রশীদ উদ্দিন এগিয়ে গেলেন। চিত্রা গেল তার পিছু পিছু। মাওলানা ভুরু কুঁচকে তাকালেন। রশীদ সাহেব বললেন, আসোলামু আলায়কুম।
মাওলানা শীতল গলায় বললেন, ওয়ালাইকুম সালাম।
রশীদ উদ্দিন বললেন, আপনার স্ত্রীর লেবার পেইন শুরু হয়েছে বলে শুনেছি। এইটাই কি আপনাদের প্রথম সন্তান?
জি।
ছেলে না মেয়ে?
কি করে বলব। সন্তানতো এখনো হয় নাই।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে আগে ভাগে জানার ব্যবস্থা আছে।
মাওলানা বললেন, আল্লাহপাক যদি চাইতেন আমরা আগে ভাগে জানি তাহলে মেয়েদের পেটের চামড়া পাতলা কাঁচের মতো বানাতেন আমরা পেটের ভেতরের সন্তান দেখতে পেতাম।
রশীদ উদ্দিন বললেন, আল্লাহ পাক মানুষকে ক্ষমতা দিয়েছেন যেন সে অজানাকে জানতে পারে। সূরা আল ইমরানে আছে…
মাওলানা বললেন, জনাব আমি আপনার সঙ্গে তর্কে যাব না। আমি বুঝতে পারছি আপনি তর্কে আমাকে পরাস্ত করার আনন্দ পেতে চান। আনন্দ আপনাকে দিলাম—আগেই পরাজয় মানলাম।
রশীদ উদ্দিন বললেন, একজন পুরুষ ডাক্তার আমাদের সঙ্গে আছেন।
আমি আমার স্ত্রীর পর্দা নষ্ট করব না। কোনো পুরুষ ডাক্তার তাকে দেখাব না।
আপনার সিদ্ধান্তের কারণে আপনার স্ত্রী বা সন্তানের সমূহ ক্ষতি কিন্তু হতে পারে। দুর্ঘটনা ঘটে তারাতো মারাও যেতে পারে।
যদি মারা যায় তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহপাক তাদের আয়ু দেন নাই। জনাব আপনার সঙ্গে আর বাক্যালাপ করব না। গোস্তাকি নিবেন না। আমার মন অস্থির। তর্ক করার মতো অবস্থায় আমি নাই।
মাওলানা কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
চিত্রা বলল, চাচাজি উনি কোনো লজিকই শুনবেন না।
রশীদ উদ্দিন বললেন, এ রকম হয়। এই মাওলানা নিশ্চয়ই লজিকের কারণে অনেক বার আহত হয়েছেন যে কারণে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বড় বড় বিজ্ঞানীদের মধ্যেও এই জিনিস দেখা যায়। অন্য বিজ্ঞানীদের লজিক যাতে শুনতে না হয় তার জন্যে নিজে লজিক থেকে সরে যান।
চিত্রা বলল, আমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব?
রশীদ উদ্দিন বললেন, আমি দাঁড়িয়ে থাকব। মাওলানা আবার যখন বের হবেন তাকে আবার ধরব। ভাল কথা তোমার কাছে কি কোনো কয়েন আছে।
কেন বলুন তো!
তোমাকে একটা ম্যাজিক দেখাব।
এখন দেখাবেন। এইখানে?
Why not.
চিত্রা হ্যান্ডব্যাগ খুঁজে কোনো কয়েন পেল না। রশীদ উদ্দিন বললেন, কারো কাছ থেকে খুঁজে একটা কয়েন নিয়ে এসো তো।
বিস্মিত চিত্রা কয়েনের খোঁজে বের হল। মানুষটা কি পাগল? এই অবস্থায় কেউ ম্যাজিক দেখানোর কয়েন খোঁজে? বেশির ভাগ বিখ্যাত মানুষ একসেনট্রিক। এই একসিনট্রিসিটির কতটা সত্যি আর কতটা ভান? আমি আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো না। আমি আলাদা আমি অন্য রকম’ এই ধারণা বিখ্যাত মানুষরাই দিতে চেষ্টা করেন। সাধারণ মানুষদের এই সব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। আমি যা আমি তাই। Take me or leave me.
