জ্বি-না। আমার কানে কোনো সমস্যা নেই। ইএনটি স্পেশালিস্টকে দেখিয়েছি। তারা নানান রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এবং যে কুকুরগুলির ডাক আমি শুনি ওরা কল্পনার কোনো কুকুর না। এদের অস্তিত্ব আছে। আমি তো আপনাকে বলেছি এরা থাকে আমার বাড়িতে।
ডাক্তার সাহেব বললেন, কুকুর নিয়ে আপনি খুব বেশি ভেবেছেন। কারণ এর আপনার সাজানো সংসারে সমস্যা তৈরি করেছে। কুকুরের কারণে ভাড়াটে চলে গেছে। অতিরিক্ত চিন্তার কারণে কুকুরের ডাক আপনার মাথায় ঢুকে গেছে। মস্তিষ্কের নিউরনে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ রকম যদি চলতে থাকে আপনি শুধু যে কুকুরের ডাক শুনবেন তা না। কুকুরগুলি দেখতেও পাবেন। হঠাৎ গভীর রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায় তাহলে দেখবেন আপনার ধারে কয়েকটা কুকুর বসে আছে। অডিটরি হেলুসিনেশন ভিস্যুয়েল হেলুসিনেশনে রূপ নেবে।
এর হাত থেকে বাঁচার উপায় কী?
বাচার একটাই উপায়— হেলসিনেশনের ব্যাখ্যাটা বিশ্বাস করা। এবং হেলুসিনেশনকে গুরুত্ব না দেয়া। তাছাড়া আমি আপনাকে ওষুধপত্র দেব। আগে মনোবিশ্লেষণের মাধ্যমে মনোরোগের চিকিৎসা করা হতো। এখন আমাদের হাতে অনেক পাওয়ারফুল ড্রাগস আছে। আমি যে কথাগুলি বলছি আপনি কি বিশ্বাস
হামিদা বলল, বিশ্বাস করার চেষ্টা করছি। পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না।
কেন পারছেন না?
আমি নিজে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছি। আপনাকে বলব?
বলুন।
আমি একশ ভাগ নিশ্চিত কেউ একজন পরিকল্পিতভাবে ঘটনাগুলি ঘটাচ্ছে। যেন আমি আমার বাড়িতে ফিরে না যাই। গোপন কিছু আমার বাড়িতে হচ্ছে। নিষিদ্ধ কোনো কর্মকাণ্ড। তারা চাচ্ছে না আমি সেই কর্মকাণ্ড জেনে ফেলি।
ডাক্তার সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, আপনার ধারণা নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড করছে আপনার স্বামী আলাউদ্দিন সাহেব এবং তার হেল্পিং হ্যান্ড মিস্টার কুটু মিয়া?
জি। কুটু মিয়ার সুপারন্যাচারেল কিছু ক্ষমতা আছে।
ডাক্তার সাহেব বললেন, আপনি খুব একটা ভুল বিশ্বাস নিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা। করার চেষ্টা করছেন। মানুষকে নানান প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছেসাহিত্যের প্রতিভা, সঙ্গীতের প্রতিভা, বিজ্ঞানের প্রতিভা কিন্তু সুপারন্যাচারেল কোনো ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয় নি।
হামিদা বলল, মূসা নবীকে কিন্তু ক্ষমতা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিনি হাতের লাঠি যখন মাটিতে ফেলতেন সেই লাঠি সাপ হয়ে যেত।
ডাক্তার সাহেব বললেন, ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানকে মিলানো ঠিক হবে না। থিওসফি এবং পদার্থবিদ্যা এক জিনিস না।
কুটুর যে সুপারন্যাচারাল ক্ষমতা আছে এটা আপনি বিশ্বাস করছেন না। আমি কিন্তু এ ব্যাপারে নিশ্চিত। আমি আপনাকে কিছু ঘটনার কথাও বলেছি। আপনার কি ধারণা আমি মিথ্যা কথা বলছি?
না, আপনি সত্যি কথাই বলছেন। আপনি যা সত্যি বলে বিশ্বাস করছেন তাই বলছেন। আপনার সত্যি এবং আমার সত্যি এক নাও হতে পারে। এক কাজ করলে কেমন হয়— আপনি কুটু মিয়াকে এখানে নিয়ে আসুন কিংবা আমাকে তার কাছে নিয়ে চলুন।
আপনি যাবেন?
অবশ্যই যাব। মানুষ হিসেবে আমি খুবই কৌতূহলী। আমি তাকে জিজ্ঞেস করব— আমার সবচে প্রিয় খাবারের নাম বলতে। তাকে সেই খাবার তৈরি করতে হবে না। নাম বললেই হবে। আমি নিশ্চিত সে বলতে পারবে না। আমার সবচে প্রিয় খাবার হলো হিদল ভর্তা। এবং আমার প্রিয় পারফিউম হলো— পয়জন। কুটু মিয়ার গা থেকে পয়জনের গন্ধ আসে কি-না দেখি। লেবু ফুলের গন্ধ যদি আসতে পারে পয়জনের গন্ধ আসবে না কেন?
কবে যাবেন?
কাল চলুন। দেরি করে লাভ কী? কাল সকাল দশটায় এখানে আসুন, আমি তৈরি থাকব। আজকের মতো বিদায়।
হামিদা বলল, আমাকে ওষুধ দেবেন না?
ডাক্তার সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, কুটু মিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর আপনাকে ওষুব দেব। আপনাকে কী ডোজে ওষুধ দিতে হবে এটা ঠিক করার জন্যে কুটু মিয়ার সঙ্গে দেখা হওয়া দরকার।
হামিদা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল ডাক্তার সাহেব, আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। আমি খুবই অনাগ্রহ নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে এসেছিলাম। সেই অনাগ্রহ এখন আর নেই। আমি নিশ্চিত আপনি আমার মাথা থেকে কুকুরের ডাক দূর করতে পারবেন। তবে, ডাক্তার সাহেব বললেন, তবে মানে! তবে কী?
আমার ধারণা কটু এমন কোনো ব্যবস্থা করবে যে আপনি তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।
কুটর এত ক্ষমতা?
হ্যাঁ তার এত ক্ষমতা।
ডাক্তার সাহেব বললেন, আপনি কন্ডিশন্ড হয়ে আছেন। আপনার রোগ সারতে সময় নেবে। আমি আপনাকে ঘুমের ওষুধ দিচ্ছি। চৌদ্দ মিলিগ্রাম ডরমিকাম। অবশ্যই আজ রাতে আপনি ডরমিকাম খেয়ে ঘুমুবেন। একা ঘুমুবেন না। কাউকে না কাউকে সঙ্গে রাখবেন। আগামীকাল আমি তৈরি থাক। আপনি। চলে আসবেন সকাল দশটায়।
হামিদা বলল, আমি অবশ্যই আসব।
হামিদা ডাক্তারের কথা মতো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমুতে গেল। অন্যদিন ঘুমের ওষুধ খাবার পরেও ঘুম আসতে দেরি হয়। আজ দ্রুত ঘুম এসে গেল। গভীর গাঢ় ঘুম।
ভারী নিঃশ্বাসের শব্দে হামিদার ঘুম ভাঙল। কেউ একজন তার কানের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। নিশ্বাসের গরম হাওয়া গালে লাগছে। হামিদার শরীর হিম হয়ে গেল। কানের কাছে গরম নিঃশ্বাস ফেলছে কে?
ডাক্তার সাহেব তাকে একা ঘুমুতে নিষেধ করেছিলেন। তার পরেও সে একা ঘুমুচ্ছে। কাউকে সঙ্গে নিয়ে সে ঘুমুতে পারে না। মেঝেতে বিছানা করে আসিয়া ঘুমুতে পারত। কিন্তু সে ঘুমের মধ্যে কথা বলে। কাদে। কাজেই তাকে রাখা হয় নি। এখন মনে হচ্ছে ডাক্তার সাহেবের কথা শুনা উচিত ছিল।