বিয়ে করি নি।
চেহারা ফরসা হয়েছে। ইস্ত্রি কন্যা পায়জামা পাঞ্জাবি পরেছ। তোমাকে ইস্ত্রি করা কাপড়ে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
একটা কাজের লোক আছে। সেই কাপড় ধুয়ে দেয়। লন্দ্রি থেকে ইস্ত্রি করিয়ে আনে। রান্নাবান্না করে। ভালো রান্না। কুয়েতে বাবুর্চির কাজ করেছে।
বলো কী! একেবারে বিদেশী বাবুর্চি? ভালো হয়েছে। চিরকুমার লোকদের যে জিনিসটা প্রথম দরকার সেটা হলো একজন ভালো বাবুর্চি। খাওয়া দাওয়ার কষ্টটাই চিরকুমার লোকদের আসল কষ্ট। ভাত আর ডিম ভাজি কতদিন খাওয়া যায়।
ঠিক বলেছেন।
তোমাকে দুটা কাজের জন্যে ডেকেছি। দুইটাই জরুরি। একটা আমার জন্য জরুরি, আরেকটা তোমার সন্য জরুরি।
জ্বি বলুন।
হাত দেখার বই-এর অবস্থা কী? একটা বই শেষ করতে তো এতদিন লাগার কথা না।
আলাউদ্দিন ইতস্তত করে বললেন, আগে দিনে লিখতাম। রাতে ও লিখতাম। এখন রাতে লিখতে পারি না।
হাজী সাহেব বললেন, রাতে লিখতে পার না কেন? রাতকানা রোগ হয়েছে। রাতে চোখে দেখ না?
খাওয়া দাওয়ার পর আলসেমি লাগে।
কর কী? আটটা বাজতেই ঘুমিয়ে পড়?
ঘুমাতে ঘুমাতে এগারোটা বেজে যায়। খবরের কাগজ পড়ি, টিভি দেখি।
টিভি কিনেছ না-কি?
জি। একটা চৌদ্দ ইঞ্চি টিভি কিনে ফেলেছি। কালার।
লার টিভি?
ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট কেনার ইচ্ছা ছিল। কুটু বলল, কিনবেন যখন কালার কিনেন। দেখলাম কুটুর কথার মধ্যে বিবেচনা আছে।
কুট কে?
কুটু আমার বাবুর্চি।
হাজী সাহেব অবাক হয়ে বললেন, তোমার বাবুর্চি এখন বলে দিচ্ছে কী কিনবে কী কিনবে না?
আলাউদ্দিন মাথা নিচু করে বললেন, ওর বিবেচনা খারাপ না।
বেশি বিবেচনা হওয়াটা আবার ভালো না। শেষে দেখা যাবে তোমার বইপত্র সে লিখে দিচ্ছে। যাই হোক, সাত দিন সময়। এর মধ্যে বই শেষ করবে। আজ বুধার, আরেক বুধবারে পাণ্ডুলিপি নিয়ে চলে আসবে।
জি আচ্ছা, এখন উঠি।
হাজী সাহেব বললেন, তুমি এসেই যাই যাই করছ কেন? লক্ষ করেছি এর মধ্যে তিন চারবার ঘড়ি দেখেছ। চুপচাপ বস, দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে তারপর যাবে। মোরগপোলাও আনতে বলেছি। মোরগপোলাও খেয়ে তারপর যাবে। অসুবিধা আছে?
জ্বি না।
উসখুস করছ কেন? বারবার পকেটে হাত দিচ্ছ, পকেটে কী? পিস্তল নাকি? চাঁদাবাজরা পিস্তল নিয়ে যখন আসে বারবার পকেটে হাত দেয়। কী আছে পকেটে?
কিছু না।
কিছু একটা তো পকেটে নিশ্চয়ই আছে। বের কর দেখি জিনিসটা কী?
আলাউদ্দিন পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট এবং ম্যাচ বের করলেন। তাকে খুবই ব্ৰিত মনে হলো। হাজী সাহেব বললেন, তুমি সিগারেট খাও তা তো জানতাম না। আগেও খেতে, না সম্প্রতি ধরেছ?
