আবুল খায়ের খান টেলিফোন করেছেন পূর্ত মন্ত্রীকে। রিং হচ্ছে। কেউ টেলিফোন ধরছে না। রিং হতে হতে টেলিফোন থেমে গেল। একটা সময় ছিল দ্বিতীয় রিং শেষ হবার আগেই পূর্তমন্ত্রী বলতেন, গ্রেট খায়ের ভাই! কি ব্যাপার! বান্দা হাজির।
এখন সময় ভিন্ন। খায়ের ভাইয়ের গ্রেটনেস বলে কিছু নেই। তার টেলিফোন ধরতে হবে না। আবুল খায়ের আবার টেলিফোন করলেন। তার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। তিনি ঠিক করেছেন টেলিফোন করেই যাবেন। ব্যাটা যতক্ষণ না ধরবে ততক্ষণই টেলিফোন বাজতে থাকবে। শালার বাচ্চা শালা!
ভিডিও ম্যান বদরুল ফুরফুরে মেজাজে এগুচ্ছে। তার হাতে ভিডিও ক্যামেরা না থাকায় হাত খালি খালি লাগছে। শরীর ভার শূন্য। মনে হচ্ছে অফিস শেষ হয়েছে এখন তার ছুটি। ভিডিও ক্যামেরা হাতে থাকা মানেই অফিস। একেকজনের অফিস একেক রকম। কবির অফিস তার কাঁধের ঝোলায়। ভিডিওম্যানের অফিস ভিডিও ক্যামেরায়। লেখকের অফিস তাঁর মাথায়।
সেলুন কার পার হয়েই সে ঢুকল ডায়নামো কারে। বিকট সব যন্ত্রপাতি। শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ইলেকট্রিসিটি, বিভিন্ন কামরায় চলে যাচ্ছে। শুধু তাদের কামরাতেই আলো নেই। কিছুদূর এগুতেই রেলের কিছু লোকজন দেখা গেল। গোল হয়ে বসে চা খাচ্ছে। ক্রিমিনালটাকে দেখা যাচ্ছে না। সবাই অপরিচিত। বদরুল বলল, হ্যালো আপনারা রেলের লোক?
সবাই এক সঙ্গে তাকালো। কেউ জবাব দিল না।
বদরুল কঠিন গলায় বলল, মন্ত্রী মহোদয় আমাকে পাঠিয়েছেন। উনি জানতে চেয়েছেন সেলুন কার অন্ধকার কেন? অলরেডি রেলের বড় বড় অফিসারের কাছে টেলিফোন চলে গেছে।
দলের একজন (গোল মুখ, গোফ আছে। বডি বিল্ডারের মতো চেহারা) চায়ের কাপে শব্দ করে চুমুক দিয়ে বলল, আপনে কে?
বদরুল বলল, আমি কে তা দিয়ে আপনার প্রয়োজন কি? ধরে নিন আমি মন্ত্রী মহোদয়ের পি এস।
আপনার নাম বলেন।
আপনাকে নাম বলতে যাব কেন?
বদরুলের কথা শুনে সেই লোক চায়ের কাপ মেঝেতে রেখে শান্ত ভঙ্গিতে উঠে এল। বদরুল কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রচণ্ড শব্দে চড় বসালো। বদরুল ছিটকে পেছনের বেঞ্চে পড়ে গেল। বসে থাকা সবাই শব্দ করে হেসে উঠল। বডি বিল্ডার টাইপ লোকটা বলল, এখন প্রশ্ন করলে জবাব দিবে। তেড়িবেড়ি করবে না।
তোর নাম কি?
বদরুলের কপাল ফেটে গেছে। টপটপ করে রক্ত পড়ছে। সে কপালের রক্ত মুছে হতভম্ব গলায় বলল, এইসব কি? আপনারা সবাই আন্ডার এ্যারেস্ট। এক্ষুনি রেল পুলিশ আসবে। সবাইকে ডিটেনশনে যেতে হবে।
এই হারামীর পুত যা জিজ্ঞেস করব জবাব দিবি তোর নাম কি?
বদরুল।
তুই করস কি?
