আল্লাহ বললেন, তোমাকে সাহায্য করার জন্যে আমি তিনবার ব্যবস্থা নিয়েছি। একবার নৌকা পাঠানো হয়েছে। তারপর গেল লঞ্চ। সর্বশেষে হেলিকপ্টারও পাঠালাম। বল আর কি করতে পারতাম?
আমার গল্প শেষ। আমি এখন বিদায় নেব।
মাওলানা বললেন, আপনার গল্পটা সুন্দর। গল্প কিন্তু গল্পই। আল্লাহপাক ইচ্ছা করলেই বন্যার পানি নামিয়ে দিতে পারতেন।
রশীদ উদ্দিন বললেন, তা অবশ্যই পারতেন। তিনি আপনার সন্তানের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন কিন্তু মাওলানা সাহেব আপনি কি একটা হাদিস জানেন? এই হাদিস অনুযায়ী আল্লাহপাক বলেছেন, তুমি যখন রোগগ্রস্ত হবে তখন একজন ভাল চিকিৎসকের কাছে যাবে সেই সঙ্গে রোগমুক্তির প্রার্থনা করবে।
মাওলানা বললেন, আমি এই হাদিসের কথা জানি না।
রশীদ উদ্দিন বললেন, আমি জানি। আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেন। আমার প্রাথমিক পড়াশোনা মাদ্রাসায়। আপনি আমার কথা শুনুন, আমি ডাক্তার ছেলেটিকে ডাকি। সে আপনার স্ত্রীকে ‘মা’ সম্বোধন করে কামরায় ঢুকুক।
মা ডাকলেই মা হয় না।
রশীদ উদ্দিন বললেন, তাও ঠিক। কোরান শরীফেই আছে পালক পুত্র পুত্র নয়। তারপরেও এই ডাক্তারের কল্যাণে হয়ত আপনার সন্তান। তার মাকে মা ডাকবে। জগতের মধুরতম শব্দ আপনার স্ত্রী শুনবে।
মাওলানা বললেন, ঐ ডাক্তার ছেলে গলাপর্যন্ত মদ খেয়েছে। তার মুখ দিয়ে ভক ভক করে মদের গন্ধ, আসছে। ঐ গন্ধ আমি চিনি। কিছু মনে করবেন না জনাব আপনিও মদ খেয়েছেন।
রশীদ উদ্দিন হতাশ গলায় বললেন, কথা সত্য। মদ খাওয়ায় ডাক্তারের শরীর এবং মন হয়ত অশুচি হয়েছে। তার বিদ্যা কিন্তু হয় নি।
রশীদ উদ্দিনের কথা শেষ হবার আগেই চিত্রা কামরা থেকে বের হল। উত্তেজিত গলায় বলল, ডাক্তার কোথায়? বাচ্চা বের হচ্ছে। মাথা বের হচ্ছে।
চিত্রা ছুটে চলে গেল। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হতভম্ব মাওলানার সামনেই ডাক্তারের হাত ধরে টানতে টানতে কেবিনে ঢুকে গেল।
মাওলানা বললেন, কাজটা কি ঠিক হয়েছে?
রশীদ সাহেব বললেন, যদি আমার মতামত জানতে চান তাহলে বলব কাজ উত্তম হয়েছে। এখন আপনি নিশ্চিন্ত মনে আল্লাহপাককে ডাকতে পারেন।
.
চিত্রা ভয়ে কাঁদছে। তার কাছে মনে হচ্ছে সে এক্ষুনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে। আশহাব বলল, আপনি ঘাবড়াবেন না। মহিলার হাত ধরুন। ডেলিভারি নরম্যাল হবে। আমার ফুটন্ত পানি দরকার। ব্লেড দরকার, সূতা দরকার।
ব্লেড দিয়ে কি করবেন?
বাচ্চার নাড়ি কাটতে হবে না।
আফিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, আপনি কি ডাক্তার?
