দেনমোহরের ব্যাপার আগেই ঠিক করে ফেলি। পাঁচ লাখ টাকা দেন মোহর। অর্ধেক উসুল। ঠিক আছে?
জি।
তুমি খুশি তো?
জি খুশি।
মুখে হাসি নাই কেন? হাস। আচ্ছা থাক, পরে হাসলেও হবে। সময়ের টানাটানি। ম্যানেজারকে সঙ্গে নিয়ে নাপিতের দোকান থেকে চুল কেটে আস। বিয়ের আগে চুল কাটতে হয়, নখ কাটতে হয় অনেক দিনের নিয়ম।
আলাউদ্দিন সুবোধ বালকের মতো ম্যানেজারকে নিয়ে চুল কাটতে গেলেন।
রাত আটটায় বিয়ে হয়ে গেল।
রাত আটটা চল্লিশে তিনি নিজের বাড়িতে চলে এলেন। কুটু দরজা খুলে দিল। আলাউদ্দিন বললেন, বাথরুমে গরম পানি আছে? গা কুট কুট করছে। গোসল করব।
কুটু হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। তিনি সরাসরি বাথরুমে ঢুকে গেলেন।
বাথরুমে শুধু যে গরম পানি আছে তা না। বাথরুমে কাঠের একটা চেয়ার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চেয়ারের ওপর পিরিচ দিয়ে ঢাকা একটা জগ রাখা আছে। জগে লাল রঙের কোনো বস্তু। বরফ ভাসছে। পাশেই খালি গ্লসি। দেয়াশলাই, সিগারেট এবং এসট্রে সাজানো আছে। আলাউদ্দিন বিস্মিত হয়ে বললেন- ইয়ে নাকি?
কুটু বলল, জি স্যার।
টমেটো জুস?
কুটু জবাব দিল না।
ইয়ে দেয়া আছে?
জ্বি স্যার।
পেয়েছ কোথায়?
দুটা ভদকার বোতল কিনা আনছি স্যার। গুলশানে পাওয়া যায়। আটশ টাকা কইরা নিছে। মোট ষোল শ।
টাকা পেয়েছ কোথায়?
আপনার সুটকেসে টাকা ছিল। চাবিটা ছিল ড্রয়ারে। ড্রয়ার থেইকা চাবি নিয়া স্যুটকেস খুইলা টাকা নিছি।
আলাউদ্দিন বললেন, ও। তিনি বুঝতে পারছেন না, তার রাগ করা উচিত কি। মনে হচ্ছে রাগ করা উচিত। তাকে না বলে স্যুটকেস খুলে টাকা নিয়ে যাবে এটা কেমন কথা? এ তো রীতিমতো চুরি। তার অবর্তমানে সুটকেস খোলা। আলাউদ্দিন গম্ভীর হয়ে গেলেন। গম্ভীর মুখেই গ্লাসে ঢেলে টমেটো জুস নিয়ে একটা চুমুক দিলেন। আজকের জুস অসাধারণ হয়েছে। তার রাগ পড়ে গেল। এখন মনে হচ্ছে রাগ করা উচিত না। টাকা তো কুটু নিজের জন্যে নেয় নি। সংসারের কাজেই নিয়েছে। তিনি যখন ঘরে থাকেন না তখন হুটহাট করে টাকার দরকার পড়তে পারে। দেখা গেল ঘরে চাল নেই। চাল কিনতে হবে। স্যুটকেস থেকে টাকা না নিলে এইসব সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে?
কুটু!
জ্বি স্যার।
দাও, গোসল দিয়ে দাও।
আরামে আলাউদ্দিনের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। এখন মনে হচ্ছে কুটু যে বুদ্ধি করে টাকা নিয়ে ভদকা কিনে এনেছে কাজটা খুবই ভালো করেছে। এই জিনিস না। আনলে এমন আরামের ব্যবস্থা হতো না। এমনিতেই আজ মনের উপর প্রচণ্ড চাপ। গিয়েছে। তিনি বছর বয়সে বিয়ে করে ফেলা সহজ ব্যাপার না। কলিজা নড়ে যায়।
কুটু!
