এটেনডেন্ট বলল, কামরার ভেতরে সিগারেট খাওয়া যাবে না, আমি উনাকে নিষেধ করে দিচ্ছি।
আর কোনো সিট কি আছে?
বাথরুমের কাছের ফোর সিটারে একটা খালি আছে কিন্তু সেখানে আপনি যেতে পারবেন না।
যেতে পারব না কেন?
ম্যাডাম, সামান্য অসুবিধা আছে। তারপরেও খোঁজ নিয়ে দেখি। আপাতত নিজের কামরায় বসুন।
এটেনডেন্ট স্যুটকেস ঢুকিয়ে দিল। চিত্রাকে তার পেছনে পেছনে যেতে হল। চিত্রাকে ঢুকতে দেখে বুড়ো পা গুটিয়ে নিল। পিট পিট করে তাকাল। বুড়োর নাকের নিচে বিশাল গোঁফ। উপরের ঠোঁটটা গোঁফের কারণে ঢাকা পড়ায় তাকে কার্টুন ফিগারের মত লাগছে।
চিত্রা বলল, দয়া করে সিগারেট খাবেন না। আমি সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারি না।
বুড়ো বলল, তুমি কি আমার সঙ্গে যাচ্ছ? আমার রুম মেট?
জি।
ভালো সমস্যা হল। আমি সিগারেটে টান না দিয়ে থাকতে পারি না।
করিডোরে গিয়ে খাবেন।
বুড়ো বলল, আমার শরীর ভালো না। আর্থরাইটিসের ব্যথা। হাঁটাহাঁটি করতে পারি না। প্রতিবার সিগারেটের জন্যে করিডোরে যাওয়া আমার জন্যে সমস্যা। যাই হোক তোমার নাম কি?
চিত্রা।
চিত্রা নামের অর্থ কি?
জানি না। (চিত্রা তার নামের অর্থ জানে। বুড়োটাকে অর্থ বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না। চিত্রা একটা নক্ষত্রের নাম।)
হত। বাবা আবার কি মনে করে নামের আগে আব্দুর বসিয়েছেন। তুমি কি পড়াশোনা করছ? ছাত্রী?
জি।
কি পড়ছ?
ফিজিক্স।
কোন ইয়ার?
থার্ড ইয়ার। এবার অনার্স দেব।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি?
জি।
ইউনিভার্সিটি খোলা না?
খোলা।
ইউনিভার্সিটি খোলা, তাহলে যাচ্ছ কোথায়? ক্লাস মিস করে ঘোরাঘুরি করার মানে কি?
জবাব না দিয়ে চিত্রা বের হয়ে গেল। ক্লাস মিস দিয়ে ঘোরাঘুরি করলে বুড়োর কি? বুড়োর সঙ্গে অকারণ কথা বলার চেয়ে করিডোরে হাঁটাহাঁটি করা ভালো। ট্রেনে বুফে কার নিশ্চয়ই আছে। বুফে কারে জানালার পাশে বসে চা খেতে খেতে দূরের দৃশ্য দেখা যেতে পারে। সন্ধ্যা এখনো মিলায়নি। শেষ বিকেলের আলোয় দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত দেখতে ভালো লাগার কথা। রিডার্স ডাইজেস্ট খুলে jokes পড়া যেতে পারে। যদিও সে এখনো রিডার্স ডাইজেস্টের কোন জোক পড়ে হাসেনি। ভাগ্য ভাল থাকলে এবার হয়ত হাসবে।
তিন কামরা পরেই বুফে কার। সেখানে চা নেই আছে কফি। চা বিক্রিতে লাভ নেই। কফিতে লাভ বলেই কফি। কফির কড়া গন্ধ চিত্রার ভালো লাগে না তারপরেও সে কফি নিয়ে জানালার পাশে বসল। ব্যাগের ভেতর মোবাইল ফোনের রিং বাজছে। মনে হচ্ছে হাত ব্যাগের ভেতর ছোট্ট কোনো শিশু হাতপা ছুঁড়ে কাঁদছে। এক্ষুনি তাকে কোলে নিতে হবে।
টেলিফোন করেছে লিলি। ধরবে না ধরবে না করেও চিত্রা টেলিফোন ধরল। লিলি অকারণে কথা বলবে। বিরক্ত অবস্থায় কারোর অকারণ কথা শুনতে ভাল লাগে না।
হ্যালো চিত্রা, ট্রেন ছেড়েছে?
