আশহাব বলল, ভাল লাগার কথা না। সমস্যায় আপনি ইচ্ছে করে জড়িয়েছেন। মার সঙ্গে রুম শেয়ার করতে চেয়েছেন। মা কি তার দাদাজানের গল্প শুরু করেছেন?
হ্যাঁ করেছেন। উনার দাদাজানের গল্প সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে উনি মাঝে মাঝেই আমাকে বৌমা ডাকছেন। আপনি নিশ্চয়ই বিয়ে করেছিলেন। আপনার মায়ের একজন আদরের বৌমা ছিল। ছিল না?
জি না।
চিত্রা বলল, আগে বৌমা ডাকার অভ্যাস না থাকলে হঠাৎ করে কারো মুখ দিয়ে বৌমা বের হবে না।
আশহাব বলল, মার মুখ দিয়ে যে কোনো কিছু বের হবে। আমার মাকে আপনি চেনেন না। আমি চিনি। তিনি মানসিক ভাবে সামান্য অসুস্থ। মার হয়ে আপনার কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
আশহাব হাত জোড় করল।
চিত্রা বলল, ক্ষমা চাইতে হবে না।
আশহাব বলল, মায়ের অসুখটা প্যারানয়ার অন্য এক ফরম। প্যারানয়ারের রোগী মনে করে সবাই ষড়যন্ত্র করছে তাকে মেরে ফেলার জন্যে। আর মা মনে করেন অপরিচিত যেই তার সঙ্গে কথা বলছে সেই তার পরম আত্মীয়। আপনি এখন মার কাছে আমার চেয়ে একশ গুন বেশি প্রিয়।
চিকিৎসা করাচ্ছেন না?
করাচ্ছি।
আপনি যদি কিছু মনে না করেন—আমি রাতে আপনার মার সঙ্গে থাকব না।
আশহাব বলল, মার সমস্যা একটাই—কথা বলা। এ ছাড়া তার আর কোনো সমস্যা নেই।
বুঝতে পারছি, আমার ভাল লাগছে না। আপনি আপনার মার কাছে যান। তিনি অপেক্ষা করছেন। আপনারা মাতা-পুত্র খাওয়া দাওয়া করুন। এর মধ্যে আমাকে ডাকবেন না প্লিজ। আমি বুফে কারে খাব। অর্ডার দিয়ে রেখেছি। আপনারা মাতা-পুত্রের মিলন দৃশ্য দেখার আগ্রহ যেমন আমার নেই, বিচ্ছেদ দেখার আগ্রহও আমার নেই।
মা আপনাকে ছাড়া খাবে না।
ব্যবস্থা করুন যেন খায়। প্লিজ।
আশহাবকে করিডোরে দাঁড় করিয়ে চিত্রা এগিয়ে গেল। তার সত্যিই অসহ্য লাগছে। মোবাইল টেলিফোনে পিং পিং শব্দ হচ্ছে। নিশ্চয়ই লিলি।
এই চিত্রা! Hello!
Hello!
ফান হচ্ছে?
খুব ফান হচ্ছে। ফানে ড়ুবে আছি। নাক পর্যন্ত ফান।
বাবারে একটু ধৈর্য্য ধর। ময়মনসিংহ জংশনে গাড়ি থামবে তুই চলে যাবি স্যালুনে। রাণীর মত থাকবি।
একবারতো বলেছিস। বার বার একই কথা শুনতে ভাল লাগে না।
এতো রেগে আছিস কি জন্যে?
এক মহিলা আমাকে বৌমা ডাকছেন।
সে কি! কেন? তোর চেহারা কি মহিলার অতি আদরের বৌমার মতো যে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে। বাংলা সিনেমা?
চুপ কর তো। উনি মেন্টাল পেশেন্ট!
