সংগীত জমে গেছে। ঠেকাই মাথা সুপার হিট হয়েছে। যমুনা আনন্দে স্বামীর গায়ে বার বার গড়িয়ে পড়ছে। আনন্দের তুঙ্গ মুহূর্তে সেলুন কারের বাতি নিভে গেল। বগী ড়ুবে গেল অন্ধকারে। সুরমা পা টিপে টিপে স্বামীর কাছে গিয়ে বললো, এই বাতি নিভে গেছে তো।
খায়ের সাহেব বললেন, দেখতে পাচ্ছি। আমি অন্ধ না।
সুরমা বললেন, ট্রেনের লোকজন কেউ তো আসছে না। মোমবাতি, চার্জার কিছু দেবে না?
না দিলে আমি কি করব? আমার হাতে কি ক্ষমতা আছে?
সুরমা বললেন, এরা কি জেনে গেছে?
জানতেও পারে।
সুরমা বললেন, আমি কিন্তু যমুনাকে কিছু বলি নি। ওদের ট্রিপটা নষ্ট করে লাভ কি?
এক সময় যেহেতু জানবে এখনি বলে দাও।
যমুনা এগিয়ে আসছে। তার হাতে মোবাইল। সে মোবাইল অন করে তার আলোয় সাবধানে এগুচ্ছে।
দুলাভাই?
বল শুনছি।
ট্রেনের প্রতিটি কামরায় লাইট আছে। শুধু আমাদেরটায় নেই। আমরা অন্ধকারে বসে আছি।
তাই না-কি?
হ্যাঁ। আপনি খোঁজ নিয়ে আসুন।
খোঁজ নিতে হবে না। তুমি বলছ এই যথেষ্ট। মনে হয় ইলেকট্রিকেল কানেকশনে কোনো ঝামেলা হয়েছে।
কানেকশনে ঝামেলা হলে রেলের লোকজন ছোটাছুটি করবে না? এরা এসে সমস্যা কি জানাবে না? দুলাভাই আপনি এক্ষুনি রেল মন্ত্রীকে টেলিফোন করুন। এদের সবাই যেন সাসপেন্ড হয়। মন্ত্রীর সেলুন কার যাচ্ছে। সেখানে ইলেকট্রিসিটি নেই। ওদের কোনো গরজও নেই। এরা ভেবেছে কি?
খায়ের সাহেব বললেন, ব্যবস্থা হবে। তোমরা গান বাজনা করতে থাক।
যমুনা বলল, অন্ধকারে কি গান বাজনা?
খায়ের সাহেব বললেন, অন্ধকারের গানে অন্য মজা আছে। তোমরা শুরু কর আমি দেখছি কি করা যায়।
গান আবার শুরু হয়েছে। খায়ের সাহেব সিগারেট ধরিয়েছেন। সুরমা আছেন স্বামীর পাশে। অন্য দিন সিগারেট ধরানো নিয়ে নানান কথাবার্তা বলতেন। আজ চুপচাপ। খায়ের সাহেব বললেন, কিছু বলবে?
সুরমা বললেন, আমার মন কু ডাক ডাকছে।
খায়ের সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, যা হবার তা তো হয়ে গেছে। আর কি কু ডাক?
সুরমা বললেন, সেলুন কারে বাতি নিভিয়ে দেয়াটা ইচ্ছাকৃত নয় তো? সব কামরায় বাতি জ্বলছে— সেলুন কারে বাতি নেই। এতক্ষণ হয়ে গেল একজন কেউ খোঁজ নিতে আসছে না।
খায়ের সাহেব কিছু বললেন না। সুরমা বললেন, কান ধরে উঠবোস করিয়েছি—এটার জন্যে কিছু না তো? সবাই মিলে ঠিক করেছে আমাদের শিক্ষা দেবে।
হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ শিক্ষা দিতে পছন্দ করে।
আমার ভয় লাগছে।
ভয় লাগাই স্বাভাবিক। এই দেশের অনেক মন্ত্রী, মন্ত্রিত্ব চলে যাবার পর পাবলিকের হাতে মার খেয়েছে।
মন্ত্রীত্ব যাবার পরে না, পার্টি ক্ষমতা থেকে যাবার পর কেউ কেউ হয়তোবা ইনসালটেড হয়েছে। তোমার পার্টিতো এখনো ক্ষমতায় আছে।
ক্ষমতায় থাকলেও আমি পার্টির গুড বুকে নেই। সবাই জানবে আমাকে লাথি দিলে এখন পার্টি কিছু বলবে না। বরং খুশি হবে। আমি লাথি খাচ্ছি এই দৃশ্য দেখলে অনেক নেতা-কর্মীরাই এখন খুশি হবে।
একজনকে কি পাঠাব রেলের যে কাউকে ডেকে নিয়ে আসবে। তুমি কথা বলবে। কথা বলে ঠিক করবে। কথা বলে মানুষকে ভুলাতে তো তুমি ওস্তাদ।
কাকে পাঠাবে?