জ্বি স্যার।
আজ একটা ঘটনা ঘটেছে। শুনলে তুমি বিশ্বাস করবে না। ভাববে বানিয়ে বলছি। যদিও বানিয়ে বলার অভ্যাস আমার নাই।
কী ঘটনা ঘটছে স্যার?
বিয়ে করে ফেলেছি।
কুটু গায়ে যেভাবে সাবান ডলছিল সে ভাবেই ডলতে থাকল। আলাউদ্দিনের কথায় তার কোনো ভাবান্তর হলো বলে মনে হলো না। কিংবা এও হতে পারে বিয়ে করা যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা কুটু তা ধরতে পারছে না। তার কাছে হয়তো বিয়ে করা এবং নাপিতের দোকানে গিয়ে চুল কেটে আসা একই ব্যাপার।
কটু শুনেছ কী বলেছি? আজ আমি বিয়ে করেছি। বিবাহ। শুভ বিবাহ।
ভালো করছেন।
ভালো না মন্দ কে জানে! হাজী সাহেবের কথা ফেলতে পারলাম না। আমি এক সময় খুবই বিপদে পড়েছিলাম। না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা হয়েছিল। হাজী সাহেব তখন কাজ দিয়ে আমাকে বাঁচান। আজ তিনি ভাগ্নিকে নিয়ে বিপদে পড়েছেন। এই বিপদে আমি তাকে সাহায্য করব না তা হয় না। একজনের বিপদে অন্যজন দেখবে। এটাই মানব ধৰ্ম। ঠিক বলছি না কুটু?
জ্বি।
মেয়েটিও রূপবতী, নাম হামিদা বানু। নামটা একটু ইয়ে! স্কুলে হামিদ স্যার বলে আমার এক স্যার ছিলেন। খুবই রাগি। অঙ্ক না পারলে পেটের চামড়ায় ডুলা। দিতেন। হামিদা নামটা শুনলেই হামিদ স্যারের কথা মনে পড়ে। পেটে ব্যথার। মতো হয়।
নামটা বদলায়ে দেন।
তাই করতে হবে। সুন্দর কোনো নাম দিতে হবে। সে রাজি হবে কিনা কে জানে। কী নাম দেয়া যায় একটু চিন্তা করবে।
জি আচ্ছা।
আলাউদ্দিন প্রথম প্লাস শেষ করেছেন। দ্বিতীয় গ্লাস ঢালার পর জগের দিকে তাকিয়ে দেখেন জাগে এখনো অর্ধেক জুস আছে। দেখে বড়ই আনন্দ পেলেন। উদাস গলায় বললেন— মানুষ চিন্তা করে রাখে একটা, হয় আরেকটা। তবে যা হয় দেবী যায় সেটাই ভালো। এই জন্যে কথায় আছে— আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যে করেন। ঠিক না কুটু?
জ্বি।
যেমন ধর আজ কিন্তু আমার বাসায় ফেরার কথা ছিল না। বিয়ে হয়ে গেছে, স্ত্রীর সঙ্গে থাক— এটাই তো স্বাভাবিক। ব্যবস্থাও সেরকম ছিল। হাজী সাহেব বললেন তার বাড়িতেই বাসর হবে। তিন তলার একটা ঘর ঠিক করা হয়েছিল। ফুলটুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। তখন লেগে গেল ঝামেলা।
কী ঝামেলা
হামিদা শুরু করল কান্না। হাউমাউ কাউ কাউ যাকে বলে মরা কান্না। সে রাতে আমার সঙ্গে ঘুমাবে না। তার কান্না দেখে হাজী সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন, আচ্ছা থাক স্বামী স্ত্রীর আজকেই যে একসঙ্গে থাকতে হবে তা না। দুএকটা দিন যাক। হামিদা ধাতস্থ হোক।… কুটু!
জ্বি স্যার।
হামিদা নামটা তো বদলাতে হয়। যেই মুহূর্তে আমি বললাম হামিদা আমি স্যারকে চোখের সামনে দেখলাম। মনে হলো স্যার পেটের চামড়া চেপে ধরেছেন। স্যার এমনভাবে চাপ দিতেন যে পেটে জন্ম দাগের মতো দাগ পড়ে যেত। হামিদা নামটা বদলাতেই হবে। একটা নাম চিন্তা করে বের কর।