আমি ভিডিওম্যান। ভিডিও করি।
সবুরের ভিডিও তুই করেছিস? এইবার তোর ভিডিও করা হবে। এই তোমরা হারামীর বাচ্চাটার জামা কাপড় খুলে ফেলে একে নেংটা করে ফেল। নেংটা ভিডিও হবে।
বদরুল চেঁচিয়ে বলল, কি বলেন।
এরে পুরো নেংটা করে ফিরত পাঠাও। তারা বুঝুক ঘটনা কি।
বদরুল বলল, আমি মন্ত্রী মহোদয়ের লোক।
রাখ ব্যাটা মন্ত্রী মহোদয়। তোর মন্ত্রীর পাছায় এখন বাঁশ। সে আর মন্ত্রী নাই। তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তোকে নেংটা অবস্থায় ছাড়বো। তুই তোর মন্ত্রীকে বলবি সবুরকে যে কানে ধরে উঠবোস করিয়েছে তাকেও কানে ধরে উঠবোস করতে হবে। তোকে নেংটো অবস্থায় দেখলে তারা বুঝবে খবর ভালো না। আমরা মানুষ খারাপ।
বদরুল বুঝতেই পারেনি যে তাকে সত্যি সত্যি নগ্ন করে ফেলা হবে। সে হা হয়ে গেল।
দাঁড়িয়ে থাকবি না যা। মন্ত্রী মহোদয় তোকে যেন ঠিকমতো দেখতে পায় সে জন্যে কিছুক্ষণের জন্যে সেলুন কারে কারেন্ট দেয়া হবে। এই তুই রওনা হ। নেংটো, হাত দিয়ে ঢাকাঢাকি করার চেষ্টা করবি না। চেষ্টা করলে হাত কেটে ফেলে দিব।
বদরুল কাতর গলায় বলল, আমি এইভাবে যেতে পারব না। ভাই আমি আপনাদের পায়ে ধরি।
পায়ে ধরে লাভ নেই। তুই এখন রওনা দে। এখন রওনা না দিলে তোকে কি করা হবে সেটা তোর কানে কানে বলব, তুই সঙ্গে সঙ্গে রওনা হবি। দৌড়ায়া যাবি। হা হা হা।
সবাই হাসছে। বদরুল আতংকে জমে গেল। ব্যাপারটা সত্যি ঘটেছে নাকি এটা কোনো ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন তা সে বুঝতে পারছে না। বডি বিল্ডার উঁচু গলায় বলল, সেলুন কারে কারেন্ট দাও।
একজন কি একটা হাতলে চাপ দিল।
সেলুন কারে বাতি
সেলুন কারে বাতি জ্বলে উঠেছে। এক সঙ্গে সবাই হৈ হৈ করে উঠল। যমুনা হাত তালি দিচ্ছে। যমুনার দেখাদেখি অন্যরাও হাত তালি দিচ্ছে। ব্যান্ডের একজন অতি দ্রুত ড্রামে কয়েকটা বাড়ি দিল। বিপুল হাত তালির ভেতর বদরুল ঢুকল। সেলুন কারে হঠাৎ যেন বজ্রপাত হল।
.
আশহাব মা’র পাশে বসে আছে। সাজেদা শান্ত। দেখে বুঝার উপায় নেই যে কিছুক্ষণ আগেও কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। তিনি হট পট খুলে খাবার বের করেছেন। পেপার প্লেট, নেপকিন বের হয়েছে। আচারের কৌটা, কাঁচামরিচ। আয়োজনে কোনো খুঁত নেই। একটা কাসুন্দির শিশিও দেখা যাচ্ছে।
সাজেদা বললেন, বৌমা আবার কোথায় গেল। ঘরের বউ হুট হাট করে বেড়াতে বের হওয়া আমার পছন্দ নয়। বৌমাকে ডেকে আন।
আশহাব বলল, মা তুমি বৌমা পেলে কোথায়? চিত্রা এই ট্রেনের একজন যাত্রী। কিছুক্ষণ আগে তার সঙ্গে তোমার পরিচয় হয়েছে।
আমার সঙ্গে ফাজলামী করবি না। তোকে যা বলেছি কর। বৌমাকে ডেকে নিয়ে আয়।
মা তুমি কি সত্যি ভাবছ সে তোমার বৌমা? না-কি ইচ্ছা করে একটা নাটক করছ?