সব কাগজ ছেঁড়া। আপনি নিশ্চয়ই সকালে ভেঁড়া কাগজের টুকরা দেখেন নি। দেখেছেন?
জি না। কুটু ঘর ঝাট দিয়ে পরিষ্কার করে রাখে।
আপনার বাবুর্চি কুটু মানুষটা কেমন?
ভালো। খুব ভালো রান্না করে। এর রান্না একবার খেলে অন্য কোনো কিছু আপনি মুখে দিতে পারবেন না। আজ দুপুরে তার ইলিশ মাছের ডিম রান্না করার কথা।
হামিদা হাসতে হাসতে বলল, আপনি বলেছিলেন আপনি গল্প করতে পারেন। এতক্ষণ খুব সুন্দর গল্প করলেন। ত্রিশ মিনিট কিন্তু পার করে দিয়েছেন। মামাও চলে এসেছেন। তার পায়ের শব্দ পাচ্ছি। আপনি পাচ্ছেন না?
জি না।
আপনার কান তীক্ষ্ণ না। পায়ের শব্দ না পেলেও কলিং বেল বাজার শব্দ শুনবেন।
হামিদার কথা শেষ হবার আগেই কলিং বেল বাজল। হামিদা দরজা খুলে দিল। হাজী সাহেব ঘরে ঢুকলেন না। তাঁর নাকি অনেক দেরি হয়ে গেছে।
হামিদার বাসা থেকে বের হয়ে হাজী সাহেব নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলেন, আলাদ্দিন, আমার ভাগ্নিকে পছন্দ হয়েছে?
আলাউদ্দিন সঙ্গে সঙ্গে বললেন, জি।
তাহলে বিয়ের কথাবার্তা শুরু করি? কথাবার্তার অবশ্যি তেমন কিছু নেইও। হামিদার যদি তোমাকে পছন্দ হয় তাহলে আগামীকালও বিয়ে হতে পারে। তোমার কি আত্মীয়স্বজন কারো সঙ্গে কথা বলার দরকার আছে?
আলাউদ্দিন জবাব দিলেন না।
তোমার নিকট আত্মীয়স্বজন কে আছে?
আমার এক বোন আছে। ছোট বোন।
সে কোথায় থাকে?
কুষ্টিয়ার ভেড়ামাড়ায় থাকত। এখন বদলি হয়ে চিটাগাং গিয়েছে। চিটাগং এর ঠিকানা জানি না।
ঢাকা শহরে তোমার কোনো আত্মীয়স্বজন নেই?
আছে। তাদের ঠিকানা জানি না। যোগাযোগ নাই। এক ফুপু থাকেন যাত্রাবাড়িতে। তার বাসা চিনতাম। অনেক দিন যাওয়া হয় না। এখন চিনব কি না বুঝতে পারছি না।