এখন একটা দুটা খাই।
খাও ভালো কথা। এত লজ্জা পাচ্ছ কেন? ধরাও একটা সিগারেট। উসখুস করার কারণ এখন স্পষ্ট হলো। নেশাখোররা সময়মতো নেশা করতে না পারলে উসখুস করে। ধরাও একটা সিগারেট।
থাক।
থাকবে কেন, খাও। নেশার জিনিস সময়মতো না খেলে মেজাজ খারাপ হয়। আমি চাই না আমার সামনে মেজাজ খারাপ করে কেউ বসে থাকবে। দেখি আমাকে একটা সিগারেট দাও। তোমার সামনে ধরিয়ে তোমার লজ্জা ভেঙে দেই। আমি যে সিগারেট একেবারে খাই না তা না। তোমার ভাবির সঙ্গে ঝগড়া হলে। খাই।
হাজী সাহেব সিগারেট ধরালেন আলাউদ্দিনও ধরালেন, তবে তিনি খানিকটা সংকুচিত হয়ে রইলেন। কারণ তিনি একজন হাজী এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেছেন— এই জন্যেই সংকোচ। তিনি বলেছেন একটা দুটা খাই। ঘটনা সে-রকম না। গত কয়েকদিন হলো প্রচুর সিগারেট খাচ্ছেন। বিশেষ করে রাতে খাওয়ার পর মুখে একটা পানি দিয়ে যখন টিভির সামনে বসেন তখন সিগারেট খেতে বড় ভালো লাগে। টিভি দেখার ব্যবস্থাটাও কুটু মিয়া খুব আরামদায়ক করেছে। টিভিটা বসিয়েছে লেখালেখির টেবিলে। তিনি এখন খাটে আধশোয়া অবস্থায় থেকে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন। টিভিতে বিশেষ কিছু যে দেখেন তা না। সিগারেট ধরিয়ে একটা চ্যানেল দেখতে থাকেন। সিগারেট শেষ হওয়া মাত্র অন্য একটা ধরিয়ে চ্যানেল বদলে দেন। ক্যাবল লাইন নেয়াতে এই সুবিধাটা হয়েছে। অনেকগুলি চ্যানেল।
আলাউদ্দিন?
জ্বি।
এখন আরেকটা জরুরি বিষয় নিয়ে তোমার সঙ্গে আলোচনা আছে। মন দিয়ে শুনতে হবে।
জ্বি আচ্ছা।
তোমাকে আমি স্নেহ করি। এই ব্যাপারটা আশা করি তুমি জানো।
জ্বি জানি।
তুমি নির্বিরোধী মানুষ। অহঙ্কার নাই। ভদ্র, বিনয়ী। কখনো মিথ্যা বলো না। এই জন্যেই পছন্দ। আমি যে তোমার মঙ্গল চাই এ বিষয়ে কি তোমার কোনো সন্দেহ আছে?
জ্বি না।
হামিদা নামের আমার দূর সম্পর্কের একজন আত্মীয়া আছে। দুঃখি মেয়ে। প্রায় কুড়ি বছর আগে তার স্বামী মারা যায়। মেয়েটা পড়ে যায় অকুল সমুদ্রে। মেয়েটা রূপবতী। তাকে বিয়ে করানোর জন্যে আমরা চেষ্টা করেছি। সে রাজি হয় না। তার প্রতিজ্ঞা জীবনে বিবাহ করবে না। সে একটা চাকরি নিল। দুই মেয়েকে মানুষ করতে লাগল। যাকে বলে জীবন সংগ্রাম।
আলাউদ্দিনের সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। তাঁর আরেকটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছা করছে। হাজী সাহেব কী মনে করবে এই ভেবে ধরাতে পারছেন না।
আলাউদ্দিন?
জ্বি।
এরকম উসখুস করছ কেন? যা বলছি মন দিয়ে শোন।
মন দিয়ে শুনছি হাজী সাহেব।
হামিদার মেয়ে দুটাই মায়ের মতো সুন্দরী হওয়ায় দুজনেরই খুব ভালো বিয়ে হয়েছে। দুটা মেয়েই এখন আছে বিদেশে। একজন থাকে স্বামীর সঙ্গে সিংগাপুর, আরেকজন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে।