জামিলা নামটা কি আপনার পছন্দ হয়? জামিলা শব্দের অর্থ সুন্দরী।
খুব যে পছন্দ হচ্ছে তা না। হামিদা নামের মাঝের অক্ষর ম। আবার জামিলা নামের মাঝের অরও ম। এমন নাম দেয়া দকার যেখানে ম থাকবে না। তবে আপাতত জামিলা নামই থাকুক। ম ছাড়া নাম যখন পাওয়া যাবে তখন সেই নাম রেখে দেব। তুমি আরো নাম খুঁজতে থাক।
জ্বি আচ্ছা।
আলাউদ্দিন দ্বিতীয় গ্লাস শেষ করে তৃতীয় গ্লাসের মাঝামাঝিতে চলে এসেছেন। আরামে শরীর যেন কেমন করছে। ইচ্ছা করছে বালিশ নিয়ে বাথরুমের মেঝেতে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকেন। তিনি শুয়ে থাকবেন, কুটু গায়ের ওপর গরম পানি ঢালবে। সাবান ডলবে। মাঝে মাঝে কুটু তার মাথা উঁচু করে ধরবে, তিনি গ্লাসে চুমুক দিবেন।
কুটু!
জ্বি স্যার।
জামিলা তোমাকে পছন্দ করবে কিনা কে জানে। পছন্দ না করলে বিরাট বিপদ হবে। তোমার কি ধারণা পছন্দ করবে।
মনে হয় না।
তুমি ঠিক বলেছ— আমার ধারণা পছন্দ করবে না। কথায় আছে না পহেলা দর্শনধারী তারপরে গুণবিচারি। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা সত্য না। দর্শনধারী হলেই হলো। তোমার আবার চেহারা খুবই খারাপ। চেহারা খারাপ বলতে রাগ কর নাই তো?
জি না। সত্য কথায় রাগ করতে নাই। তোমার চেহারা খুবই খারাপ। ছোট ছেলেমেয়েরা তোমাকে অন্ধকারে দেখলে ভয়ে চিৎকার দিবে। আমি নিজেই মাঝে মাঝে ভয় পাই। কুটু, আমাকে একটা সিগারেট ধরিয়ে দাও তো।
কুটু সিগারেট ধরিয়ে দিল। আলাউদ্দিন সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বললেন, ঘুম পাচ্ছে। ইচ্ছা করছে ঘুমিয়ে পড়ি। তোমাদের পাইলট স্যার কি বাথটাবে। ঘুমাতেন।
শেষের দিকে ঘুমাইতেন।
শেষের দিকে ঘুমাইতেন মানে কী?
উনার শরীরটা যখন খারাপ হইয়া গেল তখন বাথটাবে শুইয়া থাকতেন। সেইখানেই ঘুমাতেন।
শরীর খারাপ হয়ে গেল মানে কী? কী হয়েছিল?
ডাক্তার ধরতে পারে নাই। উনি অবশ্য ডাক্তারের কাছে যানও নাই। প্রথম দুই একদিন গেছিলেন, তারপর আর যান নাই।
অসুখটা কী ছিল?
শইল ফুইলা গেল। গা হাত পা মুখ ফুইলা গেল। গর্ভবতী মাইয়াগো শরীরে পানি আসলে যেই রকম হয় সেই রকম।
বলো কী। আমারও তো শরীরে পানি আসার মতো হয়েছে। হাজী সাহেব আজ আমাকে বললেন, তোমার কি শরীরে পানি এসেছে? যাই হোক পাইলট সাহেবের কথা বলো। শরীর ফোলা ছাড়া আর কী হয়েছিল?
শইল জ্বলত। পানি দিয়া শরীর ভিজাইয়া রাখলে জ্বলুনি কমত। এই জন্যেই কি বাথটাবে শুয়ে থাকতেন?
জ্বি।
আমার তো শরীর জ্বলছে না!
আপনার শইল কেন জ্বলব? আপনার তো কিছু হয় নাই।
তাও ঠিক। খাওয়া দাওয়া বেশি করছি এই জন্যে শরীর ভারী হয়ে গেছে আর কিছু না। পাইলট সাহেব কি শেষমেষ শরীর জ্বলুনি রোগেই মারা গেলেন?
