উনার কি অসুখ?
হার্টের অসুখ।
হার্টের অসুখ, দিনাজপুরে বসে আছেন কেন?
আমি উনাকে ঢাকায় আনার জন্যে যাচ্ছি।
বাবা কি করেন?
বাবা বেঁচে নেই।
যখন বেঁচে ছিলেন তখন কি করতেন?
ব্যাংকে চাকরি করতেন।
মা বেঁচে আছেন?
জি না।
সাজেদা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। মেয়েটার এখনো বিয়ে হয়নি কেন তা পরিস্কার হয়েছে। এই মেয়ে কঠিন এতিম। বাবা মা দুজনই নেই। কার দায় পড়েছে এতিম মেয়ে ঘরে ঢুকানোর? শ্বশুর শাশুড়ির আদর ছাড়া বিয়ে কি? স্ত্রীর ভালোবাসা হিসাবের মধ্যে আসে না। শ্বশুর শাশুড়ির ভালোবাসা আসে। আশহাবের সঙ্গে এই মেয়ের বিয়ের কিছুমাত্র সম্ভাবনা নেই জেনে সাজেদার ভালো লাগছে। মেয়েটার সঙ্গে এখন নিশ্চিন্ত মনে কথা বলা যাবে। যদি জানা যায় এই মেয়ে এক সঙ্গে তিনটা প্রেম করে বেড়াচ্ছে তাহলেও কিছু যায় আসে না। প্রেম করে বেড়ালে বরং ভাল।
সাজেদা বললেন, ঘুমের সময় তোমার কি নাক ডাকে?
চিত্রা থতমত খেয়ে বলল, না।
সাজেদা বললেন, আমার ডাকে। আমার ঘরে ঘুমাবে ভালো কথা। এটা মাথার মধ্যে রাখবে। মাঝ রাতে আমার ঘুম ভাঙিয়ে বলবে না, আমি এই কামরায় ঘুমাব না। একবার ঘুম ভেঙে গেলে আমার আর ঘুম আসে না।
জি আচ্ছা।
বাথরুমের পাশের কামরায় একটা ডেড বডি যাচ্ছে শুনেছ?
জি শুনেছি।
গন্ধ পাচ্ছ না? মরা মানুষের গন্ধ?
পাচ্ছি না।
তোমার কি নাক বন্ধ? লাশের গন্ধে আমার শরীর উল্টে আসছে। রেল কোম্পানির কারবারটা দেখ ডেড বডি নিয়ে রওনা হয়েছে। আর আত্মীয় স্বজনের আক্কেল দেখ। তোরা নিজেরা নিজেরা যা। একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে চলে যা—-মাইক্রোবাসে একটা লাল ফ্ল্যাগ ঝুলিয়ে দিবি সবাই সাইড দিবে। হোস করে চলে যাবি। ট্রেনের অতগুলি যাত্রীকে বিপদে ফেললি কি মনে করে?
চিত্রা চুপ করে রইল।
ভদ্রমহিলা বিরক্ত গলায় বললেন, এখন একটা কাজ কর। আমার ছেলেকে খুঁজে বের কর। তাকে বল জর্দার ব্যবস্থা করতে। কোত্থেকে ব্যবস্থা করবে সে জানে।
চিত্র উঠে দাঁড়াল। সাজেদা মনে মনে আফসোসের নিঃশ্বাস ফেললেন কি সুন্দর লম্বা একটা মেয়ে। শুধু যদি এতিম না হত। শাড়িটাও পরেছে সুন্দর করে। শাড়ির উপর চাদরের কাজটাও ভালো। তবে হাতি ঘোড়ার ছবি আঁকা। এমন চাদর গায়ে দিয়ে নামাজ হবে না। প্রশ্ন করলে দেখা যাবে মেয়ে নামাজই পড়ে না। তার পরেও জানা থাকা ভালো। সাজেদা বললেন, তুমি নামাজ পড়?
মাঝে মধ্যে পড়ি!
এটা কেমন কথা। মাঝে মধ্যে পড়ি মানে কি? তুমি কি মাঝে মধ্যে ভাত খাও? ভাততো তিনবেলাই খাও। দোয়া মাছুরাটা কি বল দেখি।
চিত্রা বলল, আমি জর্দার ব্যবস্থা করে তারপর বলি?