বদরুলটা কে?
ঐ যে ভিডিও করে ছেলেটা।
পাঠাও। তবে আমার ধারণা ওকে মেরে তক্তা বানাবে।
সুরমা ভীত গলায় বললেন, ওকে মেরে তক্তা বানাবে কেন?
নানান কায়দায় কানে ধরে উঠবোসের ভিডিও করেছে ওকে ছাড়বে কেন? আমি হলেও তো মারতাম।
মারতে?
অবশ্যই।
তুমি আর কি করতে?
চেষ্টা করতাম এই অপমান যে মহিলা আমাকে করেছেন সবার সামনে তার গালে একটা থাপ্পড় বসাতে।
তাহলে কি বদরুলকে পাঠাব না?
পাঠাও-টেস্ট কেস হিসাবে পাঠাও। মার খেয়ে ফেরে কি-না দেখি।
সুরমা ভীত গলায় বললেন, তোমার সঙ্গে রিভলবার আছে না?
আছে। গুলি মাত্র ছয়টা। সিন্ধুতে বিন্দু।
তুমিতো আর গুলি করতে যাচ্ছনা। অস্ত্র হাতে থাকাটাই ভরসা।
খায়ের সাহেব বললেন, মাঝে মাঝে অস্ত্র থাকলে সমস্যা। নিজের অস্ত্রে নিজে বধ। টান দিয়ে রিভলবার নিয়ে সেই রিভলবারে গুলি।
সুরমা বললেন, আজে বাজে কথা বলছ কেন?
ভাল ভাল কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
খায়ের সাহেব মোবাইল টেলিফোন বের করে বোতাম টিপতে শুরু করলেন। সুরমা বললেন, কাকে টেলিফোন কর?
খায়ের সাহেব তিক্ত গলায় বললেন, কাকে তোমাকে বলতে হবে কেন? কাকে টেলিফোন করছি জানার তোমার প্রয়োজনটা কি?
জানলে অসুবিধা কি?
অসুবিধা আছে। সব ইনফরমেশন সবার জন্যে না।
আমি তোমার স্ত্রী।
খায়ের সাহেব বললেন, তুমি আমার সামনে থেকে যাও। তুমি ক্রমাগত আমাকে বিরক্ত করে যাচ্ছ। আমার চল্লিশ গজের ভিতর যেন তোমাকে না দেখি।
সুরমা হতভম্ব গলায় বললেন, যদি না যাই তাহলে কি করবে? মারবে?
খায়ের সাহেব বললেন, হ্যাঁ মারব। তোমার বোন আর বোনের স্বামী ঐ বান্দরটার সামনে কষে চড় মারব। অন্ধকার হলেও ওরা দেখতে পাবে।
সুরমা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বান্দর বলছ কাকে?
খায়ের সাহেব বিকট শব্দে ধমক দিলেন, Get lost you pig.
গান থেমে গেল। সবাই সুরমার দিকে তাকিয়ে আছে। যমুনা ভীত গলায় বলল, আপা কি হয়েছে?
সুরমা স্বাভাবিক গলায় বললেন, তোর দুলাভাই টেলিফোনে কাকে যেন ধমকাচ্ছে। ভিডিওর বদরুল কোথায়? আমার কাছে আসতে বল তো। সুরমা এগিয়ে গেলেন গানের দলের কাছে। তিনি এলোমেলো ভঙ্গিতে পা ফেলছেন। নিজেকে দ্রুত সামলাতে চেষ্টা করছেন। এখনো সামলাতে পারেন নি। তবে পারবেন।