জ্বি-না। সারা শইল দিয়া ফোসকার মতো বাইর হইল। পরিষ্কার ফোসকা। মনে হয় কাচের তৈরি। ফোসকা ভর্তি টলটলা পানি।
বলো কী?
ঐ পানির ভেতর পোকা হইয়া গেল। ছোট ছোট সাদা কৃমির মতো পোকা। তাব পোকাগুলির মাথা আছে। ছোট্ট মাথা। মাথার দুই দিকে চোখ। ব্যাঙাচির চোখের মতো। ঐ পোকাগুলা স্যাররে খুবই যন্ত্রণা দিছে।
কীভাবে?
এরা মাংস খাওয়া শুরু করল।
থাক, এই গল্প বন্ধ। উজগে টমেটো জুস যা ছিল আলাউদ্দিন পুরোটাই গ্লাসে ঢেলে নিলেন। পোকার গল্পটা শোনার পর থেকে শরীর কেমন যেন করছে।
কুটু!
জি স্যার।
ভালো করে দেখ তো আমার শরীরে ফোসকা জাতীয় কিছু কি আছে?
নাই সার।
গুড। ফোসকাগুলির ভেতর যে পোকা হয় সেই পোকার মাথা আছে? মাথার দুপাশে চোখ আছে?
জ্বি, খুব ছোট ছোট দাঁতও আছে।
খালি চোখে দেখা যায়?
জ্বি-না খালি চোখে দেখা যায় না। তবে একটা ফোসকা পাইলট স্যারের চোখের মনির উপর হইছিল। সেই ফোসকার ভিতরে যে দুইটা পোকা হইছিল। সেইগুলি উনি পরিষ্কার দেখতেন। চোখ নষ্ট হইবার আগ পর্যন্ত উনি পোকাগুলি দেখছেন। বড় কষ্ট পাইছেন।
চোখ নষ্ট হয়ে গেল?
পোকাগুলি ডিম পাড়ল। সেই ডিম থেইকা বাচ্চা বাইর হইবার পর তারা চোখটা খাইয়া ফেলল। বাম চোখ চইলা গেল।
তোমার নিজের তো ৰূম চোখ নষ্ট। ঠিক না।
জ্বি। স্যার, ব্লডিমেরি কি আরেকটু খাইবেন? আইনা দেব?
দাও আরেকটু, খাই। পোকার কথাগুলি শোনার পর থেকে শরীরটা যেন। কেমন করছে। গা গুলাচ্ছে। আরেকটা খৈলে মনে হয় ঠিক হবে। কুটু তুমি যাচ্ছ কোঘায়?
আপনি যে বললেন ব্লাডিমেরি আনতে।
একটু পরে যাও। গল্প করি। তোমার সঙ্গে তো গল্পই করা হয় না।
জ্বি আচ্ছা।
তুমি কি বিয়ে করেছিলে?
জ্বি।
স্ত্রীর নাম কী?
নাম ইয়াদ নাই।
বলো কী–স্ত্রীর নাম ভুলে গেছ? জি। ছেলেমেয়ে আছে? একটা কন্যা সন্তান আছে স্যার। তার নাম মনে আছে? জ্বি না। ইয়াদ নাই।
কন্যার নামও ইয়াদ নাই। তুমি দেখি এবসেন্ট মাইন্ডেড প্রফেসর হয়ে যাচ্ছি। এটা ঠিক না। স্ত্রী এবং কন্যার নাম ইয়াদ করার চেষ্টা কর।
আচ্ছা করব।
করব না, এখনই কর। আমি এখনই তাদের নাম শুনতে চাই। আমি এক থেকে একশ শ্রেণব। এর মধ্যেই এই দুজনের নাম শুনতে চাই। এক-দুই-তিনচার-পাঁচ…
পঁচিশ পর্যন্ত এসেই আলাউদ্দিন বাথরুমের মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লেন।
হামিদার গলায় কৌতূহল, বিস্ময় এবং কিছুটা ঘেন্না
হামিদা বলল, তোমার নাম কুটু মিয়া।
হামিদার গলায় কৌতূহল, বিস্ময় এবং কিছুটা ঘেন্না। কুটু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি মেঝের দিকে। হঠাৎ জেরার মুখোমুখি হবে এই প্রস্তুতি হয়তো তার ছিল না।