চিত্রা!
চিত্রা থমকে দাঁড়াল। ডাক্তার আশহাব। তাঁর মুখ চিন্তিত। চিত্রা বিস্মিত। এই ভদ্রলোক এত সহজে তাকে চিত্রা ডাকছে যেন সে তার ঘরের কেউ।
আশহাব বলল, আমার মায়ের মাথা পুরোপুরি গেছে। ব্রেইনের নিউরেনোল কানেকশনের চল্লিশ পার্সেন্ট মনে হয় অফ হয়ে গেছে। পরিচিত জগত সম্পর্কে যেখানে information থাকে সেখানে মনে হয় একটা havoc হয়ে গেছে।
আপনাকে চিনতে পারছেন না?
আমাকে এখনো চিনতে পারছেন তবে কিছুক্ষণ পরে মনে হয় চিনতে পারবেন না।
চিত্রা বলল, কিছু মনে করবেন না। আপনাকে কিন্তু খুশি খুশি লাগছে।
আশহাব বলল, ঠিক ধরেছেন বিচিত্র কারণে আমি ফান পাচ্ছি। কেন পাচ্ছি নিজেও জানি না।।
চিত্রা বলল, আমি জানি।
আশহাব বিস্মিত হয়ে বলল, আপনি কিভাবে জানবেন?
চিত্রা কঠিন গলায় বলল, আপনার মা আমাকে বৌমা বৌমা ডাকছেন এই বিষয়টাতে আপনি ফান পাচ্ছেন। যে কোনো মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করতে ছেলেরা ভালোবাসে এবং ফান পায়।
আশহাব বলল, আর মেয়েরা কিসে Fun পায়?
মেয়েরা বিয়ের আগে কোনো পুরুষকেই স্বামী ভেবে fun পায় না। তার প্রেমিককেও সে বিয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বামী ভাবে না। আপনার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি আপনি যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন। আপনার সঙ্গে কথা কাটাকাটি খেলার শখ এই মুহূর্তে হচ্ছে না। আপনার কাছে যদি কয়েন থাকে আমাকে একটা কয়েন দিন।
কয়েন দিয়ে কি করবেন?
ম্যাজিক দেখব। রশীদ সাহেব ম্যাজিক দেখাবেন।
আশহাব কয়েন বের করতে করতে ক্ষীণ স্বরে বলল, আমার মা আপনাকে ছাড়া ডিনার করবেন না।
চিত্রা বলল, না করলে নাই।
একজন অসুস্থ মানুষ। তার দিকটা দেখবেন না?
আমিও অসুস্থ।
.
রশীদ সাহেব কয়েন হাতে নিতে নিতে বললেন, চিত্রা মন দিয়ে দেখ কি করছি কয়েনটা কোন হাতে?
ডান হাতে।
এখন কোন হাতে নিয়েছি?
বাম হাতে। রশীদ সাহেব বাম হাত খুলে দেখালেন যে বাম হাত শূন্য। চিত্রা বলল, কয়েনটা ডান হাতেই আছে। আপনি ভঙ্গি করছেন কয়েনটা বাম হাতে নিয়েছেন আসলে নেন নি।
তোমার ধারণা কয়েনটা ডান হাতে?
জি।
রশীদ সাহেব ডান হাত খুলে দেখালেন। সেখানে কয়েন নেই। দুই হাতের কোথাও নেই। দু’টা হাতই খালি। চিত্রা বলল, কয়েন গেল কোথায়?
রশীদ সাহেব বললেন, আমারোতো একই প্রশ্ন। কয়েন গেল কোথায়। এ রকম জলজ্যান্ত একটা বস্তুতো উধাও হয়ে যেতে পারে না তাই না?