ওহ মাই গড।
রাতে ঐ মহিলার রুম আমার শেয়ার করার কথা।
ভুলেও ঐ কর্ম করবি না। শত হস্ত দূরেত থাকিথং। অর্থাৎ শত হস্ত দূরে থাকবি। নয়ত দেখা যাবে রাতে সে তোকে গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে।
উপদেশের জন্যে ধন্যবাদ।
ম্যাথমেটিশিয়ানের সঙ্গে কথা হয়েছে? এখনো না।
বুড়োরা তরুণী মেয়েদের সঙ্গে গল্প করতে খুব পছন্দ করে। মজার মজার গল্প বলে এরা তরুণীদের ভুলাতে চায়। তুই এককাজ কর। বুড়োর সঙ্গে গল্প করতে করতে চলে যা। তোর জায়গায় আমি থাকলে বুড়োর সঙ্গে এমনই গল্প জমাতাম যে বুড়ো ভাবতো—কিয়া মজা। খাব ব্যাঙ ভাজা। মেয়ে তো আমার প্রেমে ড়ুব সাঁতার দিচ্ছে।
লিলি আমার ধারণা তুই ভাবছিস যে খুব মজার কথা বলছিস। তোর কথাবার্তায় হিউমার ঝড়ে পড়ছে। ব্যাপারটা সে রকম না। তুই একই ভঙ্গিতে সবার সঙ্গে কথা বলিস। তোর কথাবার্তায় সামান্যতম ভেরিয়েসন নেই।
তোর কথায় ভয়ংকর দুঃখ পেলাম। দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছা করছে। এই দেখ মরে যাচ্ছি ওয়ান টু থ্রী। বলেই লিলি মোবাইল অফ করল। চিত্রা বলল, থ্যাংক গড।
মন্ত্রী সাহেবের সেলুন কারে আরো একজন বলল, থ্যাংক গড়। সেই একজন মন্ত্রী সাহেবের আদরের শ্যালিকা যমুনা। তার থ্যাংক গড বলার কারণ গান বাজনা শুরু হতে যাচ্ছে। ব্যান্ডের লম্বা চুলের ছেলে মাথা ঝাঁকিয়ে নিজেকে তৈরি করছে। সে অস্বাভাবিক চিকন গলায় বলল, শুরু করব Fusion Tagore দিয়ে।
ব্যান্ডের সুরে রবীন্দ্র সংগীত নামে নতুন এক জিনিস শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ইংরেজি এবং হিন্দি কথাবার্তাও আছে। মহা Fusion যাকে বলে। অল্প সময়ে তরুণ তরুণীদের হৃদয় এই সঙ্গীত হরণ করে নিয়েছে।
ব্যান্ডের পরিচালক যমুনার দিকে তাকিয়ে বলল, আপা এই গানটায় সবাইকে অংশ নিতে হবে।
যমুনা বলল, কি ভাবে অংশ নিব? আমি তো গান জানি না।
গান জানতে হবে না গানের মাঝখানে যতবার আমি হাততালি দেব ততবার আপনারা সবাই বলবেন—ঠেকাই মাথা। হাতের ইশারা না করা। পর্যন্ত ঠেকাই মাথা বলতেই থাকবেন। সুর নিয়ে চিন্তা করবেন না। যে ভাবে বলতে চান——বলবেন।
যমুনা আনন্দিত চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল, কি মজা। এই মজা না?
যমুনার স্বামী বলল, মজা বলেইতো মনে হচ্ছে।
যমুনা তার বোনের দিকে তাকিয়ে বলল, দুলাভাই জয়েন করবে না?
সুরমা বললেন, ওর শরীরটা খারাপ। ঐ যে এসিডিটি প্রবলেম।
যমুনা বলল, কয়েকবার ঠেকাই মাথা করলে এসিডিটি ঠিক হয়ে যেত।
সুরমা বললেন, তোরা শুরু কর আমি ওকে নিয়ে আসব।
সংগীত শুরু হয়েছে—
ও আমার দেশের মাটি
তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
ঠেকাই মাথা, ঠেকাই মাথা, ঠেকাই মাথা, ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা
ঠেকাই মাথা, ঠেকাই মাথা, ঠেকাই মাথা, ঠেকাই মাথা।
My head down on your feet
Mother, mother, mother, mother.
ঠেকাই মাথা, ঠেকাই মাথা, ঠেকাই মাথা, ঠেকাই মাথা।