চিত্রার মোবাইল বাজছে। লিলির টেলিফোন। লিলি আজ ঘুমাবে না। সারারাত জেগে থাকবে। কিছুক্ষণ পর পর টেলিফোন করে বিরক্ত করবে। চিত্রা মোবাইল হাতে কামরা থেকে বের হয়ে এল। চিত্রা হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে লিলি বলল, ছয়বার রিং হবার পর ধরলি। ব্যাপার কি? শোন তোর জন্যে ভালো খবর আছে।
কি খবর?
মামা জানিয়েছেন সেলুন কারে একজন মন্ত্রী যাচ্ছেন ময়মনসিংহ পর্যন্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উনি নেমে গেলেই তুই সেলুন কারে দাখিল হয়ে যাবি। কোনো সমস্যা নেই। রাজার হালে যাবি। থুক্কু রাণীর হালে যাবি। কুইন অব দিনাজপুর।
হুঁ।
হুঁ হুঁ করছিস কেন? এ রকম একটা নিউজ দিলাম, তুই লাফিয়ে উঠবি তা না শুকনা। আর শোন তোর কামরায় যে বুড়ো উঠেছে উনার খোঁজ পাওয়া গেছে। উনিতো খুবই নামকরা মানুষ। প্রফেসর রশীদ। আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটির ম্যাথমেটিক্সের ফুল প্রফেসর। ম্যাথমেটিক্সে নোবেল প্রাইজের ব্যবস্থা থাকলে উনি অবশ্যই নোবেল পুরস্কার পেতেন।
তাঁর সম্পর্কে খবর কোথায় পেয়েছিস?
মামা জানিয়েছেন। তোর কামরাটা খালিই ছিল। উনি যখন টিকেট চাইলেন তখন উনাকে দিতেই হয়েছে। এখন বুঝেছিস।
হুঁ।
চিত্রা তুই বরং ঐ বুড়োর সঙ্গেই থাক। বুড়ো তোর গায়ে হাত রাখলে ভাল। সবাইকে বলতে পারবি বিখ্যাত একজন মানুষ আমাকে হাতা-পিতা করেছেন।
চুপ কর।
ফান করলে তুই রেগে যাস কেন?
তোর ফান আমার ভাল লাগে না।
চিত্রা শোন সেলুন কারে দাখেল হবার পর সেখানকার সুবিধা-অসুবিধা আমাকে টেলিফোন করে জানাবি। আমি নিজে সেলুন কার দেখিনি। তোর কাছে যদি শুনি জোশ তাহলে প্রগ্রাম করে তোকে নিয়ে একবার সেলুন কারে ঘুরব।
আচ্ছা।
সারারাত আমার মোবাইল খোলা থাকবে। সমস্যা মনে করলেই আমাকে জানাবি। তোর জন্যে আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।
আবার কি সারপ্রাইজ?
এখন বললে তো আর সারপ্রাইজ থাকবে না। যখন ঘটবে তখন জানবি। ইন্টারেস্টিং সারপ্রাইজ। খোদা হাফেজ।
গুড নাইট, স্লিপ টাইট।
রশীদ সাহেব সিগারেট খেতে বের হয়েছেন তবে এবার করিডোরে না। দরজার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দরজার একটা জানালা সামান্য খোলা। খোলা জানালায় শীতের বাতাস ঢুকছে। প্রবল হাওয়ায় সিগারেট টানা মুশকিল, তবে তার তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। রেলের এটেনডেন্ট জানালার পাশে বসার জন্যে সবুজ রঙের একটা প্লাস্টিকের চেয়ার এনে দিয়েছে। তিনি এটেনডেন্টের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা করছে এখনি তাকে কিছু বখশিস দেন। পাঁচশ টাকা দিয়ে দিলে কেমন হয়? পাঁচশ টাকা এমন কিছু টাকা না। সাত ডলারেরও কম। বিশ ডলার বখশিস তাঁকে প্রায়ই দিতে হয়। টাকাটা এখনি দিয়ে দেয়া দরকার। নামার সময় তড়িঘড়ি করে নামবেন। বখশিস দিতে ভুলে যাবেন।