আশহাব বলল, আমি ডাক্তার, এবং খুব ভাল ডাক্তার। গাইনি আমার বিষয় না, তারপরেও কোনো সমস্যা নেই। আপনাকে যা করতে বলব করবেন আমাকে সাহায্য করবেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় চাপ আসবে তার জন্যে প্রস্তুত হোন। যখন নিঃশ্বাস চেপে রাখতে বলব তখন নিঃশ্বাস চাপবেন।
আফিয়া গোংগাতে গোংগাতে বলল, আমি পারব না। আমি পারব না।
.
রশীদ সাহেব মাওলানাকে বললেন, আপনি কি একটা ম্যাজিক দেখবেন?
হতভম্ব মাওলানা বললেন, ম্যাজিক?
পয়সা অদৃশ্য করার খেলা দেখাব। মজা পাবেন।
আপনার কি মাথা টাথা খারাপ এখন ম্যাজিক দেখাবেন?
মূল ম্যাজিক আল্লাহপাক কিছুক্ষণের মধ্যে দেখাবেন এখন আমারটা দেখুন। আমার ডান হাতে কি? পাঁচ টাকার একটা কয়েন না। কয়েনটা এখন নিলাম বাম হাতে। এখন দেখুন বাম হাত শূন্য। ডান হাতও শূন্য। বলুন কয়েনটা কোথায়?
জাহান্নামে।
খারাপ বলেন নি। From here to eternity.
চিত্রা দরজা খুলে বলল, ফুটন্ত পানি লাগবে, ব্লেড লাগবে, সূতা লাগবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডেলিভারি হবে।
মাওলানা তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে সে চিত্রার কথা বুঝতে পারছে না। চিত্রা তাঁকে কঠিন ধমক দিল, হাদার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ব্যবস্থা করুন।
.
সেলুন কারে বাতি জ্বলা নেভার খেলা চলছে। এই বাতি জ্বলছে এই নেই। সেলুন কারের যাত্রীরা আতংকে অস্থির। সবচেয়ে ভয় পেয়েছে যমুনা এবং তার স্বামী। যতবার বাতি নিভছে ততবার সে আতংকে অস্থির হয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরছে। ভয় সংক্রামক। যমুনার আতংক ছড়িয়ে পড়েছে সবার মধ্যে। বদরুলের কর্মকাণ্ডও সবাইকে ঘাবড়ে দিচ্ছে। তার মেন্টাল ব্রেক ডাউনের মত হয়েছে। সে যেসব কথাবার্তা বলছে তার কোনো অর্থই বুঝা যাচ্ছে না তবে মাঝে মাঝে যখন বলছে– “মেরে ফেলবে। সবাইকে মেরে ফেলবে” তখন সবাই আঁৎকে উঠছে। মেরে ফেলবে বাক্যের অর্থ না বুঝার কিছু না। খায়ের সাহেবের মন্ত্রীত্ব নেই এই খবর এখন সবাই জানে। মূল আতংক এখানেই।
খায়ের সাহেব পূর্ত প্রতিমন্ত্রী হেলাল উদ্দিনকে টেলিফোন করছেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হেলাল টেলিফোন ধরেছেন এবং ধরেই বলেছেন, আপনার ব্যাপারটা শুনেছি। ভেরি স্যাড। দলের মধ্যে কান ভাঙানির লোক হয়েছে বেশি এরাই কাজটা করেছে। আপনি একজন সিনসিয়ার ওয়ার্কার। দলের জন্যে আপনার সেক্রিফাইস আছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সবাই একদিন ভুল বুঝতে পারবে।
আবুল খায়ের সাহেব বললেন, আমি এখন এক বিপদে আছি। তুমি কাউকে বলে কিছু করতে পারবে?
হেলাল উদ্দিন বললেন, কি বিপদ?
আবুল খায়ের বিপদটা মোটামুটি গুছিয়েই বললেন। বাতি জ্বালানো নিভানো অংশও বাদ দিলেন না।
হেলাল উদ্দিন বললেন, কি সর্বনাশ। এদের এটিচুডতে মোটেই ভাল মনে হচ্ছে না।