হুঁ।
টঙ্গী পার হয়ে গেছে?
হুঁ।
হুঁ হুঁ করছিস কেন। কথা বল। নিজের মতো করে টু সিটের স্লিপার পেয়েছিস?
হুঁ।
বললাম না মামাকে বললেই মামা ব্যবস্থা করে দেবে। এখন দরজা বন্ধ করে হাফ নেংটা হয়ে শুয়ে পড়। তুইতো আবার ট্রেনে ঘুমাতে পারিস না। গল্পের বই নিয়ে বসে যা। গান শোনার যন্ত্রপাতি নিয়েছিস? এম পি থ্রীটা আছে না?
না।
সেকি? আমার ওয়াকম্যানটা তোকে নিয়ে যেতে বললাম না? বের করে তোর টেবিলে রেখেছিলাম।
ওয়াকম্যানে গান শুনতে আমার ভালো লাগে না। মনে হয় কানের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে কেউ গান করছে।
লিলি আনন্দিত গলায় বলল, এটাইতো ভালো। শুধু পুরুষ গায়কদের গান শুনবি। মনে হবে কোনো পুরুষ তোর কানে চুমু খাচ্ছে।
চিত্রার বিরক্তি লাগছে। লিলির মুখ আলগা। অশালীন কথাবার্তা সে অবলীলায় বলে। চিত্রা বলল, লিলি একটা কথা—তোর মামা কিন্তু আমাকে একা সিট দেননি। আমার সঙ্গে এক বুড়ো আছে।
বলিস কি? আমি এক্ষুনি মামাকে টেলিফোন করছি।
এখন টেলিফোন করে লাভ কি?
অবশ্যই লাভ আছে। প্রয়োজনে ট্রেন ব্যাক করে ঢাকা যাবে। নতুন বগি লাগানো হবে। নো হাংকি পাংকি।
কেন অর্থহীন কথা বলছিস?
লিলি বলল, আমি মোটেই অর্থহীন কথা বলছি না। আমি অর্থহীন কথা বলার মেয়ে না। এক্ষুনি টেলিফোন করে আমি মামার বারটা বাজিয়ে দিচ্ছি। আর শোন, বুড়ো যেহেতু আছে—খবরদার ঘুমাবি না। বুড়োগুলো হয় sex starved। শুধু ছোঁক ছোঁক করে। রাতে ঘুমিয়ে পড়বি হঠাৎ জেগে উঠে দেখবি বুড়ো তোর বিশেষ কোনো জায়গায় হাত রেখে ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
Please stop it.
এরচে ভয়ংকর কিছুও ঘটতে পারে। যেমন ধর…
চিত্রা টেলিফোনের লাইন অফ করে দিল। লিলি থামবে না— নোংরা কথা বলতেই থাকবে। লিলি পরীর মতো একটা মেয়ে। মায়া মায়া চোখ। পবিত্র চেহারা অথচ কি সব নোংরা ধরনের কথা।
চিত্রা কফিতে চুমুক দিল। যা ভেবেছিল তাই অতিরিক্ত চিনি এবং কুসুম গরমও না। কফি থেকে হরলিক্সের গন্ধও আসছে। এর মানে কি? বয়কে ডেকে একটা ধমককি দেয়া যায় না? অবশ্যই দেয়া যায়। তবে এই মুহূর্তে ধমক দেয়া যাবে না। অন্য একজন ধমকা ধমকি করছেন। তিনি গর্ভবতী বোরকাওয়ালীর স্বামী–মাওলানা। তিনি পানি কিনতে এসেছেন। ছোট এক বোতল পানি তের টাকা চাচ্ছে। অথচ বাইরে বার টাকা। বয় নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন, বাইরে থেকে পানি কিনেন। খামাখা প্যাচাল পারেন কেন?
মাওলানা এখনো তার স্ত্রীকে পানি খাওয়াননি ভেবে চিত্রার খারাপ লাগছে। তার স্বামীও কি এরকম ইনসেনসেটিভ হবে?